বাগেরহাট প্রতিনিধি: বাগেরহাটে জেলা কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্রের উপ-পরিচালক জয়দেব কুমার সিংহের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে। ২৯ জুলাই সোমবার থেকে তার বিরুদ্ধে আনিত লিখিত অভিযোগের তদন্ত করছেন খুলনা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. শরিফুল ইসলাম।
রামপালে প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্প এলডিডিপির প্রকল্পের পিজি গ্রুপের সদস্য মু. মাসুম বিল্লাহ ও মনোয়ারা খাতুনসহ কয়েকজন সদস্যের অভিযোগে জানা গেছে, বাগেরহাটের কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্রর উপ-পরিচালক জয়দেব কুমার সিংহ রামপালে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন কালে অনিয়ম ও দুর্নীতি করে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেন।
এ ঘটনায় উপকারভোগীরা প্রতিকার চেয়ে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে লিখত অভিযোগ দায়ের করেছেন। লিখিত অভিযোগে তারা জানান, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন প্রাণিসম্পদ দপ্তরের আওতাধীন এলডিডিপি প্রকল্পটি বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে পরিচালিত হচ্ছে ।
এই পিজি গ্রুপের মাধ্যমে তাদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়ে থাকে। জনপ্রতি নতুন পিজি গ্রুপের সদস্যদের কাছ থেকে ১ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নেওয়া হয়। প্রশিক্ষণে ৩০ জন করে মোট ১০টি পিজি গ্রুপের সদস্যদের কাছ থেকে খাবার বাবদ মোট ৯০ হাজার টাকা, নিম্ন মানের মুরগির ঘর নির্মাণ করে ৬০টি পরিবারের কাছ থেকে ৭ হাজার টাকা করে মোট ৪ লক্ষ ২০ হাজার টাকা, ছাগলের ঘর নির্মাণে ৩০টি পরিবারের কাছ থেকে ৭ হাজার টাকা করে মোট ২ লক্ষ ১০ হাজার টাকা, গৃহপালিত পশুদের ঘাসের বরাদ্দকৃত অনুদানের টাকা থেকে ১০ জনের কাছ থেকে ৫ শত টাকা করে মোট ৫ হাজার টাকা, সরকারিভাবে বরাদ্দ অফিসের ঔষধ খামারিদের মাঝে বণ্টন না করে তা বাইরে বিক্রি করা, প্রশিক্ষণে প্রকৃত খামারিদের নাম না দিয়ে স্বজনপ্রীতি করে অফিসের আত্মীয় স্বজনদের দিয়ে প্রশিক্ষণ করানো, দুপুরের খাবার বাবদ বরাদ্দ টাকা থেকে ১৫টি প্রশিক্ষণে ১১ জন সদস্যদের কাছ থেকে মোট ৪ লক্ষ ৪৫ হাজার ৫ শত টাকাসহ বিভিন্ন খাত থেকে সর্বমোট ১৫ হাজার ২০০ টাকা, খাবার বাবদ ১ লক্ষ ১৮ হাজার টাকা, ১১টি পিজি থেকে ১ লক্ষ ৬৭ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেন ওই কর্মকর্তা। তার এমন অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার প্রতিবাদ করায় এলডি ডিপির সদস্যদের সদস্য পদ বাতিল করারও হুমকি দেন জয়দেব কুমার সিংহ।
তিনি উলটো এলডিডিপি প্রকল্পের পিজি গ্রুপের সদস্যদের বিরুদ্ধে নিজের অপকর্ম আড়াল করতে রামপাল থানায় ও উপজেলার বাঁশতলী ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম আদালতে অভিযোগ দায়ের করেন। যা তিনি প্রমাণ করতে পারেননি।
এছাড়াও রামপাল প্রাণিসম্পদ দপ্তরের প্রাণিসম্পদ সম্প্রসারণ কর্মকর্তা জুবায়ের হোসেন, অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা অফিস সহকারী অমর কুমারের ৭ মাস পূর্বে বাগেরহাট জেলা অফিসে পোস্টিং হলেও তাকে রামপালে রেখে কাজ করান ওই কর্মকর্তা । তার মাধ্যমে তিনি বিভিন্ন খাত থেকে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন । মুক্তা নামের এক মাঠকর্মী ঘাস চাষের প্রকল্পে কাজ করেন। তাদের মাধ্যমে জয়দেব কুমার প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ করেছেন ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন।
অভিযোগের বিষয়ে প্রাণিসম্পদ সম্প্রসারণ কর্মকর্তা জুবায়ের হোসেন সকল অভিযোগ অস্বীকার করেন। অফিস সহকারী অমল কুমারের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের বিষয়ে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি উত্তেজিত হয়ে পড়েন। তবে তিনি সকল অভিযোগ অস্বীকার করেন। মুক্তার সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
অভিযুক্ত বাগেরহাটের কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্রের উপপরিচালক জয়দেব কুমার সিংহ বলেন, আমি এখানে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছি। দায়িত্ব পালনকালে খামারিদের জীবনমান উন্নয়নে সর্বোচ্চ চেষ্টাই করেছি। তাছাড়া কাজ করলে ভুল হয়। দুয়েকজন হয়ত ভুল বুঝে অভিযোগ করেছেন। ওই অভিযোগ আদৌ সত্যি নয়। আমি কোন দুর্নীতি বা স্বজনপ্রীতি করিনি। ইতোমধ্যে তদন্ত শুরু হয়েছে অপেক্ষা করুন তদন্ত শেষে সব জানা যাবে।
অভিযোগের বিষয়ে খুলনা জেলা প্রাণিসম্পদ ও তদন্ত কর্মকর্তা ডা. মো. শরিফুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, অভিযোগের বিষয়ে আমরা ইতোমধ্যে তদন্তের কাজ শুরু করছি। তবে প্রাথমিক তদন্তে অনিয়মের বিষয়ে কিছু পরস্পর বিরোধী অসংগতি পাওয়া গেছে। তবে আমরা আরও সময় নিয়ে তদন্ত করবো।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available