ইবি প্রতিনিধি: সরকারি চাকরি, স্বায়ত্তশাসিত বা আধা-সায়ত্ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন করপোরেশনে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা পদ্ধতি পুনর্বহাল করে দেওয়ার উচ্চ আদালতের রায়ের প্রতিবাদ জানিয়ে কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করে ৪র্থ দিনের মতো আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থীরা।
৭ জুলাই রবিবার সকাল ১১টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব ম্যুরালে কোটা বিরোধী আন্দোলনে যুক্ত হয় কয়েকশতাধিক শিক্ষার্থী। বেলা সাড়ে ১১টায় শিক্ষার্থীরা কুষ্টিয়া খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করে দেশব্যাপী বাংলা ব্লকেডের সাথে একাত্মতা পোষণ করেন।
এ সময় কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহমুখী সড়কটি গাছের গুড়ি ও টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে ব্লক করে রাখেন আন্দোলনকারীরা। জরূরি রোগী সেবা দেয়া যানবাহগুলোকে ছেড়ে দেয়া হলেও বন্ধ রাখা হয় অন্যান্য যানবাহন। দুই ঘণ্টার অবরোধের পর দুপুর দেড়টার দিকে শিক্ষার্থী আজকের মতো কর্মসূচি সমাপ্ত ঘোষণা করেন।
চতুর্থদিনের আন্দোলনে সরব উপস্থিতি ছিলো নারী শিক্ষার্থীদের। তিনদিনের তুলনায় নারীদের উপস্থিতি বেশি লক্ষ্য করা যায়। সেই সাথে কোটার বিরুদ্ধে তাদের শক্ত অবস্থান অন্যান্য শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে অনুপ্রাণিত করে। নারী শিক্ষার্থীরা হলে ও মেসে বসে থাকা অন্যান্য শিক্ষার্থীদেরও আন্দোলন আসার আহবান জানান।
এদিনও অবস্থান কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীরা কোটাবিরোধী নানা ধরনের স্লোগান দিতে থাকে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলো আঠারোর হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার। জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে। লেগেছে রে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে। দাবি এক দফা এক, কোটা নট কামব্যাক। আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম। মুক্তিযুদ্ধের বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই- ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।
উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের নারী শিক্ষার্থী লুনা বলেন, আমরা আন্দোলনকারীরা এখন ক্ষুধার্ত। আমাদের এই ক্ষুধা তখনই মিটবে যখন মেধাবীদেরকে তাদের মেধার ভিত্তিতে মূল্যায়ন করা হবে। এখন নারী কোটারও প্রয়োজন নেই। কারণ নারীরা আর সুবিধাবঞ্চিত নয়।
এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী আইরিন সুলতানা বলেন, আমরা নারী হয়েও নারী কোটা চাচ্ছি না। তাহলে সেই ৫৩ বছর আগের মুক্তিযুদ্ধ করা মুক্তিযোদ্ধাদের নাতী-নাতনীরা কেনো কোটার সুবিধা ভোগ করবে? আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের অবমাননা করছি না। তাদের অবদান দেশের মানুষ আজীবন মনে রাখবে। কিন্তু সরকারি চাকরিতে এই ৩০% কোটা বৈষম্য সৃষ্টি করে। আমরা এর দ্রুত সমাধান চাই।
আইন বিভাগের শিক্ষার্থী শাওয়ানা শামিম বলেন, আমি নারী হয়ে অনগ্রসর নই তাহলে ওইসব গোষ্ঠী কিভাবে বলে তারা এখনো অনগ্রসর। অনগ্রসর বলতে বুঝায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা মূল স্রোতের বাইরে থাকে। আমরা তাদেরকে স্পেশাল সুবিধা দিয়ে থাকি।
ছাত্র মৈত্রী ইবি শাখার সাধারণ সম্পাদক ইয়াসিরুল সৌরভ বলেন, আমাদের একটাই দাবি কোটা সংস্কার, আমরা কিন্তু বাতিলের কথা বলিনি। যৌক্তিক কোটা সংস্কারের মাধ্যমে মেধাবীদেরকে প্রাধান্য দেওয়া হলে কিন্তু বিভিন্ন সরকারি অফিসে আদালত থেকে শুরু করে প্রশাসন পর্যায়ে লালফিতার দৌরাত্ম্য হ্রাস পাবে।
এর আগে, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের একাধিক শিক্ষক কোটাবিরোধী আন্দোলনের সাথে একাত্মতা পোষণ করেন। এছাড়াও কোটাকে সহনশীল পর্যায়ে সংস্কারের দাবি জানান।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available