• ঢাকা
  • |
  • বৃহঃস্পতিবার ৭ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১ রাত ০৯:৪০:১১ (21-Nov-2024)
  • - ৩৩° সে:
এশিয়ান রেডিও
  • ঢাকা
  • |
  • বৃহঃস্পতিবার ৭ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১ রাত ০৯:৪০:১১ (21-Nov-2024)
  • - ৩৩° সে:

সারাবাংলা

রায়পুরে কৃষিজমির উর্বর মাটি যাচ্ছে ইটভাটায়

২০ জানুয়ারী ২০২৪ সকাল ০৯:১৩:২৭

রায়পুরে কৃষিজমির উর্বর মাটি যাচ্ছে ইটভাটায়

রায়পুর (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি: লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে কৃষিজমির উর্বর মাটি (টপ সয়েল) কেটে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ইটভাটার মালিকদের বিরুদ্ধে। ইট প্রস্তুতের জন্য বিভিন্ন গ্রামের কৃষিজমি থেকে নেওয়া এসব মাটির স্তূপ করা ইটভাটাগুলোতে।

উপজেলার চরমোহমা ইউনিয়নের চরমোহনা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ইটভাটার পশ্চিম দিকে মো. ইউসুফ নামে এক ব্যক্তির দুই একর জমির মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে। ৯০ হাজার টাকায় জমির মাটি ইটভাটাকে দিয়ে দিয়েছেন তিনি।

রাখালিয়া মাতবরহাট এলাকার অসহায় কৃষক জাহাঙ্গীর (৪৫) বলেন, আমার এক চোখ অন্ধ। গরিব কৃষক মানুষ আমি। স্ত্রীসহ আমার দুই মেয়ে নিয়ে ছোট সংসার। অনেক দিন যাবৎ কষ্ট করে এই জমিটা তৈরি করেছি। ধান চাষ করেছি। সামনে ধান চাষ করতে জমিটা তৈরি করে ছিলাম। কয়েক বছর জমিতে ভালো ধান হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, জমির মালিক ইউসুফ ভাই আমাকে চাষ করতে না দিয়ে ৯০ হাজার টাকায় তার জমির মাটিগুলো ইটভাটার মালিকের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। আমাকে ৫০ হাজার টাকা দিতে বললে তাকে দিতাম। আগামী ১০ বছর এই জমিতে কোনও ফসল হবে না। আমার বুকটা ফেটে যাচ্ছে, চিৎকার দিয়ে কাঁদতে পারছি না। সরকার যদি ব্যবস্থা নেয় আমাদের কৃষকদের খুব উপকার হবে। আরও কয়কজন কৃষক একই কথা বলে দুঃখ করেছেন।

এদিকে জমির মালিক সর্দারবাড়ি এলাকার মো. ইউসুফের সঙ্গে কথা বলতে সোনাপুর গ্রামেই তার বাড়িতে গেলে  তাকে পাওয়া যায়নি।

তবে, তার মা রাহেলা বেগম বলেছেন, ভাটার কাছেই তাদের জমি। আশপাশের সব জমি ভাটা নিয়ে মাটি কেটে নিয়েছে। এ কারণে তাদের জমি উঁচু হয়ে আছে। টাকা ছাড়াও বিভিন্ন সমস্যার কারণে বাধ্য হয়ে ইটভাটায় জমি দিতে হয়েছে।

এ বিষয়ে গাজী ব্রিকস ইটভাটার ম্যানেজার মালেক খান বলেন, কৃষক জমির মাটি বিক্রি করেছে, তাই কিনেছি। জোর করে তো আর মাটি কাটছি না। আমরা ছাড়াও আরও ৪টি ইটভাটা রয়েছে। তারাও কৃষক থেকে মাটি কিনছেন।

জানা গেছে, উপজেলায় ৫টি ইটভাটা রয়েছে। এসব ইটভাটার কারণে আশপাশের মাটিতে ঠিকমতো চাষাবাদ হয় না। তা ছাড়া ইটভাটার আশপাশের জমিগুলো নেওয়ার জন্য ইটভাটার মালিকেরা ফন্দি পেতে থাকে। মোটা টাকার প্রলোভন দেখিয়ে জমিগুলো বাৎসরিক চুক্তিতে নিয়ে নেয় ভাটার মালিকরা। জমি নেওয়ার পর থেকে মাটি কেটে নেয়।

