নিজস্ব প্রতিবেদক: বান্দরবান জেলার রুমা উপজেলা সোনালী ব্যাংকের শাখায় ডাকাতির ১৭ ঘণ্টার মাথায় একই জেলার থানচি উপজেলার আরও দুইটি শাখায় ডাকাতি হয়েছে৷সশস্ত্র বন্দুকধারীরা ৩ এপ্রিল বুধবার দুপুর একটার দিকে থানচির সোনালী ও বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে গুলি করতে করতে ঢুকে নগদ টাকা লুট করে নিয়ে যায়৷
পুলিশের আইজি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন বুধবার দুপুর ১২টার দিকে আগের রাতে রুমায় ব্যাংক ডাকাতির ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান৷ পুলিশের আইজি ব্যাংক ডাকাতির ঘটনা পরিদর্শনে যখন রুমা থানা এলাকায় অবস্থান করছিলেন, তখনই পাশের থানা থানচিতে ব্যাংক ডাকাতির ঘটনা ঘটে৷
এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বুধবার দুপুরে সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে বলেছেন, বান্দরবানে দুই দিনে ব্যাংক ডাকাতির ঘটনায় কুকি-চীন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) জড়িত বলে জানা গেছে৷এ ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি৷ আইজিপির নেতৃত্বে একটি টিম সেখানে রয়েছে৷ তারা সার্বিক দিক খতিয়ে দেখছেন৷ পুলিশ ও বিজিবির সদস্যরা সেখানে অভিযান চালাচ্ছে৷ সেনাবাহিনীর সদস্যরাও যোগ দেবেন৷
এদিকে পুরো বান্দরবান জেলায় বুধবার দুপুরের পর সব ব্যাংকের শাখায় লেনদেন বন্ধ করে দেয়া হয়৷ থানচি উপজেলায় তিনটি চাঁদের গাড়িতে করে ডাকাতরা আসে৷ ডাকাতির পর তারা ওই গাড়িতে করেই পাহাড়ের রাস্তা ধরে চলে যায় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়৷ এই ঘটনায় স্থানীয়রা সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী কুকি-চীন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)-এর সদস্যদের দায়ী করেছেন৷
থানচির সোনালী ও কৃষি ব্যাংকের স্থানীয় শাখায় ঢুকে সশস্ত্র ব্যক্তিরা ভল্ট খুলতে পারেনি বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মামুন৷ তিনি জানান, যতটুকু জানা গেছে, সোনালী ব্যাংক থেকে প্রায় ১৫ লাখ এবং কৃষি ব্যাংক থেকে প্রায় সাত-আট লাখ টাকা নিয়ে গেছে ডাকাতরা৷
তিনি বলেন, ডাকাতরা ব্যাংকের ভল্ট খুলতে না পেরে কাউন্টারে রাখা ও গ্রাহকদের উত্তোলন করা টাকা নিয়ে গেছে৷ ভীতি সৃষ্টি করতে ডাকাতরা ব্যাংকের ভেতরে ব্যাপক গোলাগুলি করেছে৷ দুইটি শাখা ব্যাংক থেকে মোট ১৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা তারা নিয়ে গেছে বলে সর্বশেষ তথ্যে জানা গেছে৷
থানচি কৃষি ব্যাংকের ম্যানেজার হ্লাসুই থোয়াই মারমা বলেন, বাইরে তিনটি গাড়ি ছিল৷ ডাকাতরা একযোগে দুইটি ব্যাংকে প্রবেশ করে৷ তারা ব্যাংকের ভিতরে গুলি করে আতঙ্ক সৃষ্টি করে৷ পাশেই পুলিশ ফাঁড়ি আছে৷ তাদের মধ্যে তাড়াহুড়ো ছিল৷ ব্যাংকের সবাইকে তারা একটি রুমে আটক করে৷ এরপর ভল্টের চাবি না পেয়ে তারা বাইরে যে নগদ টাকা ক্যাশ কাউন্টার গ্রাহকদের কাছে ছিল, তা নিয়ে চলে যায়৷ তারা বেশিক্ষণ অবস্থান করেনি৷
থানচি উপজেলা চেয়ারম্যান থোয়াই হ্লা মং মার্মা বলেন, তারা ২০-২৫ জন তিনটি গাড়িতে করে আসে৷ তারা সবাই ছিল সশস্ত্র এবং কুকি-চীন গ্রুপের পোশাক পরা৷ ব্যাংক দুইটির শাখা পাশাপাশি৷ উপজেলা পরিষদ ও বাজারের মাঝামাঝি৷ সেখানে একটি পুলিশ ফাঁড়িও আছে৷ তারা ব্যাংকের মধ্যে গুলি করতে করতে ঢোকে৷ ব্যাংকের ভিতরেও ব্যাপক গোলাগুলি করে৷ ওই ঘটনার পর এলাকার অফিস আদালত ও দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়৷ লোকজন আতঙ্কিত হয়ে পড়ে, জানান তিনি৷
