কুষ্টিয়া প্রতিনিধি: দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে দেশে মাঝারি থেকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ চলছে। সেই সাথে কুষ্টিয়াতেও চলছে তীব্র তাপ প্রবাহ। এমন পরিস্থিতিতেই ২৮ এপ্রিল রোববার জেলার বিভিন্ন স্থানে খুলেছে স্কুলকলেজ। আর তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যে এসব স্কুল খুলে দেওয়ায় অসন্তোষ ও আপত্তি প্রকাশ করেছেন অভিভাবকেরা।
শিক্ষার্থীদের পিতা-মাতারা বলছেন, শিশুদের কথা বিবেচনা করে সরকার আরও অন্তত এক সপ্তাহ পরে স্কুল খুলতে পারত। এ পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থী অসুস্থ হলে এর দায় কে নেবে?
সরেজমিনে গেলে জেলার এনএস রোডে অবস্থিত সান আপ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, কুষ্টিয়া ঝিনেদাহ মহাসড়কের পাশে শাহীন ক্যাডেট স্কুল, জিলা স্কুল এবং ডিসি কোর্টের মধ্যে অবস্থিত কালেক্টর স্কুলের সামনে কয়েকজন অভিভাবক তাদের এমন অসন্তুষ্টির কথা জানান।
এদিকে পবিত্র রমজান, ঈদুল ফিতর ও গ্রীষ্মকালীন অবকাশ শেষে ২১ এপ্রিল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার কথা ছিল। তবে দেশজুড়ে তীব্র তাপপ্রবাহে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় দীর্ঘ ছুটি শেষেও খোলা হয়নি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সব মিলিয়ে দীর্ঘ ছুটির পর জেলায় রোববার সকাল ৮টা থেকে স্কুল-কলেজে ক্লাস শুরু হয়েছে। রোদ ওঠার আগেই অভিভাবকরা সন্তানকে পৌঁছে দিয়েছেন স্কুলে। গরমে সুস্থ থাকতে দিয়েছেন নানা উপদেশ। ক্লাসের বাইরে বের না হতে, মাঠে খেলাধুলা না করতে এমনকি বন্ধুদের সঙ্গে দৌড়াদৌড়ি না করার জন্য সতর্ক করেছেন তারা।
এসব প্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের বিভিন্ন কক্ষের সিলিং ফ্যান চললেও শ্রেণিকক্ষে অতিরিক্ত গরমের কারণে শিক্ষার্থীদের স্কুল ড্রেস ঘেমে ভিজে গেছে। বেশ কিছু শিক্ষার্থীদের অতিরিক্ত গরমের কারণে হাঁসফাঁস করতেও দেখা গেছে। কারও কারও চোখে মুখে ছিল চরম ক্লান্তিও অবচ্ছাদের ছাপ।
এ সময় বেশিরভাগ অভিভাবকদের দাবি, স্কুল খুলতে একটু অপেক্ষা করলে কী আর এমন হতো? সরকারের উচিত তীব্র তাপপ্রবাহ বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত যেন স্কুল বন্ধ রাখা। আমাদের বাচ্চারা তো করোনার সময় অনলাইনে ক্লাস করেছে। এখন না হয় ১০-১৫ দিন অনলাইনে ক্লাস করত। এতে আহামরি কোনো ক্ষতি হয়ে যেত না।
অভিভাবকরা আরও বলছেন, দেশের বেশির ভাগ স্কুলেই খাবার বিশুদ্ধ পানি নেই। আবার অনেক শিক্ষার্থী পানি নিয়ে স্কুলে যায় না। তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে এসব শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে। শিক্ষার্থী অসুস্থ হলে এর দায় কে নেবে।
কুষ্টিয়ার কুমারখালী আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় রোববার ৪০ দশমিক ৮ ডিগ্রি, শনিবার ৪০ দশমিক ৮ ডিগ্রি, শুক্রবার ৪১ দশমিক ৮ ডিগ্রি, বৃহস্পতিবার ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি, বুধবার ৪০ দশমিক ৮ ডিগ্রি, মঙ্গলবার ৩৮ দশমিক ৭ ডিগ্রি, সোমবার ৪০ ডিগ্রি, রোববার ৪০ দশমিক ৮ ডিগ্রি ও শনিবার ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।
বাংলাদেশের আবহাওয়া অফিসের হিসাব মতে, ৩৬ ডিগ্রি তাপমাত্রায় মৃদু তাপ প্রবাহ, ৩৮ ডিগ্রিতে মাঝারি, ৪০ ডিগ্রিতে তীব্র তাপ প্রবাহ আর ৪২ ডিগ্রিতে উঠলে বলা হয় অতি তীব্র তাপ প্রবাহ।
এদিকে সকালে আবহাওয়া অধিদপ্তরের দেওয়া বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে মাঝারি থেকে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে আরও ৭২ ঘণ্টা বা তিনদিন এই তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকবে। জলীয়বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বৃদ্ধি পেতে পারে।
কুষ্টিয়ার কুমারখালী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মামুন আর রশিদ জানান, ২৮ এপ্রিল বেলা ৩টায় ৪০ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available