বিশেষ প্রতিবেদক: ৫৩ সেকেন্ড ৪৩টি ব্যালটে ভোট! ছবিটি এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে নেট দুনিয়ায়। সঙ্গে আরেকটি স্টিল ছবি। যিনি জাল ভোট দিচ্ছেন তিনি এবং যিনি বিজয়ী হয়েছেন তিনি। দুজনের গলায় ফুলের মালা দিয়ে বিজয় উদযাপন করছেন। ছবির না বলা বার্তাটি অনেকটা এরকম যে, জাল ভোট দিয়ে বিজয়ী করার পর তাঁর সঙ্গে ছবি তুলেছেন অনেক আগে বহিস্কৃত ছাত্রলীগ নেতা আজাদ। পুরো বিষয়টার মধ্যে একটা পরিকল্পনার ছাপ পাওয়া যায়। যেন একটি প্রচারের জন্যে আরেকটি ছবি তোলা। প্রথম প্রশ্ন, কেন এই পরিকল্পনা?
একটি নির্বাচন। একজন ছাত্রলীগ নেতা একজন পোলিং অফিসারের সামনে নিয়ে ব্যালট ধরলো, আর তিনি ভোট দিতে থাকলেন! পাশাপাশি একজন ছবি তুললেন। কিন্তু ছড়িয়ে পড়া সেই ছবি দেখার পর, পুরো বিষয়টার মধ্যে গোপন কিছু দেখিনি। অথচ যে কাজটি তারা করছিলেন সেটা তো চুরি। একটা ভোট কেন্দ্র সেখাানে আর কোন লোক নেই? সবার সামনে এভাবে সিল মারা যাবে? ধরা যাক গেলো, কিন্তু যিনি ছবি তুলবেন তাকে কেউ কিছু বলবে না!
যাদের গোপন কাজের ছবি তারাও কিছু বলছেন না। বরং ছবি তুলতে সহায়তা করছেন। কেন ? সহজ উত্তর হতে পারে এরকম, যাদের ছবি তোলা হচ্ছে, তারা চান ছবিটি প্রচার হোক। নতুন প্রশ্ন, তারা কেন চান এই ছবি প্রচার হোক ? এরকম একটি ছবি প্রচার হলে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে এটা তো জানা কথা। তাহলে কেন একজন ছাত্রলীগ নেতা কাজটি করতে চাইবেন? হ্যাঁ চাইতে পারেন যদি তিনি আসলে বিরোধীদের অ্যাজেন্ট হন। অথবা যদি কোন কারণে তিনি প্রতিশোধ নিতে চান।
এখনই বিরোধী দলের এজেন্ট ভাবার মত সহজ সমীকরণে না যাই। কিন্তু যদি প্রতিশোধের বিষয়টি সামনে আনা হয় তাহলে ব্যাখ্যা করা সহজ। কারণ মাত্র এক মাস আগে এই ভোট দাতা আজাদকে ছাত্রলীগ থেকে বহিস্কার করার প্রেস রিলিজ পাওয়া যায়। এই বহিস্কারের ক্ষোভ থেকে তিনি এটা করতে পারেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, বহিস্কার হওয়ার পরেও কেন তিনি কেন্দ্রের দায়িত্ব পেলেন?
আজাদ কেন্দ্রের দায়িত্ব পেলেন না দায়িত্ব দেয়া হলো? সেটাও একটা বড় প্রশ্ন। কে দিল এই দায়িত্ব? এসব প্রশ্নের উত্তর জানা দরকার। বর্তমান সময়ের জন্য আরও বেশি দরকার। সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার মিয়ান আরেফিন আমেরিকা থেকে বাইডেনের উপদেষ্টা হয়ে আসতে পারেন। আর ছাত্রলীগ থেকে মাত্র বহিষ্কৃত আজাদ লক্ষ্মীপুরের নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করার অ্যাসাইন্টমেন্ট পাবেন না তা এমন ভাবনা আসা অমুলক নয়।
সবাই জানে এই নির্বাচন নিয়ম রক্ষার নির্বাচন। এতে বিজয়ী প্রার্থী একবার সংসদে বসতেও পারবেন না। নির্বাচনের চার প্রার্থীর দু’জন নির্বাচনের দিন দুপুরের পর অনিয়মের অভিযোগ তুলে নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেন। তার পরেও কেন ব্যালট নিয়ে জাল ভোট দিতে হবে? এক লাখেরও বেশি ভোট পেয়েছেন বিজয়ী প্রার্থী। বাকি তিনজনের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। এই ৪৩ ভোট ভোট না পেলে কী হতো ফারুকের? এই সব প্রশ্নের সহজ উত্তর নিশ্চয়ই জানেন বিজয়ী গোলাম ফারুক। তাহলে কেন তাকে এমন ভোট দেয়াতে হলো আর কেনই বা ছবি তোলাতে হলো ?
যদিও ছবিটি কে তুলেছেন এবং কোন কর্মকর্তা ব্যালট পেপার তার সামনে ধরেছেন তাদের নাম পরিচয় পাওয়া যায়নি। আজাদও গ্রেপ্তার হয়নি। নির্বাচন কমিশন তদন্ত শুরু করেছেন। এই লেখার সহজ প্রশ্নের উত্তরও হয়তো পাওয়া যাবে তদন্তে। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবি ছড়িয়ে, নির্বাচন ব্যবস্থার প্রতি যে অনাস্থা তৈরি হলো তা কীভাবে ফেরাবে? এখন শেষ প্রশ্ন করি এই পুরো প্রক্রিয়াটি সেই উদ্দেশ্যে নয়তো?
এ কে এম শাহজাহান কামালের মৃত্যুতে শূন্য হওয়া লক্ষ্মীপুর-৩ আসনে উপ-নির্বাচনে ভোট হয় রোববার। চারজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিলেন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ থেকে গোলাম ফারুক পিংকু (নৌকা), জাতীয় পার্টির মোহাম্মদ রাকিব হোসেন (লাঙ্গল), জাকের পার্টির শামছুল করিম খোকন (গোলাপ ফুল) ও ন্যাশানাল পিপলস পার্টির সেলিম মাহামুদ (আম)। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মোহাম্মদ গোলাম ফারুক পিংকু এক লাখ ২০ হাজার ৫৯৯ ভোট পেয়ে জয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোহাম্মদ রাকিব হোসেন লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন তিন হাজার ৮৪৬ ভোট। এ উপ নির্বাচনে ভোট পড়েছে ৩১ দশমিক ৮৫ শতাংশ।
আজাদ হোসেন ছাত্রলীগের ‘কেউ নন’ বলে দাবি করেন এই আসনে জয়ী প্রার্থী আওয়ামী লীগের মোহাম্মদ গোলাম ফারুক পিংকু। তিনি বলেন, “ আজাদ হোসেন এক সময়ে লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জ থানা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি পদে থাকলেও। দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে তাকে দুইবছর আগে বহিষ্কার করে জেলা ছাত্রলীগ। তবে এখন সে ছাত্রলীগের কেউ নয়।”
নির্বাচনে জয়ী হওয়ায় এদিন নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে কমিশন ভবনে যান পিংকু। এসময় তিনি বলেন “খোঁজ নিয়ে জানা গেছে আজাদের বাবা বিএনপির সঙ্গে জড়িত। জাতীয় নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার উদ্দেশ্য তার। তদন্তে সব বেরিয়ে আসবে।”
এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। ভোটের পরদিন সোমবার লক্ষ্মীপুর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে এই নির্দেশনা দেয় ইসি।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available