রাবি প্রতিনিধি: পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়ার দাবিতে অনশন করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) দর্শন বিভাগের ৩৫ জন শিক্ষার্থী। ক্লাস উপস্থিতি কম থাকায় তাদের ডিসকলেজিয়েট (পরীক্ষা দেওয়ার অযোগ্য) ঘোষণা করা হয়। এর প্রতিবাদে ২৯ মে বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিভাগের গেটে তালা লাগিয়ে অনশন শুরু করেন তারা। এ সময় তাদের সাথে একাত্মতা পোষণ করেন কিছু কলেজিয়েট (পরীক্ষা দেওয়ার যোগ্য) শিক্ষার্থী। পরে বিভাগের পক্ষ থেকে বিষয়টি বিবেচনার আশ্বাস দিলে দুপুর ২টার পরে অবস্থান ত্যাগ করেন অনশনরত শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিগত সময়ে ডিসকলেজিয়েট হয়েও বিশেষ বিবেচনায় অনেকে পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ পেয়েছে। বিভিন্ন কারণে তারা ক্লাসে ৬০ শতাংশ উপস্থিত থাকতে পারেননি। সেজন্য তারা ভুল স্বীকার করেছেন। তবুও তাদের পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। তাদের ক্ষেত্রেও বিশেষ বিবেচনা করা হোক অথবা, পরীক্ষার সময় পিছিয়ে অতিরিক্ত ক্লাস নিয়ে কলেজিয়েট হওয়ার সুযোগ দেওয়া হোক। কোনো শিক্ষকের বিরুদ্ধে তাদের অভিযোগ নেই। তবে তারা একটা সুযোগ চান।
অনশনকালে 'আমরণ অনশন চলবেই', 'যে কোনো উপায়ে পরীক্ষা দিতে চাই', 'মরব নাহয়, পরীক্ষা দিব', 'তিন বছরের ক্ষতির দায় কে নেবে?', 'পরীক্ষার সুযোগ চাই', 'করোনায় এক বছর হারিয়েছি', 'জীবন নিয়ে সংকটে আছি', 'বিগত বছরগুলোতে অর্ডিনেন্স কোথায় ছিল?', 'ইয়ার সিস্টেমে আমরাই শেষ বর্ষ' ও 'পরীক্ষা দিতে না পারলে ট্যুরে নেওয়া হলো কেন?' এ ধরনের শ্লোগান লেখা সংবলিত প্ল্যাকার্ড হাতে প্রতিবাদ জানান শিক্ষার্থীরা।
অনশনকারীদের একজন মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ইয়ার সিস্টেমে আমরা মাস্টার্সের শেষ বর্ষ। এবার যদি আমরা পরীক্ষা দিতে না পারি, তাহলে আমাদের আরও দেড় বছর পিছিয়ে পরীক্ষা দিতে হবে। এমনিতেই আমাদের বিগত দেড় বছর করোনায় চলে গেছে। দু'দিক মিলে আমাদের প্রায় পড়াশোনা শেষ করতে দশ বছর লেগে যাবে। তাহলে কর্মজীবনে কখন প্রবেশ করবো? আমাদের সাথে চক্রান্ত করে এই কাজগুলা করা হয়েছে। আমরা শেষবারের মতো একটি সুযোগ চাই।
কলিজিয়েট এক শিক্ষার্থী তার বন্ধুদের সাথে একাত্মতা পোষণ করে বলেন, আসলে আমরা চাই আমাদের সকল বন্ধু-বান্ধব পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করুক। কারো হয়তো মা-বাবা মারা গেছে, কারো পারিবারিক বা অন্য কোনো সমস্যা থাকার কারণেই ক্লাসে অংশগ্রহণ করতে পারেনি।
এ ব্যাপারে জানতে বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক নিলুফার আহমেদের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি।
জানা যায়, এক সপ্তাহ আগে দর্শন বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের মাস্টার্সের ক্লাস শেষ হয়েছে। এ শিক্ষাবর্ষের ১০১ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে কলেজিয়েট হয়েছেন ১০ জন, নন-কলেজিয়েট ৬৮ জন এবং ডিস-কলেজিয়েট ৩৩ জন। গত ২৬ মে থেকে ৬ জুন পর্যন্ত ফরম পূরণের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ডিন্যান্স অনুসারে, ক্লাসে কোনো শিক্ষার্থীর উপস্থিতি ৭৫ শতাংশ হলে কলেজিয়েট, ৬০ শতাংশের উপরে নন-কলেজিয়েট এবং ৬০ শতাংশের নিচে ডিস-কলেজিয়েট হিসেবে গণ্য হয়। এক্ষেত্রে নন-কলেজিয়েটরা জরিমানা দিয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পেলেও ডিস-কলেজিয়েট শিক্ষার্থীদের এই সুযোগ নেই। ফলে পরের বছর তাদের এই শর্ত পূরণ করেই পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে।
বিভাগের জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকরা বলছেন, অনেকের উপস্থিতি ৪০ শতাংশেরও কম। একজন শিক্ষার্থী ক্লাস কিংবা পড়াশোনা ছাড়াই স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করলে, সেই শিক্ষার মান নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্ন থেকে যায়। তাছাড়া অর্ডিন্যান্সের নিয়মভঙ্গও নৈতিকভাবে শিক্ষকদের প্রশ্নবিদ্ধ করে। শিক্ষকদের কেউ কেউ আবার সার্বিক দিক বিবেচনা করে কিছু ক্ষেত্রে বিবেচনার কথাও বলছেন।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available