খায়রুল ইসলাম পলাশ, রাজাপুর (ঝালকাঠি) প্রতিনিধি: গ্রামীণ সংস্কৃতিতে শীতের দিনে শুরু হয় খেজুর গাছ হতে রস সংগ্রহের ধুম। গ্রামীণ জনপদের ঘরে ঘরে চলে খেজুর রসের সমারোহ। কিন্তু গ্রামে এখন লেগেছে শহুরে ছোঁয়া। শহরায়নের আগ্রাসনে প্রকৃতির ঐতিহ্য খেজুর গাছ দিনে দিনে হারিয়ে যাচ্ছে। দিন যত যাচ্ছে খেজুর গাছও তত কমছে, দেখা মিলছেনা রসেরও।
উপজেলার কিছু জায়গায় দেখা মিলে বিলুপ্তিপ্রায় খেজুর গাছের। যেসব স্থানে এক সময় রাস্তার দুই পাশে সারিবদ্ধভাবে অসংখ্য খেজুর গাছ দেখা যেতো। সেসব স্থানে এখন খেজুর গাছ নেই বললেই চলে। গ্রামের কোনো কোনো সড়কের পাশে কিছু গাছ থাকলেও তাতে তেমন রস হয় না বলে জানান, রস সংগ্রহকারী গাছিরা।
শীত আসার পরেই রস সংগ্রহের জন্য কাটা হয় খেজুর গাছ। গাছের অগ্রভাগের একপাশে বেশ খানিকটা কেটে পরিষ্কার করা হয়। পরে বাঁশের কঞ্চি কেটে কাঠি তৈরি করে গেঁথে দেওয়া হয়। তার ঠিক নিচেই ঝোলানো হয় মাটির হাঁড়ি কিংবা প্লাস্টিকের বোতল। গাছের কাটা অংশ বেয়ে রস কাঠির মাধ্যমে ফোঁটায় ফোঁটায় হাঁড়ি ও বোতলে এসে জমা হয়।
ঠান্ডা আবহাওয়া, মেঘলা আকাশ আর কুয়াশাচ্ছন্ন সকাল পর্যাপ্ত রসের জন্য উপযোগী। এ সময়ে প্রাপ্ত রসের স্বাদও ভালো থাকে। কাক ডাকা ভোরে খেজুরের রস, মন মাতানো ঘ্রাণ গ্রামীণ জনপদে বিরল। শীতের সকালে খেজুর রস, মিষ্টি রোদ, কৃষক-কৃষাণির হাসি দারুণ প্রাণশক্তি।
বিলুপ্তির পথে গ্রামীণ এই ঐতিহ্য খেজুর গাছ তাই দেখা দিয়েছে রসের সংকট। একসময় গ্রামীণ জনপদে খেজুর রস নিয়ে পায়েস পিঠার উৎসব, গভীর রাতে হাঁড়ি থেকে চুরি করে রস খাওয়া অনেকের শৈশবের স্মৃতি হয়ে আছে আজো। তবে এখনো চোখে পড়ে গাছে গাছে ঘুরে পাখ-পাখালির রস খাওয়ার দৃশ্য।
গাছ কমলেও কমেনি খেজুর রসের গ্রাহক সংখ্যা। রসের দাম বেড়েছে কয়েকগুন। ঐতিহ্যবাহী কিছু গাছের মধ্যে খেজুর গাছ ছিল অন্যতম। খেজুরের রস ও খেজুরের মিঠা (রাভ মিঠা) গন্ধে গ্রামীণ জনপদ মৌ মৌ করতো। শীত আসলেই গাছিরা ব্যস্ত হয়ে পড়তো খেজুর গাছ রসের উপযোগী করতে পরিষ্কারের কাজে। এতে গাছিরা এই সময় অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতেন। বিভিন্ন পিঠা, পুলি ও পায়েসসহ নানা প্রকার খাবার তৈরির জন্য খেজুরের রস ছিল অন্যতম উপাদান।
বেলাল তালুকদার, মন্নান তোহা ও নাসিরসহ কয়েকজন গাছির সাথে কথা বলে জানা যায়, তাদের পূর্ব পুরুষরা আগে খেজুর গাছ কাটতো। এখন তারা কাটে। আগের তুলনায় এখন অনেক গাছ কমে গেছে, রসও তেমন হয় না। তাই গ্রাহকদের চাহিদা মতো রস সরবারহ করা যাচ্ছে না। বিভিন্ন কারণে খেজুর গাছ কর্তন, মরে যাওয়া, তদারকির অভাব এবং নতুন চারা রোপণ না করাই খেজুর গাছ বিলুপ্তির প্রদান কারণ।
কবির তালুকদার, লাভলি আক্তারসহ কয়েকজন রস গ্রাহক জানায়, আগের তুলনায় বেশি টাকা দিয়েও মিলছে না চাহিদামত রস। গ্রামেও এখন শহুরে ছোঁয়া। শীতের পিঠা ও রসের গুড় এখন আর খাওয়া হয় না বললেই চলে। নতুন প্রজন্ম হয়তো খেজুর গাছ ও খেজুরের রসের কথা ভুলেই যাবে।
এ বিষয়ে এশিয়ান টিভি অনলাইনের সাথে কথা হয় রাজাপুর উপজেলা কৃষি অফিসের উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ অফিসার মোহাম্মদ মেহেদী হাসানের সাথে।
তিনি জানান, আমাদের এ অঞ্চলে রেইনট্রি ও চাম্পল গাছ বেশি রোপণ করায় এবং গরু-ছাগলের অবাধ বিচরণের কারণে দিনে দিনে খেজুর গাছ কমে যাচ্ছে। কৃষি অফিসের উদ্দ্যোগে খেজুরের বীচ ও চারা রোপণের জন্য প্রায়ই সভা সেমিনারের মাধ্যেমে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করা হয়ে থাকে।
তিনি আরও জানান, এ ছাড়াও বিভিন্ন কারণে খেজুর গাছ কর্তন, মরে যাওয়া, তদারকির অভাব এবং নতুন চারা রোপণ না করাই খেজুর গাছ বিলুপ্তির কারণ।
উল্লেখ্য, গ্রামবাংলার ঐতিহ্য এই খেজুরগাছ আজ অস্থিত্ব সঙ্কটে। যে হারে খেজুরগাছ নিধন হচ্ছে সে তুলনায় রোপণ হয় না।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available