বাকৃবি প্রতিনিধি: গত ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট সরকার পতনের পর সারা দেশের মতো বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) প্রশাসনেও ব্যাপক রদবদল হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামী পন্থী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোর দায়িত্ব থেকে সরানো হয়েছে এবং নতুন কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে একই ব্যক্তিকে একাধিক পদে দায়িত্ব দেওয়া এবং সখ্যতার ভিত্তিতে পদায়নের অভিযোগ উঠেছে। এমনকি একটি গ্রুপের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যক্রম বলেও অভিযোগ করেছেন একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারি। পূর্ব অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা না থাকায় কাজের অগ্রগতি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও খামার ব্যবস্থাপনা শাখার এডিশনাল রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ ড. মো. হেলাল উদ্দীনকে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। রেজিস্ট্রার অফিসের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তিনি দায়িত্ব পালনে এখনো অনভিজ্ঞ।
এছাড়া, ছাত্রকল্যাণ ও নির্দেশনা বিভাগের এডিশনাল ডিরেক্টর ড. মো. নাজমুল হককে তার নিজ দায়িত্বের পাশাপাশি রেজিস্ট্রার অফিসের সংস্থাপন-১ এর দায়িত্ব এবং বাসা বরাদ্দ কমিটির সদস্য সচিবের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। রেজিস্ট্রার হেলাল উদ্দীনের সাথে তার সখ্যতার বিষয়টি আলোচিত হচ্ছে।
প্রকৌশল শাখার ডেপুটি রেজিস্ট্রার হাবিব মো. সাইফুর রহমান (খালিদ), যিনি তার নিজ দায়িত্বের পাশাপাশি এস্টেট শাখা এবং পরিষদ শাখার ডেপুটি রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব পালন করছেন। শিক্ষা বিষয়ক শাখার এডিশনাল রেজিস্ট্রার মো. সারওয়ার জাহান, যিনি রেজিস্ট্রার অফিস এবং উপাচার্যের সচিবালয়ের দায়িত্ব পালন করছেন। কৃষি অর্থনীতি অনুষদের ড. এ কে এম মাহবুবুর রশীদ গোলাপ, যিনি সংস্থাপন-৫ এবং সংস্থাপন-৬ এর দায়িত্বে রয়েছেন। সংস্থাপন-৫ এর এডিশনাল রেজিস্ট্রার আরিফ জাহাঙ্গীর এবং সংস্থাপন-৬ এর এডিশনাল রেজিস্ট্রার সৈয়দ মোহাম্মদ মাসাদুল হাসানকে সরিয়ে গোলাপকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
এছাড়াও সাহেবুল ইসলাম রনিকে শামসুল হক হল থেকে সংস্থাপন-৪ এবং প্রকৌশল শাখার হামজা তালুকদারকে নিজ দায়িত্বের অতিরিক্ত গেস্ট হাউজের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
আশরাফুল হক হলের ডেপুটি রেজিস্ট্রার বোরহান উদ্দীনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিয়ান পদে। অডিট সেলের শাহজাহান কবির এবং মুহাম্মদ মঞ্জুরুল আলমকে সরিয়ে যথাক্রমে কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের ডিন অফিসের ডেপুটি রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ আতিকুর রহমান এবং ফজলুল হক হলের সিনিয়র হিসাবরক্ষণ অফিসার মোহাম্মদ আশরাফ উজ্জামানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
কৃষিতত্ত্ব খামার গবেষণাগারের উপপ্রধান খামার তত্ত্বাবধায়ক ড. মো. মঞ্জুর হোসেনকে সংস্থাপন শাখা-২ এ ডেপুটি রেজিস্ট্রার পদে বদলি করা হয়েছে। ফসল উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সিনিয়র ডেমনস্ট্রেটর মো. দিদারুল হককে হেলথ কেয়ার সেন্টারে বদলি করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা শাখার ডেপুটি ট্রেজারার মোহাম্মদ আশরাফুল হক রাহাতকে কোনো প্রকার বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। একইভাবে, কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ আজিজুল হককে সংস্থাপন-৩ এর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
নতুন দায়িত্ব ও বদলি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। অনেকে বলছেন, উপেক্ষিত কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, যা প্রশংসনীয়। তবে সখ্যতার ভিত্তিতে অযোগ্যদের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব দেওয়া এবং একাধিক পদে দায়িত্ব অর্পণ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক সিদ্ধান্তে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন। অনেকে বলছেন, সঠিক পরিকল্পনা ও দক্ষতায় এই রদবদল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যক্রমে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া একাধিক পদে দায়িত্ব অর্পণ প্রসঙ্গে বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমি সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলবো এবং দায়িত্বগুলো সুষ্ঠুভাবে ভাগ করে দেব। একজনের জন্য একাধিক দায়িত্ব পালন চাপ তৈরি করে। আমি দায়িত্ব ও চাপ কমিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবো, যাতে প্রত্যেকে নিজ নিজ কাজ ভালোভাবে সম্পাদনের সুযোগ পায়।
তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যক্রমকে আরও গতিশীল ও স্বচ্ছ করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। আমরা দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে দায়িত্ব ভাগ করে দিতে বদ্ধপরিকর।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available