মাভাবিপ্রবি প্রতিনিধি: টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (মাভাবিপ্রবি) এর দ্বিতীয় গেট দিয়ে প্রবেশ করে ঠিক শাহজামান দিঘীর উত্তর-পশ্চিম পাশে অবস্থিত মজলুম জননেতা মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর দরবার হল। ঐতিহাসিক দিক বিবেচনায় মাওলানা ভাসানীর দরবার হল একটি পুরাতন ঐতিহ্যবাহী ঘর।
মওলানা ভাসানী ১৯৬৭ সালে প্রথমত ছনের ছাউনিতে এ দরবার হল নির্মাণ করেন। নির্মাণের পর থেকে দরবার হলটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে কালের সাক্ষী হিসেবে এখনো দাঁড়িয়ে আছে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত এ দরবার হলে বসে গ্রহণ করেছেন মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। অনেক রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এসেছেন এ দরবার হলে, সভাও করেছেন। শুধু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বই নন এখানে কৃষক, শ্রমিক ও বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষ অর্থাৎ যে কারো সাথে কোন সভা কিংবা আলোচনা থাকলে মাওলানা ভাসানী এই দরবার হলে বসেই করতেন। দরবার হলটিতে প্রায় এক হাজার লোকের কর্মী সমাবেশ করার মতো জায়গা রয়েছে। আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে যেকোনো গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সিদ্ধান্তসমূহ দরবার হলে বসে মাওলানা ভাসানী গ্রহণ করতেন। ১৯৭০ সালের ৮ সেপ্টেম্বর বিশাল কৃষক সমাবেশ ও জিকির মাহফিলের মাধ্যমে মাওলানা ভাসানী টিনের আটচালা বিশিষ্ট (১৯৭৩ সালে ষোল চালার কাঠামোর রূপান্তরিত) ঐতিহাসিক দরবার হলের উদ্বোধন করেন।
দেশ- বিদেশ থেকে মওলানা ভাসানীর স্মৃতিবিজড়িত দরবার হলটি দেখতে আসেন। বর্তমানে এই দরবার হলে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সেমিনার ও আলোচনা সভার আয়োজন মাঝেমধ্যে করা হয়ে থাকে।
দরবার হল সম্পর্কে মাওলানা ভাসানী রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক ড. মো. আজিজুল হক জানান, দরবার হল একটি ঐতিহ্যের অংশ। বিশ্ববিদ্যালয় দরবার হলকে ঐতিহ্য হিসেবে সংরক্ষণ করছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দরবার হলকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব সহকারে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী সহদেব তাম্বুলী বলেন, দরবার হল একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। মাওলানা ভাসানীর স্মৃতি সম্বলিত জায়গা এটি। আমরা চাই, মাওলানা ভাসানীর স্মৃতিগুলো যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা হয়। বাইরে দরবার হল সম্পর্কে একটি বোর্ড বানালে আরও তথ্য দর্শনার্থীরা জানতে পারতো। অস্থায়ী দোকানগুলো যাতে কাগজ, পলিথিন ফেলে স্থাপনাটির চারপাশ নোংরা না করতে পারে এজন্য যথাযথভাবে দরবার হলের চারপাশ পরিচ্ছন্ন রাখার দিকেও নজর দিতে হবে।
দরবার হল দেখতে টাঙ্গাইল শহর থেকে দর্শনার্থীরা আসেন প্রায়ই। কথা হয় তাদের কয়েকজনের সাথে। তাদেরই একজন টাঙ্গাইল শহরের একটি বেসরকারি মাধ্যমিক স্কুলে পড়ুয়া শিক্ষার্থী আদিতি আরিয়ান প্রান্তি বলেন, আমরা প্রায়ই দরবার হলের সামনে বসে দরবার হলের সৌন্দর্য উপভোগ করি। তাছাড়াও ভাসানী মেলায় দরবার হলের আশে পাশে অনেক দোকান বসে। বিশেষ দিনগুলোতে দরবার হলে আলোকসজ্জা দেখতে পায়। যেহেতু এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, তাই স্থায়ীভাবে আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করলে দর্শনার্থীদের ও ভালো লাগবে। তাছাড়া অধিকাংশ সময় দর্শনার্থীরা এটা দেখতে আসেন। তাদের দরবার হলের তাৎপর্য বলার মতো একজন গাইড রাখাও যেতে পারে, যিনি দরবার হলসহ মাওলানা ভাসানীর স্মৃতিবিজড়িত ট্রাক্টর, জাদুঘর ও মাজার প্রাঙ্গন দেখানোর পাশাপাশি এই সম্পর্কে দর্শনার্থীদের জানাবেন।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available