কুমিল্লা প্রতিনিধি: ছাত্রী ধর্ষণের অভিযোগে এক মাদ্রাসার অধ্যক্ষকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। দেবীদ্বার পৌর এলাকার ছোট আলমপুর গ্রামের ‘উম্মে ফয়েজ তালিমুল কুরআন মহিলা মাদ্রাসায় ঘটনাটি ঘটে।
১৭ ফেব্রুয়ারি শনিবার ভোরে পুলিশ ওই অধ্যক্ষকে আটক করে এবং শনিবার বেলা ২টায় কুমিল্লা কোর্ট হাজতে চালান করেছে। ওই মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা ও অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা মো. ফয়েজুর রহমান (৪০) এর বিরুদ্ধে তারই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (১৪) বছর বয়সী এক শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন প্রলোভনে ধর্ষণের অভিযোগ উঠে। এতে ওই ছাত্রীর বাবা বাদি হয়ে একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন।
গ্রেফতার অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা মো. ফয়েজুর রহমান দেবীদ্বার পৌর এলাকার ইকরা নগরীর দারোগাবাড়ির মৃত মাওলানা হাফেজ খলিলুর রহমানের পুত্র। তিনি ২০১৪ সনে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইসলামি আন্দোলন থেকে ‘পাখা মার্কা’ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। পারিবারিক জীবনে তিনি ৩ পুত্র সন্তান ও ১ কণ্যা সন্তানের জনক।
ওই ঘটনায় ধর্ষিতার বাবা বাদি হয়ে দেবীদ্বার থানায় শনিবার ১৭ ফেব্রুয়ারি অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা মো. ফয়েজুর রহমানকে এক মাত্র আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করলে পুলিশ মাদ্রাসা ভবন থেকে তাকে গ্রেফতার করে শনিবার বেলা ২টায় কুমিল্লা কোর্ট হাজতে চালান করে। অপরদিকে কুমেক হাসপাতালে ধর্ষিতাকে ডাক্তারি পরীক্ষা এবং আদালতে ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট ২২ ধরায় জবানবন্দী রেকর্ড করা হয়।
ভুক্তভোগী ও তার স্বজনরা জানান, পিতা- মাতার বিচ্ছেদ হয় প্রায় ১২ বছর পূর্বে। সেই থেকে ভুক্তভোগী তার দাদির কাছেই বড় হয়। পৌর এলাকার ছোট আলমপুর গ্রামে ধর্ষিতার চাচার ভাড়া বাসায় থেকে সে ওই মাদ্রাসায় লেখা পড়া করছিল। হাফেজ মাওলানা মো. ফয়েজুর রহমান দির্ঘদিন যাবৎ তাকে বিভিন্ন প্রলোভনে একাধিকবার ধর্ষণ করে। বিষয়টি তার দাদিসহ পরিবারের লোকদের নিকট প্রকাশ করলে, এ ঘটনার বিচারের দাবিতে থানায় মামলা দায়ের করে পরিবার।
উম্মে ফয়েজ তালিমুল কুরআন মহিলা মাদ্রাসা’, ‘উম্মে ফয়েজ তালিমুল কুরআন মাদ্রাসা’সহ একাধিক নামে তার আরও প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ছোট আলমপুর গ্রামের এক ব্যবসায়ী জানান, দেবীদ্বার পৌর এলাকাতেই শতাধিক মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। বিভিন্ন ভবনে বাসা ভাড়া নিয়ে এসব প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। কোথাও প্রাইভেট পড়ানোর নামে কোথাও বা মহিলা মাদ্রাসা, হাফেজিয়া মাদ্রাসা। এসব মাদ্রাসার অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতারাই শিক্ষক, অধ্যক্ষ বা মোহতামিন থাকেন। আর এসব প্রতিষ্ঠানগুলোতে ধর্মপ্রাণ মুসলিম পরিবারের লোকজন তাদের সন্তানদের নিরাপদ মনে করে ধর্মীয় শিক্ষার্জনে পাঠান।
প্রায়ই শিশু-কিশোর-কিশোরীরা বলৎকার ও যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে। অমানবিক নির্যাতনে কেউ কেউ মাদ্রাসা থেকে পালিয়ে যেয়ে বখে যাচ্ছে। এ সকল ভূইঁফোর ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে দ্বিনী শিক্ষার নামে অনৈতিক কর্মকাণ্ড রোধে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনেরও কোন নজরধারী নেই। প্রতিবাদ করলে কিংবা বিচার চাইলে একশ্রেণির প্রভাবশালীরা ধর্মের বিরুদ্ধে বা আলেমের বিরুদ্ধাচারণ করার দাবি তুলে উল্টো হেনস্থা হতে হয়।
অভিযুক্ত অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা মো. ফয়েজুর রহমান এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করে বলেন, এসব অভিযোগ আমাকে এবং আমার প্রতিষ্ঠানকে হেয় করতে কোন বিশেষ মহলের য়ড়যন্ত্রের বহিঃপ্রকাশ মাত্র।
এ ব্যপারে দেবীদ্বার থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাইনুল হোসেন জানান, ধর্ষিতার বাবার অভিযোগে মামলা হয়েছে, আসামি গ্রেফতার করে কোর্টে চালান করা হয়েছে। ভুক্তভোগীকে ডাক্তারি পরীক্ষা ও ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট ২২ ধারায় জবানবন্দী রেকর্ড করা হয়েছে। মামলা তদান্তাধীন রয়েছে বলেও জানান তিনি।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available