নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা: মহাসড়কে গরুর গাড়ি আটকে জোর করে হাটে ঢুকানোর ছবি তোলায় রাজধানীর উত্তরায় আজকের পত্রিকার সাংবাদিক নুরুল আমিন হাসানের উপর হামলা চালিয়েছে ইজারাদারের লোকজন। তাকে স্থানীয় শহীদ আহসান উল্লাহ্ মাস্টার সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
১১ জুন মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টা ১০ মিনিটে উত্তরা ১০নং সেক্টরে কামারপাড়া পুলিশ বক্সের সামনের হাটে ১৫/২০ জন যুবক অতর্কিতভাবে তার উপর এ হামলা চালায়। আহত সাংবাদিক নুরুল আমিন হাসান সারা দেশের স্থানীয় দৈনিক ‘আজকের পত্রিকা’র সিটি রিপোর্টার হিসাবে কর্মরত রয়েছেন।
আহত সাংবাদিক হাসান বলেন, 'দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আশুলিয়া হয়ে উত্তরায় আগত ঢাকাগামী কোন গরুর গাড়ি ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। জোর করেই এসব গরুর গাড়ি উত্তরা ১০নং সেক্টরের কামাড়পাড়া গরুর হাটের লোকজন হাটে ঢুকাচ্ছে, এমন খবর আসে। সত্যতা যাচাই করার জন্য কামাপাড়া মোড়ে গিয়ে দেখতে পাই, একটি গরুর গাড়ি কামাড়পাড়া থেকে টঙ্গীতে ঢুকবে। কিন্তু গাড়িটি হাটের লোকজন মোটরসাইকেল দিয়ে রাস্তা ব্যারিকেড দিয়ে, গরুর গাড়ির চালককে মারধর করে পাশের হাটে ঢুকাচ্ছে ২০/২৫ জনের বেশি যুবক। ওই যুবকদের কয়েকজন আবার ট্রাকের উপরে উঠে ট্রাক চালক ও বেপারীদের সঙ্গে ঝগড়া বিবাদ করছে। ওই সময় মুঠোফোনে দূর থেকে সেই দৃশ্য ধারণ করতে গেলেই কামাড়পাড়া হাটটির ১৫/২০ জন ইজারাদারের লোকজন আমার উপর হামলা করে।'
তিনি আরও বলেন, 'হামলাকালে তারা বলতে থাকে সিটি কর্পোরেশনের ১নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আফসার উদ্দিন খান ও ৫৪নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর হোসেন যুবরাজের লোকজন আমরা। তারা হাটে বসে আছেন। তুই কে, তোরে ছবি তোলার ভিডিও করার সাহস দিছে কে? এমন সময় তারা ১৫/২০ যুবক মাঝে ফেলে এলোপাথাড়ি পেটাতে থাকে, আর সাথে থাকা মোবাইল ফোন নিয়ে নেয়। অপরদিকে আইডি কার্ডটি নিয়ে নেওয়ার জন্য টানাহেঁচড়া শুরু করে। আর চশমা পড়া ফর্সা করে এক যুবক আমার মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে আরেক যুবক ছেলেকে দিয়ে দেয়। তারা টানাহেঁচড়া করতে করতে কয়েকশত গজ সামনের মোড়ের ওয়াচ টাওয়ারের পাশে নিয়ে যায়। সেখানে রাস্তার উপর ফেলে সবাই মিলে এলোপাথাড়ি কিল, ঘুষি, লাথি মারতে থাকে। মোবাইল ছিনিয়ে নেওয়ার সময় তার হাত আমি ধরে রাখি।
সাংবাদিক হাসান বলেন, 'হামলার ঘটনা দেখতে পেয়ে কামাড়পাড়া মোড়ে কর্তব্যরত ট্র্যাফিক পুলিশের সার্জেন্ট মারুফ ছুটে আসেন। সাথে সাথে ওদের মাঝে এসে বুকে জড়িয়ে ধরে রক্ষা করে পুলিশ বক্সে নিয়ে যান। সেই সাথে মোবাইল ছিনিয়ে নেওয়ার সময় আমি যে যুবকটিকে ধরে রেখেছিলাম, তার কাছ থেকে মোবাইলটি উদ্ধার করে দেন। এদিকে উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশের চেকপোস্টের সামনে হামলার ঘটনা ঘটলেও তাদের ভূমিকা ছিল রহস্যজনক। চেকপোস্টের কোন পুলিশ সদস্য হামলাকালে ছুটে আসেন নি, তারা শুধু কয়েকশত গজ দূর থেকে দেখেই গেছেন। আবার হামলাকারীরা সেখানে কর্তব্য এএসআই কাজিমকে বলতে শোনা যায়- আপনারা বিষয়টি দেখেন। আমরা আপনাদেরকে দেখতেছি। হামলার ঘণ্টাখানেক পর খবর পেয়ে উত্তরা পশ্চিম থানার এসআই মেহেদী হাসান অপূর্ব আসেন এবং হামলার বিষয়ে জানতে চান।
আহত ওই সংবাদকর্মী বলেন, 'হামলার পর সহকর্মীরা আমাকে উদ্ধার করে টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ্ মাস্টার সরকারি হাসপাতালে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা করান। হামলায় ডান হাতের জোড়ায়, গলার ডান পাশে, বুকে, পিটেসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছি।
ঘটনাস্থলে ট্র্যাফিক পুলিশের কর্তব্যরত সার্জেন্ট মো. মারুফ বলেন, 'আমি ট্র্যাফিক পুলিশ বক্সের ভেতরে ছিলাম। তখন বাহিরে দেখি ঝামেলা হচ্ছে। পরে বেরিয়ে এসে দেখতে পাই সাংবাদিক হাসান ভাইকে মারধর করছে। পরে তাকে রক্ষা করার জন্য আমার সাধ্যমত চেষ্টা করি।
এদিকে উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ সূত্র ও হাটের পাশের বিশ্বস্ত লোকজন জানায়, রাত সাড়ে ১২টায় একজন গরুর ব্যাপারী ৯৯৯ এ ফোন দিয়ে অভিযোগ করে বলেন- কামাড়পাড়া হাটের লোকজন রাস্তা থেকে জোর করে গরুর গাড়ি হাটে ঢুকিয়ে দিয়েছে। পরে থানার এসআই মেহেদী হাসান অপূর্ব ওই ব্যাপারীকে গরুর ট্রাক নিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available