বিশেষ প্রতিনিধি: মানবাধিকার সংস্থা ‘অধিকার’-এর সম্পাদক আদিলুর রহমান খান ও পরিচালক এ এস এম নাসির উদ্দিন এলানের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা হেফাজতের শাপলা চত্বরের সমাবেশে নিহতের সংখ্যা ৬১ দাবি করে তালিকা প্রকাশ করে প্রচার করেছিলেন। পরবর্তীতে অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে এই তালিকায় তারা যাদের নাম যুক্ত করেছিলেন তাদের কারো কারো অস্তিত্ব ছিলো না, কেউ কেউ দিব্যি বেঁচে ছিলেন।
পরবর্তীতে আইনি প্রক্রিয়া মেনে তাদের বিরুদ্ধে বিচার শুরু হলে প্রশ্ন ওঠে মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা সংস্থা বা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া পরিচালনা হলে বিশ্বজুড়ে মানবাধিকার নিয়ে কাজ করেন যারা তাদের মধ্যে শঙ্কা কাজ করবে কিনা? প্রশ্ন ওঠে- কেবল মানবাধিকার রক্ষায় কাজ করার জন্যই কি তাকে বিচারের মুখোমুখি করা হয়েছিল?
বিশেষত আদিলুর ও অধিকার ইস্যুতে আমেরিকার তৎপরতায় বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা থাকলেও পরবর্তীতে আন্তর্জাতিকভাবে সেটি সফল করা সম্ভব হয়নি। যদিও সম্প্রতি আদিলুর রহমান খান জামিন পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমেরিকা দূতাবাসে গিয়ে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে সাক্ষাত করে এটা স্পষ্ট করেছেন যে, আমেরিকা এই ইস্যুকে আলাদাভাবে গুরুত্ব দিয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, আদিলুরকে নিয়ে আমেরিকা যে মানবাধিকার নিশ্চিতের কথা বলছে সেটাও পক্ষান্তরে ‘মানবাধিকার লঙ্ঘনই’।
মানবাধিকার নিয়ে যারা কাজ করেন, তারা এসব বিষয়ে মুখ খুলতে চান না। সাবেক বিচারপতিরা বলছেন, আদিলুরকে যখন বিচারের মুখোমুখি করা হচ্ছে তখন কোন মানবাধিকারকর্মীকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়নি। তিনি যে কাজটি করেন বলে দাবি করে থাকেন, সেই কাজটি প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে বলেই তাকে বিচারের মুখোমুখি হতে হয়েছে। মানবাধিকার রক্ষায় যারা কাজ করেন তাদের আরও দায়িত্বশীল হওয়া দরকার।
উল্লেখ্য, তথ্যপ্রযুক্তি আইনের মামলায় দণ্ডিত মানবাধিকার সংস্থা ‘অধিকার’-এর সম্পাদক আদিলুর রহমান খান ও পরিচালক এ এস এম নাসির উদ্দিন এলান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তির পর যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসে গিয়েছেন। সোমবার তারা ঢাকায় অবস্থিত মার্কিন দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস ও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক ব্যুরোর ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি আফরিন আখতারের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।
নিম্ন আদালত থেকে রায়ের পরে আদিলুর আর এলান এর মামলা যখন উচ্চ আদালতে যায়, তখন উচ্চ আদালত মামলা এখতিয়ারে নেয় এবং পরবর্তী শুনানি পর্যন্ত দুজনকে জামিনে মুক্তি দেন। সে একই আদালত শাস্তি দিয়েছিল, আবার আপিল শুনানির জন্য জামিন দিয়েছে। এরপরপরই তারা আমেরিকার দূতাবাসে গিয়ে সাক্ষাৎ করেছেন।
মানবাধিকারকর্মীদের বিচারের আওতায় নেওয়া যাবে না বলে যে বক্তব্য দেওয়া হয় সে বিষয়ে মানবাধিকারকর্মীরাও একমত কিনা জানতে চাইলে নিজেদের বিষয় বলে কেউ কথা বলতে চাননি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দীর্ঘদিন ধরে কাজ করেন এমন একজন অধিকারকর্মী মনে করেন, যদি মানবাধিকারের কাজ করতে গিয়ে কেউ অপরাধ করেন তবে তাকে বিচারের আওতায় আনা জরুরি।
মানবাধিকার ইস্যুতে পশ্চিমাদের দৃষ্টি একেক দেশের প্রতি একেক রকম উল্লেখ করে সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, যে পশ্চিমা বিশ্ব মানুষকে মিথ্যা বলা, ভুল তথ্য ছড়ানো, ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করাকে বাক স্বাধীনতা বা মত প্রকাশের মৌলিক অধিকার বলে অধিকার ও আদিলুরদের পাশে দাঁড়ায়, সেই পশ্চিমা বিশ্ব প্যালেস্টাইনের নিহতদের স্মরণে প্রতিবাদ বা সংহতি প্রকাশকে বাধা দেয়। এমন এক চোখা গণতন্ত্র, বিচার ব্যাবস্থা পশ্চিমা বিশ্ব চায় যাতে নিজ নিজ লোকেদের স্বার্থ সংরক্ষণ হয়, নিজেদের লোকেরা সকল রকম বাধা মুক্ত থেকে পশ্চিমা বিশ্বের তাবেদারি করতে পারে।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ৫ মে ঢাকার মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতের সমাবেশে অভিযানের সময় নিহতের সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোর মামলায় গত ১৪ সেপ্টেম্বর তাদের দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক এ এম জুলফিকার হায়াত। এছাড়া ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা এবং অনাদায়ে আরও এক মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available