ইটভাটা স্থাপনে অনুমোদিত জমি ৩ একর হলে ও ভাটার মালিকরা দখল করছেন কমপক্ষে ৯-১০ একর। সে হিসেবে ইটভাটার নিচে প্রায় ১ হাজার একর জমিও চলে গেছে। প্রায় ১০০ কোটি ইট তৈরিতে বছরে ১১ কোটি ঘনফুট (সিএফটি) মাটি ব্যবহার হয়। যার পুরোটাই ফসলি মাঠের মাটি।

এসব আনা হয় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের নির্মিত গ্রামীণ সড়ক দিয়ে। ফলে অস্বাভাবিকভাবে কমছে কৃষিজমি। মাটি পরিবহনে লন্ডভন্ড হয়ে যাচ্ছে গ্রামীণ সড়ক এবং তৈরি হয়েছে পরিবেশগত ব্যাপক বিশৃঙ্খলা। গ্রামীণ সড়কগুলো বছরও টিকছে না। ইটভাটার কারণে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের কৃষিভিত্তিক ও নদী ভাঙন কবলিত ছোট জেলা লক্ষ্মীপুরের চিত্র এখন এমনটাই।

এ জন্য পরিবেশ অধিদফতরের নোয়াখালীর আঞ্চলিক অফিসসহ কিছু প্রতিষ্ঠানকে দায়ী করছেন স্থানীয়রা। সম্প্রতি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসী, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি এবং জেলার বিভিন্ন ইটভাটার মালিক ও শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।

তথ্যে জানা যায়, পাঁচ উপজেলার লক্ষ্মীপুরে প্রতিবছর ইটের চাহিদা কত, এর জন্য কত ভাটার প্রয়োজন, এমন কোনও পরিসংখ্যান কারও কাছে নেই। তবু এ জেলায় প্রতিবছরই ইটভাটার সংখ্যা বেড়ে বর্তমানে ১৩০টি।

ইটভাটার পাশে জমি থাকলে ভেঙে যায়, ফসল হয় না। ফলে ভাটার মালিকদের কাছে বাধ্য হয়ে জমির মাটি বিক্রি করেন কৃষক। মালিকরাও জমি বিক্রি করতে বাধ্য করেন। ইটভাটার মালিকেরা প্রশাসনকে হাতে নিয়ে আরও ইটের ভাটা বৃদ্ধি করছেন। এমনটাই অভিযোগও স্থানীয়দের। আর ভাটার মাটি পরিবহনে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে গ্রামের সড়কগুলো।

ইট পোড়ানো নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১৯-এর তথ্য থেকে জানা যায়, আবাদি জমিতে কোনও ইটভাটা তৈরি করা যাবে না। পরিবহনে এলজিইডির রাস্তা ব্যবহার করা যাবে না। কাঠ পোড়ানো যাবে না। কিন্তু এর কিছুই মানছেন না ভাটার মালিকরা। ওই আইনের উদ্দেশ্য ছিল, ২০২০ সালের মধ্যে পোড়া ইট শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা। অথচ রায়পুরসহ লক্ষ্মীপুরে প্রতিবছরই ইট পোড়ানোর জন্য ভাটা বাড়ছে।

জেলা প্রশাসক কার্যালয় এবং জেলা কৃষি বিভাগের সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালে লক্ষ্মীপুরে ইটভাটা ছিল ৭৫টি। কিন্তু ২০২১ সালের প্রথম দিকেই সেই সংখ্যা দাঁড়ায় ১৩০-এ। অর্থাৎ বছরে বেড়েছে ১১টি। সদর উপজেলায় ৬৮, রামগঞ্জে ২১, রামগতিতে ২৩, কমলনগরে ১৩ ও রায়পুরে ৫টি ভাটা আছে।

ইটভাটা স্থাপনে অনুমোদিত জমি ৩ একর হলেও ভাটার মালিকরা দখল করছেন কমপক্ষে ৯-১০ একর। সে হিসেবে ইটভাটার নিচে প্রায় ১ হাজার একর জমিও চলে গেছে।

রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজমা বিনতে আমিন বলেন, কৃষিজমির টপ সয়েল কেটে নেওয়ার বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Recent comments

Latest Comments section by users

No comment available

সর্বশেষ সংবাদ






ডেঙ্গুতে ২৪ ঘণ্টায় ৯ জনের মৃত্যু
২১ নভেম্বর ২০২৪ রাত ০৮:০৫:৩৩