মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি: মানিকগঞ্জে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে তিন ফসলি জমি থেকে মাটি কাটার মহোৎসব চলছে। অবৈধ মুনাফার জন্য এসব কাজে সহযোগিতা করছেন জনপ্রতিনিধি ও সরকারদলীয় রাজনৈতিক নেতারা। ইটভাটার মালিকরা প্রভাবশালী হওয়ায় প্রশাসন মাটি কাটার বিষয় জানার পর নাম মাত্র অভিযান পরিচালনা করে কিছু জরিমানা করলেও বন্ধ হচ্ছে না মাটি কাটা। রহস্যজনক কারণে পালন করা হচ্ছে নীরবতা, যেন দেখার কেউ নেই।
৬ মার্চ বুধবার বেলা ১১টার দিকে মাটি কাটা বন্ধে ও মাটি দস্যুদের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করেছে সদর উপজেলার আটিগ্রাম ইউনিয়নের মধ্য বরুন্ডী এলাকার কৃষকেরা।
মানববন্ধনে কৃষকরা বলেন, মানিকগঞ্জের সাত উপজেলার প্রায় সব ইউনিয়নের অর্ধ শতাধিক স্পটে এক্সকাভেটর ও শ্রমিক দিয়ে আবাদি জমির উপরিভাগের মাটি কেটে শতাধিক ট্রাক্টর দিয়ে নেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন ইটভাটায়। এভাবে জমির মাটি কাটার ফলে আবাদি জমির উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে। পাশাপাশি নষ্ট হচ্ছে মাটির জৈব গুণাগুণ। পুকুর, জলাশয়, ডোবায় পরিণত হয়ে নিচু হয়ে যাচ্ছে কৃষিজমি। ভারসাম্য হারাচ্ছে পরিবেশও।
সচেতন মহলের বলছে, এভাবে জমির মাটি কাটা অব্যাহত থাকলে এক সময় কৃষিতে বিপর্যয় দেখা দেবে। কমে যাবে আবাদি জমির পরিমাণ। জমি থেকে কেটে নেওয়া মাটি দিয়ে ভরাট করা হচ্ছে কোটি কোটি টাকার জায়গা, সরবরাহ করা হচ্ছে বিভিন্ন ইটভাটা।
পরিবেশ আইন অনুযায়ী, কৃষিজমির মাটি কাটা দণ্ডনীয় অপরাধ। জানা যায়, পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১২-এর ৬ ধারায়) অনুযায়ী, প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট টিলা ও পাহাড় কাটা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
অন্যদিকে ১৯৮৯ সালের ইট পোড়ানো নিয়ন্ত্রণ আইন (সংশোধিত ২০০১) অনুযায়ী, কৃষিজমির টপ সয়েল বা উপরিভাগের মাটি কেটে শ্রেণি পরিবর্তন করাও সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ রয়েছে।
দুই আইনে শাস্তির বিধান একই রকম। এসব কাজে জড়িত ব্যক্তিদের দুই লাখ টাকা জরিমানা ও দুই বছরের কারাদণ্ড দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে। একই অপরাধ দ্বিতীয়বার করলে দায়ী ব্যক্তির ১০ লাখ টাকা জরিমানা ও ১০ বছরের কারাদণ্ড হবে। এ ক্ষেত্রে এ কাজের সঙ্গে জড়িত জমি ও ইটভাটার মালিক উভয়ের জন্যই সমান শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।
মানিকগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আবু এনায়েত উল্লাহ জানান, জেলায় ১ লাখ ৩ হাজার ৩৮৩ হেক্টর ফসলি জমি রয়েছে। মাটি কাটার কারণে তা দিন দিন কমে আসছে। তিন ফসলি জমি থেকে মাটি কাটা বন্ধের বিষয়ে নিয়মিত জেলা প্রশাসনের সাথে আলোচনা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
এ ব্যাপারে সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা লিটন ঢালী বলেন, কৃষি জমি রক্ষার্থে তিন ফসলী জমির মাটি কাটা বন্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available