সজীব আহমেদ, আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি: বরগুনার আমতলীতে যত্রতত্র অবাধে বিক্রি হচ্ছে এ্যান্টিবায়োটিক, যৌন উত্তেজক ও রুচি বর্ধক ঔষধ। কোন সরকারি নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে যত্রতত্র এসব ঔষধ বিক্রি করছে কিছু অসাধু ক্যানভাসার (ভ্রামামান ঔষধ বিক্রেতা)। উপজেলার বিভিন্ন হাট ও বাজারে এদেরকে দেখা যাচ্ছে ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই ঔষধ বিক্রি করতে।
আমতলী পৌর এলাকায় বুধবার সাপ্তাহিক বাজারের দিন। এদিন বাজারকে কেন্দ্র করে উপজেলা পরিষদ গেট, পৌরসভা রোড ও বাজারের বিভিন্ন পয়েন্টে মাইকিং করে ক্রেতাদের আকর্ষণ করে ঔষধ বিক্রি করছে এসব নামসর্বস্ব কম্পানির এক শ্রেনীর অসাধু বিক্রেতারা। এদের প্রধান টার্গেট গ্রামের খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ।
বাংলাদেশ ঔষধ প্রশাসনের নির্দিশনা অনুযায়ী ড্রাগ লাইসেন্স এবং সাইনবোর্ড ছাড়া ঔষধ বিক্রি করা আইনত দণ্ডনীয়। যে কোন ঔষধ নির্দিষ্ট তাপমাত্রা সংরক্ষনের নিয়ম থাকলেও এসব অসাধু বিক্রেতার মানছেন না সে নিয়ম। ফলে তাদের কাছ থেকে এসব ভেজাল ও মানহীন ঔষধ কিনে স্বাস্থ্য ঝুকিতে পড়ছেন ক্রেতারা।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলা পরিষদ গেট থেকে শুরু করে পৌরসভা রোড পর্যন্ত ঔষধের বাহারি পসরা সাজিয়ে বসেছেন এসব অসাধু বিক্রেতারা। এরা বাজারের বিভিন্ন পয়েন্টে মজমা (জমায়েত) বসিয়ে চিকিৎসা দিচ্ছেন সাধারণ মানুষকে। প্রকাশ্যে মাইক বাজিয়ে বিক্রি করছেন- অ্যান্টিবায়োটিক, যৌন উত্তেজক, ভিটামিন, ক্যালসিয়ম এবং বেনামী সব ঔষধ।
চলমান এ অসংগতির ব্যাপারে কথা হয় আমতলী উপজেলার প্রবীন সাংবাদিক মো. আবু সাঈদ খোকনের সাথে। তিনি বলেন, আমতলীর বিভিন্ন হাট-বাজার এবং পথে-ঘাটে লোকজমায়েত করে যেভাবে ঔষধ বিক্রি করা হয় এর আইনগত কোন ভিত্তি নেই। এ ঔষধগুলো বাংলাদেশ ঔষধ প্রশাসন অনুমোদিত নয়। ফলে এগুলো সেবনে রয়েছে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুকি। কেবলমাত্র আইন করেই এগুলো বন্ধ করা যাবে না। এ জন্য প্রয়োজন জনসচেতনতা এবং দায়ীত্বপ্রাপ্ত কতৃপক্ষের ইতিবাচক মনোভাব। এখনই যদি কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হয় তাহলে আগামীতে আমাদের স্বাস্থ্য ঝুকি আশঙ্কাজনকহারে বাড়বে।
আলাপ হয় এ ঔষধের একজন নিয়মিত ক্রেতার সাথে। আলাপচারিতায় নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি জানান, ফার্মেসিতে যে ঔষধের দাম ২০ টাকা সেটা এখানে ১০ টাকায় পাওয়া যায়। আমরা গ্রামের মানুষ, ঔষধ সম্পর্কে অতকিছু বুঝি না। কম দামে পাওয়া যায় বলে আমরা এখান থেকেই ঔষধ কিনি। সব ঔষধই তো দেখতে এক রকম, আমরা যেখানে কম দামে পাবো সেখান থেকেই তো কিনবো!
একজন ঔষধ বিক্রেতা জানান, রাস্তার পাশে ঔষধ বিক্রি করার নিয়ম নেই এটা আমি জানি। তবে বিভিন্ন কোম্পানির প্রচারে আমরা পেটের দায়ে এসব বিক্রি করি। ঔষধ খেয়ে অনেক মানুষের উপকার হয় দেখেই তো মানুষ ঔষধ কিনছে। মানুষ না কিনলে কি আমরা বিক্রি করতে পারতাম?
এ বিষয়ে এশিয়ান টিভি অনলাইনের সাথে কথা হয় আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. মোনায়েম সাদের সাথে। তিনি বলেন, আমাদের দেশে এ ধরনের ঔষধের কোন অনুমোদন নেই। এগুলো অবৈধভাবে বিক্রি করা হচ্ছে। এ ঔষধ সেবনে হার্ট, লিভার, কিডনী বিকলসহ মৃত্যু ঝুকি রয়েছে। ক্ষতিকর বিধায় ঔষধ আইন ও ভোক্তা অধিকার আইনে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত। যদি এগুলো বন্ধ করা না হয় তাহলে জনস্বাস্থে মারাত্মক ঝুকির সম্ভাবনা রয়েছে।
আমতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আশরাফুল আলম বলেন, ভেজাল ঔষধের বিরুদ্ধে আমাদের ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান অব্যহত আছে। অসাধু এসব ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আগামিতে আরও কঠোর হবো আমরা। আগামীতে মোবাইল কোর্ট ও মনিটরিং আরও বাড়ানো হবে। আমরা এ ব্যপারে সবার সহযোগীতা কামনা করছি।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available