এর আগে ২ এপ্রিল মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে তারাবির নামাজের সময় সশস্ত্র ব্যক্তিরা রুমা উপজেলার সোনালী ব্যাংকে হামলা চালিয়ে ১৪টি আগ্নেয়াস্ত্র এবং নগদ টাকা লুট করে নিয়ে যায়৷ হামলাকারীরা সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী কুকি-চীন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)-এর সদস্য৷ সোনালী ব্যাংকের শাখা অফিসটি উপজেলা পরিষদ চত্বরে৷ এটির নীচতলায় থাকেন সরকারি কর্মকর্তারা৷ দ্বিতীয় তলার এক পাশে সোনালী ব্যাংক রুমা শাখা৷ আরেক পাশে থাকেন ব্যাংকের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ১০ জন পুলিশ সদস্য৷ ডাকাতরা প্রথমে উপজেলা পরিষদ মসজিদে ঢুকে ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপককে ধরে নিয়ে যায়৷ তারপর তারা ব্যাংকের ভল্ট খুলে টাকা লুট করে৷ টাকার পরিমাণ সম্পর্কে এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি৷
কেএনএফের সদস্যরা নগদ টাকা ছাড়াও দুটি এসএমজি (লাইট মেশিন গান) ও ৬০টি গুলি, ৮টি চীনা রাইফেল ও ৩২০টি গুলি, ৪টি শটগান ও ৩৫টি কার্তুজ লুট করে নিয়ে গেছে৷ব্যাংকের নিরাপত্তার দায়িত্বে ১০ জন পুলিশ সদস্য থাকলেও তাদের সবাইকে পাশের ব্যারাকে ঢুকিয়ে আটক করে ডাকাতি করা হয় বলে পুলিশ দাবি করেছে৷
এদিকে ওই ব্যাংকে আট জন আনসার সদস্যও দায়িত্বে ছিলেন৷ তাদের মধ্যে চারজন আহত হয়েছেন৷ ডাকাতির সময় ওই এলাকায় বিদ্যুৎ ছিল না এবং তারা উপজেলা পরিষদের সামনে বান্দরবান-রুমা সড়কে ব্যারিকেড দিয়ে দেয়৷ডাকাতি করে যাওয়ার সময় তারা ব্যাংকের ম্যানেজার মো. নিজাম উদ্দিনকে অপহরণ করে নিয়ে যায়৷ এখন পর্যন্ত ম্যানেজারকে উদ্ধার করা যায়নি৷
রুমা উপজেলা চেয়ারম্যান অংথোয়াইচিং মার্মা বলেন, ডাকাতির কিছুক্ষণ আগে পুরো এলাকার বিদ্যুৎ চলে যায়৷ডাকাত দল এক ঘণ্টার মতো ছিল৷ তারা চলে যাওয়ার পাঁচ মিনিট পর আবার বিদ্যুৎ চলে আসে৷ তারা ব্যাংক এবং পাশের সড়ক ও আশপাশ এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়৷ সড়কে তারা তল্লাশি করে৷ মোবাইল ফোন নিয়ে নেয়৷ ওই দলে শতাধিক সশস্ত্র ব্যক্তি ছিল৷ তারা কুকি-চীনের কেএনএফ লেখা পোশাক পরা ছিল৷ মুখ ছিল কালো রং এবং মুখোশে ঢাকা৷ তারা ডাকতির আগেই ব্যাপক গুলি ছোঁড়ে৷
তিনি বলেন, ব্যাংকের নিরাপত্তায় পুলিশ, আনসার সবই ছিল৷ তবে আগেই তাদের নিরস্ত্র করে ফেলে ডাকাতরা৷
বান্দরবানের পুলিশ সুপার সৈকত শাহীন বলেন, দুই থানায় ব্যাংকের তিনটি শাখায় ডাকাতির ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে৷ তবে কেউ গ্রেপ্তার হয়নি৷ সেনা, বিজিবি ও পুলিশ মিলে যৌথ বাহিনীর অভিযান চলছে৷
ব্যাংকের নিরাপত্তার প্রশ্নে তিনি বলেন, রুমায় ডাকাতির সময় বিদ্যুৎ ছিল না৷ ফলে পুলিশ কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাদের নিরস্ত্র করে ফেলে৷ আর থানচিতে পুলিশ প্রতিরোধ করেছে৷ আমাদের একজন পুলিশ সদস্য কয়েক রাউন্ড গুলিও ছুঁড়েছে৷ তাদের প্রতিরোধের কারণেই ডাকাতরা ব্যাংকের ভল্ট ভাঙতে পারেনি৷ তারা বাইরে যে টাকা ছিল তা নিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়৷
পুলিশের আইজি বলেন, তারা ব্যাংক লুট করেছে৷ আনসার, পুলিশের অস্ত্র নিয়েছে এবং সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজারকে নিয়ে গেছে৷ আমরা দেখছি৷ অস্ত্রগুলো কোথায় আছে খুঁজে দেখবো এবং এর সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ কঠিন ব্যবস্থা নেওয়া হবে
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available