আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির আবদুল্লাহিয়ানসহ কয়েকজন শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তা এক হেলিকপ্টার বিধ্বস্তের ঘটনায় হয়ে নিহত হয়েছেন।
১৯ মে রোববার এ দুর্ঘটনার প্রাথমিক কারণ হিসেবে বৈরী ও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কথা বলা হচ্ছে। তবে এর নেপথ্যে আরও কিছু কারণ নিয়েও চলছে তোড়জোড় আলোচনা।
ইব্রাহিম রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হওয়ার সময় ইরানের পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের জোলফা নামের দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় ছিল ঘন কুয়াশা, হচ্ছিল বৃষ্টিও। দুর্ঘটনার কারণ নিয়ে ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে বলা হয়, বৈরী আবহাওয়ার কারণে হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হয়।
এ বিষয়ে সহযোগিতার প্রস্তাব দিয়ে রাশিয়া বলেছে, ইব্রাহিম রাইসির হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হওয়ার সঠিক কারণ উদ্ঘাটনে করতে প্রয়োজনীয় সব সহায়তা দিতে প্রস্তুত তারা। হেলিকপ্টারটি কীভাবে বিধ্বস্ত হলো, তা খতিয়ে দেখতে দুর্ঘটনার পরদিন একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ইরান।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের এভিয়েশন সেফটি এজেন্সি (ইএএসএ) বলছে, উঁচু পার্বত্য এলাকা ও গভীর উপত্যকার ওপর দিয়ে উড়ে যাওয়ার সময় পাইলট বিভ্রান্ত হতে পারে। এ ধরনের পরিবেশে চলাচল করা একজন পাইলটের জন্য মানসিক ও শারীরিকভাবে অত্যন্ত ক্লান্তির।
তবে কাইল বেইলি নামের বেসামরিক বিমান পরিবহন বিশেষজ্ঞ আল-জাজিরাকে বলেন, বিধ্বস্ত হওয়ার আগে হেলিকপ্টারের পাইলটরা সহায়তা চেয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করেননি। ফলে কোনো সন্দেহ নেই যে, যান্ত্রিক ক্রটির কারণেই হেলিকপ্টারটি নিয়ন্ত্রণ করতে সমস্যার মুখে পড়েছিলেন তাঁরা।
প্রেসিডেন্ট রাইসিকে বহনকারী ওই হেলিকপ্টারটি ছিল বেল-২১২ মডেলের। যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এই হেলিকপ্টার ১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামি বিপ্লবের আগে কিনেছিল তেহরান। সে হিসাবে এটি বেশ পুরোনো। এর আগেও একবার ইরানে এই মডেলের হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিল।
বিমান পরিবহণ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হওয়ার পেছনে অনেক রকম কারণ থাকতে পারে। বৈরী আবহাওয়া এর মধ্যে অন্যতম। হেলিকপ্টারটি অনেক পুরোনো মডেলের হওয়াকেও অন্যতম কারণ বলেও মনে করছেন এই বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ।
১৯৬৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি বেল ২১২ হেলিকপ্টার বাজারজাত শুরু হয়। গত শতকের সত্তরের দশকে ইরান এই মডেলের অনেকগুলো হেলিকপ্টার কেনে। সেই সময় ইরানের শাসনক্ষমতায় ছিলেন মোহাম্মদ রেজা পাহলভি, যিনি যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
১৯৭৯ সালে ইসলামি বিপ্লবের মধ্য দিয়ে শাহের পতন ঘটার পরও যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি উড়োজাহাজ, হেলিকপ্টার ও যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে আসছে ইরান। তবে বিপ্লবের পর তেহরানের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া নিষেধাজ্ঞার কারণে এসব মেরামতে যন্ত্রাংশ কেনাটা ইরানের জন্য কঠিন হয়ে ওঠে।
মেরামতের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ না পাওয়ার কারণে এসবের নিরাপত্তা নিয়েও দেখা দেয় উদ্বেগ। এতে করে ঘটতে থাকে দুর্ঘটনা। মোহাম্মদ রেজা পাহলভির সময়ে কেনা যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার একাধিক ঘটেছে ইরানের বিমানবাহিনীতে।
জেনেভাভিত্তিক ব্যুরো অব এয়ারক্রাফট অ্যাকসিডেন্ট আর্কাইভসের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ইরানের ২৫৩টি বিমান দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে। এসব দুর্ঘটনায় ৩ হাজার ৩৩৫ জনের প্রাণহানি হয়েছে। ইরানে অসংখ্যবার বিমান দুর্ঘটনা ঘটেছে। ( খবর: আল জাজিরা)
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available