খুলনা ব্যুরো: খুলনা মেডিক্যাল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ওষুধ ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষের ঘটনায় হামলাকারীদের গ্রেফতারের দাবিতে ৩য় দিনের মতো অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি অব্যাহত রেখেছে খুমেক ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। এছাড়া একই দাবিতে ধর্মঘট চালিয়ে যাচ্ছে হাসপাতালের সামনের ওষুধের দোকানীরাও। এতে রোগী ও তাদের স্বজনদের দুর্ভোগ আরও বেড়েছে।
শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় খুলনা মেডিকেল কলেজের সচিব মো. মনিরুজ্জামান বাদী হয়ে ১৬ আগস্ট বুধবার রাতে নগরীর সোনাডাঙ্গা থানায় মামলা দায়ের করেছেন। এ মামলায় চারজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ৫০ জন ওষুধের দোকানীকে আসামি করা হয়েছে।
মামলা দায়েরের পর রাতেই সোনাডাঙ্গা থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে বিপ্লব ফার্মেসির মালিক মাহমুদুর রহমান বিপ্লব ও আবিদ ফার্মেসির কর্মচারী মীর বায়েজিদকে গ্রেফতার করেছে।
এদিকে হামলাকারীদের গ্রেফতারসহ তিন দফা দাবিতে ২য় দিনের মতো ক্লাস বর্জন কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছে খুলনা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা। ১৭ আগস্ট বৃহস্পতিবার বেলা ১২টায় হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে তারা।
দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন পরিষদের সভাপতি ডা. সাইফুল ইসলাম অন্তর। বৃহসপতিবার কর্মবিরতি চলাকালে তিনি বলেন, ঔষধ ব্যবসায়ীদের হামলায় ১৫ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। এই হামলাকারীদের গ্রেফতারসহ তিন দফা দাবিতে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতি চলছে। এছাড়া শিক্ষার্থীরা খুলনা মেডিকেল কলেজের সকল ক্লাস বর্জন ২য় দিনের মত অব্যহত রেখেছে।
অন্যদিকে সংঘর্ষের পর পরই বন্ধ রয়েছে খুলনা মেডিকেলের সামনে ওষুধের ৯০টি দোকান। ঔষধ ব্যবসায়ীদের ওপর হামলা ও ফার্মেসী ভাংচুরের প্রতিবাদে টানা ৩য় দিনের মত দোকানদাররা এই ধর্মঘট পালন করছে। হামলাকারী মেডিকেল শিক্ষার্থীরা গ্রেফতার না হওয়া পর্যন্ত ধর্মঘট চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তে অনড় রয়েছে বাংলাদেশ কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির খুলনা শাখা।
সমিতির সহ-সভাপতি এসএম কবীর উদ্দিন বাবলু বলেন, হামলায় তাদের ১০ থেকে ১২ দোকান মালিক ও কর্মচারী আহত হয়েছে। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন ডাক্তার ও ঔষধ ব্যবসায়ীদের পাল্টা পাল্টি ধর্মঘটে চরম বিপাকে পড়েছ বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনরা। দুই পক্ষের বিরোধের কারণে এখন দুর্ভোগে পড়েছে এ সব মনুষ। গত সোমবার মধ্য রাত থেকে রোগী দেখা বন্ধ করে দিয়েছে ইন্টার্নি চিকিৎসকরা। মেডিকেলের সামনের দোকান বন্ধ থাকায় রোগীর স্বজনদের দূর-দূরান্তে ওষুধ কিনতে যেতে হচ্ছে । এতে একদিকে যেমন অতিরিক্ত সময় লাগছে, তেমনি অর্থও ব্যয় হচ্ছে।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. রবিউল হোসেন জানান, শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী শিগগিরই হাসপাতালে মডেল ফার্মেসি চালু করা হবে। হামলাকারীদের গ্রেফতার ও হাসপাতালের মধ্যে পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপনের বিষয়ে তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছেন।
বুধবার রাতে আহত শিক্ষার্থীদের দেখতে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক ও খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল। এ সময় তিনি হামলাকারীদের গ্রেফতারের জন্য পুলিশ প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন বলে শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করেন।
উল্লেখ্য, গত সোমবার রাতে খুলনা মেডিকেলের সামনে বিপ্লব মেডিসিন কর্নারে ওষুধ কিনতে যান মেডিকেলের শিক্ষার্থী হাসান ফেরদৌস। এক পাতা ওষুধের দাম ৭০ টাকা দোকানী জানালে হাসান ফেরদৌস ১০ শতাংশ কমিশন বাদ দেয়ার অনুরোধ জানায়। এ নিয়ে বাকবিতন্ডের একপর্যায়ে দোকান মালিক বিপ্লবের সঙ্গে তার কথা কাটাকাটি হয়। এরপর ওই শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে গিয়ে জানালে অন্য শিক্ষার্থীরা ঔষধের দোকানে আসে। একপর্যায়ে ওষুধের দোকানীদের সঙ্গে ছাত্রদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available