লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি: লক্ষ্মীপুরে রোগীর কাছে সরকারি ঔষধ বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে আবুল কাসেম নামের এক গ্রাম ডাক্তারের বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত গ্রাম ডাক্তার আবুল কাসেম ৪নং চর রুহিতা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের জনতা বাজারের জনতা ফার্মেসির স্বত্বাধিকারী। এক নামে যাকে কাসেম ডাক্তার হিসেবে এলাকাবাসীর চেনেন ও জানেন।
তবে স্থানীয়দের অভিযোগ অনুযায়ী বেশিরভাগ সময়ই দেন ভুল চিকিৎসা। তার ফার্মেসিতে থাকে ডেটওভার ঔষধ। এলাকার বিভিন্ন মানুষ তার কাছে চিকিৎসা নিয়ে হয়েছেন হয়রানির শিকার। তবে সম্প্রতি সাবানা নামের স্থানীয় এক মহিলাকে সরকারি ইঞ্জেকশন দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়ে হয়েছেন সমালোচিত।
জানাজানি হলে পরিস্থিতি সামাল দিতে রাতের অন্ধকারে ৪০ হাজার টাকার বিনিময়ে এলাকার লোকজনের উপস্থিতিতে সমাধানের চেষ্টা করেন কাসেম। টাকা দেওয়া সত্ত্বেও পরের দিনই বিষয়টি চলে আসে সংবাদ মাধ্যমে। এভাবে সদর হাসপাতাল থেকে ঔষধ এনে রোগীর কাছে বিক্রি করাই তার প্রধান পেশা।
তবে ভুল চিকিৎসা দেওয়াটাও যেন তার নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। জানা যায়, বছর দেড়েক আগে তার নিজের স্ত্রী ভুল চিকিৎসার বলি হন। এভাবে স্থানীয় জনতা বাজার এলাকার এক গ্রাম পুলিশের বাবাও তার ভুল চিকিৎসার শিকার। এক দিকে সরকারি ঔষধ বিক্রি, অন্যদিকে ভুল চিকিৎসা তাহলে কি করছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ? কাঞ্চনির বাজারের পাশে জনতা বাজারে কাসেমের এই ফার্মেসি নিয়ে রয়েছে বিভিন্ন অভিযোগ ।
খবর নিয়ে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে সেই ফার্মেসির লাইসেন্স ছাড়া চালাচ্ছেন তিনি। আবার মহিলা রোগীদের সাথে আপত্তিকর কথাও বলেন তিনি। এমন পরিস্থিতিতে গ্রাম ডাক্তার আবুল কাসেমের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ স্থানীয়দের।
ভুক্তভোগী সাবানা আক্তার জানান, আমার জ্বর হওয়ার পর আমি সদর হাসপাতালে ডাক্তার দেখাই। সেখানে চিকিৎসার জন্য আমাকে ভর্তি দেয়া হলে সমস্যার কারণে আমি বাড়িতে আসি। আমাদের স্থানীয় গ্রাম ডাক্তার কাসেমের কাছে গেলে তিনি আমাকে সুস্থ করার আশ্বাস দেন এবং আমাকে প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ইঞ্জেকশন পুশ করেন। একটি ইঞ্জেকশনের দাম নেন ৬/৭শ টাকা। আমি ওনাকে সরকারি ঔষধ এত দাম কেন নেন? এই কথা বললে তিনি আমার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে হুমকি-ধমকি দেন।
এছাড়াও আমাকে ইঞ্জেকশন দিতে গিয়ে আমার ছেলের সামনে আপত্তিকর কথা বলেন। আমি কাসেমের উপযুক্ত বিচার চাই। স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি বলেন, তিনি দীর্ঘ দিন পর্যন্ত এলাকার মানুষকে ভুল চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। তারা বলেন, তার ভুল চিকিৎসার বলি হন তার নিজের স্ত্রী। এখন প্রশ্ন এই সরকারি ঔষধ সরকারি হাসপাতাল থেকে পাচার হয় কি করে? নাকি সরকারি হাসপাতালের কর্মচারীদের মাধ্যমে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সরকারি ঔষধের ব্যবসায় জড়িত কাসেম ? কোনটা?
লক্ষ্মীপুর জেলা ড্রাগ সুপার ডালিম বলেন, বিষয়টি আমাকে সিভিল সার্জন মহোদয় অবগত করেছেন । সরেজমিনে তদন্ত করার পর রিপোর্ট পেশ করবো। বিষয়টির সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কারণ এর কারণে দরিদ্র বা সরকারি চিকিৎসা যারা গ্রহণ করেন, তাদের অনেক সমস্যায় পড়তে হয়।
সিভিল সার্জন আহমেদ কবির বলেন, এ বিষয়টি আমি অবগত আছি, ড্রাগ সুপারকে বলা হয়েছে তিনি তদন্ত করবেন। তদন্ত করার পর অপরাধ প্রমাণ হলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সরকারি ঔষধ বিক্রি সম্পূর্ণ নিষেধ। আমাদের হাসপাতালের কেউ যদি এমন অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকে তাকেও ছাড় দেয়া হবে না। তদন্ত সাপেক্ষে আবুল কাসেমসহ জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনলে অন্য অপরাধীরা সতর্ক হবেন। সেই সাথে বন্ধ হবে সরকারি ঔষধ পাচার ও বিক্রি।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available