ডুমুরিয়া (খুলনা) প্রতিনিধি: খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার শাহপুর আন্দুলিয়া কাদেরিয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার মাওলানা খায়রুল আলম ও তৎকালীন সভাপতি শামছুল আলম হিরকের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ, নিয়োগ বাণিজ্য, অনিয়ম, দুর্নীতি, প্রতারণা ও সুপারের স্বাক্ষর জালের অভিযোগ উঠেছে।
গত ২২ সেপ্টেম্বর এলকাবাসীর পক্ষে আব্দুর রব আকুঞ্জি উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় স্বেচ্ছাচারিতা করে অফিস সহকারী, পরিচ্ছন্ন কর্মী ও আয়া পদে যোগ্য প্রার্থীদের বঞ্চিত করে। মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে অযোগ্যদের নিয়োগ প্রদান করা হয়। এ নিয়োগ বাণিজ্য করে সুপার ও তৎকালীন সভাপতি ২৭ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন।
এছাড়াও চাকরি দেওয়ার নামে বিপুল পরিমাণ টাকা নিয়ে প্রতারণার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব অনিয়ম নিয়ে প্রতিবাদ করায় চাকরি প্রত্যাশী ভুক্তভোগীদের হয়রানি করারও অভিযোগ উঠেছে সুপারের বিরুদ্ধে।
অভিভাবক সদস্য ও গ্রামবাসীর সামনে অফিস সহকারী পদে ১১ লাখ,পরিচ্ছন্ন কর্মী ৭ লাখ ও আয়া পদের জন্য ৬ লাখ টাকা নিয়েছেন বলে স্বীকার করেন। তিনটি পদে নিয়োগ সেই ২৪ লক্ষ টাকা কোথায় আছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে খরচ হয়েছে ৭ লাখ ৫০ হাজর টাকা, মাদ্রাসার জমি দখল নিয়ে মারামারিতে চিকিৎসা বাবদ ক্লিনিকে খরচ হয়েছে ৮০ হাজার টাকা, মাদ্রাসার জমি সংক্রান্তে মামলায় ১ লক্ষ ৫৩ হাজার ১৫০ টাকা, মাদ্রাসার ওয়াইফাই ও সিসি ক্যামেরা লাগানো ৭ হাজার ৩৪০ টাকা,মাদ্রাসার জমি নিয়ে শহিদুল সংক্রান্ত ৮০ হাজার টাকা,মসজিদের জানালা বাবদ ১ লক্ষ ১৫ হাজার ৬৫০ টাকা,মাদ্রাসার কমিটির নামে কেস বাবদ ৮৫ হাজার টাকা, মাদ্রাসার দুই বছরের অফিস খরচ ১ লক্ষ টাকা ও বিবিধ ১ লক্ষ ১৮ হাজার ১৩০ টাকা লিখিত আকারে খরচ ও জমা আছে ১ লক্ষ টাকা। মোট ২৪ লক্ষ টাকার জমা খরচের হিসাব দেখান মাদ্রাসার সুপার মাওলানা খায়রুল আলম। কিন্তু ক্যামেরার সামনে অস্বীকার করে সুপার বলেন, আমার সাথে কোন টাকা পয়সার লেনদেন হয়নি, যদি লেনদেন হয়ে থাকে সেইটা তৎকালীন সভাপতি শামছুল আলম হিরক জানে।
স্বাক্ষর জালের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাকে দিয়ে চাপের মুখে আওয়ামী লীগের লোকজন ভয়ভীতি দেখিয়ে স্বাক্ষর করিয়ে নেয় তৎকালীন সভাপতি।
এ বিষয়ে একাধিক অভিভাবক সদস্য বলেন, ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকার পতনের এক মাস পরে অর্থাৎ ১০ সেপ্টেম্বর কীভাবে আওয়ামী লীগের লোকজন জোর করে স্বাক্ষর করায়। সুপার নিজেকে বাঁচানোর জন্য মিথ্যার আশ্রয় নিচ্ছেন।
অভিযোগ অস্বীকার করে মাদ্রাসার তৎকালীন সভাপতি শামছুল আলম হিরক বলেন, নিয়ম মাফিক নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। যারা যোগ্য তারাই নিয়োগ পেয়েছে। কোনো ধরনের প্রতারণা ও দুর্নীতি করা হয়নি। পাল্টা তিনি সুপারের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বলেন, আমি সভাপতি থাকাকালীন নিয়োগ বিষয়ে আর্থিক লেনদেন আমার সঙ্গে হয়নি। যদি নিয়োগ ব্যাণিজ্য করে থাকে সেটা সুপারই করেছে।
মাদ্রাসা ম্যানেজিং কমিটির একাধিক অভিভাবক সদস্য ও স্থানীয়রা সভাপতি ও সুপারের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগটি স্পষ্ট হওয়ায়, সুপারের পদত্যাগের দাবি করেন।
এ বিষয়ে ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মুহাম্মদ আল-আমিন বলেন, লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। চলতি মাসের ৩ অক্টোবর তিন সদস্যদের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এখনও তদন্ত চলমান। অভিযোগ প্রমাণিত হলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available