আলমগীর মানিক, রাঙামাটি: দীর্ঘ ১২৭ দিন বন্ধ থাকার পর অবশেষে শনিবার দিবাগত মধ্যরাত থেকে রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদে মৎস্য আহরণে নামছে প্রায় ২৬ হাজার জেলে পরিবার। এতে করে নতুনভাবে চাঙ্গা হয়ে উঠবে পাহাড়ের অর্থনীতি। প্রাকৃতিক প্রজনন ও দেশীয় কার্প জাতীয় মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন নিশ্চিতে প্রতি বছর তিন মাসের জন্য কাপ্তাই হ্রদে মাছ আহরণ বন্ধ থাকে। এ বছর ২৪ এপ্রিল থেকে ২৪ জুলাই পর্যন্ত তিন মাস বন্ধ থাকার পর হ্রদে পর্যাপ্ত পানির না থাকার ফলে মাছের প্রজনন সুষ্ঠুভাবে না হওয়ায় নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ প্রথম দফায় ১৫ দিন ও দ্বিতীয় দফায় ২৩ করে এক মাস ৩৮ দিন নিষেধাজ্ঞার সময় বাড়ানো হয়।
চলতি সপ্তাহে টানা বৃষ্টিতে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে কাপ্তাই হ্রদে পানির অবস্থা টইটুম্বুর। এতে করে মাছের প্রজনন সঠিকভাবে বেড়েছে এবং এবছর রাজস্ব আয় বিগত বছরের তুলনায় বাড়বে বলে আশা করছেন হ্রদ ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা বিএফডিসি কর্তৃপক্ষ।
বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএফডিসি) রাঙামাটি বিপণন কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সব প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। জেলে ও ব্যবসায়ীরা হ্রদে জাল ফেলার জন্য প্রস্তুত। হ্রদে পানির পরিমাণ বেশি থাকায় আশা করছি এবার বছরব্যাপী প্রত্যাশিত পরিমাণে মাছ আহরণ সম্ভব হবে।
রোববার ভোর থেকেই রাঙামাটির প্রধান বিপণন কেন্দ্র ছাড়াও কাপ্তাই, মারিশ্যা এবং খাগড়াছড়ি জেলার মহালছড়ির উপকেন্দ্রে কাপ্তাই হ্রদ থেকে আহরিত মাছ নিয়ে আসবে জেলেরা। এরপর এসব মাছের শুল্কহার আদায় শেষে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বাজারজাত করা হবে।
বিএফডিসি’র তথ্যানুসারে, ২০২০-২১ মৌসুমে ৬ হাজার ৭৯৪ টন, ২০২১-২২ মৌসুমে ৬ হাজার ৫২৩, ২০২২-২৩ মৌসুমে হাজার ৫ হাজার ৪৯০ এবং সর্বশেষ ২০২৩-২৪ মৌসুমে কাপ্তাই হ্রদ থেকে ৭ হাজার ৬২৭ টন মাছ বাজারজাত হয়েছে। চলতি মৌসুমে মাছ বাজারজাতের পরিমাণ বাড়ার আশা করছেন বিপণন কর্মকর্তারা।
এ বছর ৮ হাজার ২০০ টন মাছ বাজারজাত এবং ১৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। গত বছর কাপ্তাই হ্রদের মাছ বাজারজাত হয়েছিল ৭ হাজার ৮০০ টনের মতো। এ বছর হ্রদে পর্যাপ্ত পানি রয়েছে। মাছ আহরণ ২০-২৫ শতাংশ বাড়বে বলেও আশা বিএফডিসি কর্তৃপক্ষের।
রাঙামাটি মৎস্য ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি উদয়ন বড়ুয়া বলেন, চার মাসেরও বেশি সময় বন্ধ থাকার পর আজ মধ্যরাত থেকে কাপ্তাই হ্রদে মৎস্য আহরণ শুরু হচ্ছে। এনিয়ে জেলে এবং ব্যবসায়ীদের মধ্যে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। আগামীকাল সকাল থেকে আবারও ব্যস্ত হয়ে উঠবে বিএফডিসি মৎস্য অবতরণ ঘাট। যেহেতু হ্রদে প্রচুর পানি আছে, তাই এ বছর ভালো ব্যবসা হবে বলে আমরা আশাবাদী।
উল্লেখ্য, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার বৃহত্তম হ্রদ কাপ্তাইয়ে কার্প জাতীয় মাছের বংশবৃদ্ধি, হ্রদে অবমুক্ত করা পোনা মাছের সুষ্ঠু বৃদ্ধি, মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন নিশ্চিতকরণসহ হ্রদের প্রাকৃতিক পরিবেশ মৎস্য সম্পদ বৃদ্ধির সহায়ক হিসাবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রতি বছর ১ মে থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত তিন মাস মাছ শিকার বন্ধ রাখা হয়। তবে এবার হ্রদে পর্যাপ্ত পানি না থাকার কারণে ১ আগস্ট থেকে মৎস্য আহরণ শুরু করা যায়নি। কাপ্তাই হ্রদে মৎস্য শিকার বন্ধকালীন সময়ে প্রায় ২৬ হাজার পরিবারকে প্রতি মাসে ২০ কেজি করে খাদ্যশস্য বরাদ্দ দেওয়া হয়।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available