কুয়াকাটা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি: কুয়াশার চাদরে মোড়ানো শীতের প্রধান আকর্ষণ হিমশীতল খেজুরের রস। শীতের মৌসুমে এর সাথে আর কিছুর তুলনাই হয় না। শীতকাল আসতেই খেজুর রসের ঘ্রাণ ও স্বাদ নেওয়ার একরকম প্রতিযোগিতা শুরু হয়। এর স্বাদ ও ঘ্রাণ অনেক মিষ্টি, প্রচলিত খাদ্য হিসেবে খেজুরের রস বেশ সস্তা, পুষ্টিকর এবং উপাদেয়।
পৌষ-মাঘ মাসে (ডিসেম্বর-জানুয়ারি) থেকেই গাছ কাটছেন কলাপাড়া উপজেলার ডালবুগঞ্জ ইউনিয়নের গাছি ইদ্রিস মৃধা। তিনি এই বছরে ৭০টির বেশি গাছ থেকে রস সংগ্রহ করছেন। বছরে ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকার রস সংগ্রহ করেন। তবে পরিশ্রমের তুলনায় লাভ খুব কম। তিনি আরও বলেন, এই সময়ে সবচেয়ে বেশি রস পাওয়া যায় সাধারণত ঠাণ্ডা আবহাওয়া, কুয়াশাচ্ছন্ন পরিবেশে। তখন এর স্বাদও ভালো হয়। তাপমাত্রা বাড়লে খেজুর গাছ থেকে নির্গত রসের পরিমাণ কম হয় এবং এর স্বাদও কমে যায়।
কলাপাড়ার আরেক গাছি আবদুর রাজ্জাক বলেন, গাছের মাথার অংশকে ভালো করে পরিষ্কার করা হয়। নভেম্বর মাসের মাঝামাঝিতে গাছ পরিষ্কার করতে হয়। গাছ পরিষ্কার করার ১৫-২০ দিন পর গাছ ছাটতে হয়। ছাঁটা যে অংশে রস নিঃসরণ হয় সে অংশে চিকন ৭-৮ ইঞ্চি লম্বা বাঁশের কঞ্চি আধা ইঞ্চি ঢুকিয়ে দিতে হয়। কাঠির মধ্যে দিয়ে ফোটায় ফোটায় নির্গত রস গাছে ঝুলানো হাঁড়িতে জমা হয়। গাছ একবার ছাঁটলে ৩-৪ দিন রস সংগ্রহ করা যায় এবং পরবর্তীতে ৩ দিন শুকাতে হয়। এরপর আবার হালকা ছেঁটে পুনরায় রস সংগ্রহ করা যায়। তিনি আরও বলেন এক সময় গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে জীবিকা নির্বাহ করলেও এখন তিনি শুধু নাতি-নাতনিদের জন্যই গাছ কাটেন। কারণ, পরিশ্রমের তুলনায় লাভ খুব কম।
শীত মৌসুমে গাছিরা রস সংগ্রহের জন্য সাধারণত বিকেল বা সন্ধ্যায় গাছে হাঁড়ি প্লাস্টিকের বোতল ঝোলান এবং খুব ভোরে পাত্রে জমাকৃত রস সংগ্রহ করেন। খেজুরের রস সাধারণত ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সংগ্রহ করা যায়।
একসময়ে কলাপাড়া উপজেলার মেঠোপথে গাছে গাছে হাঁড়ি দেখা গেলেও সময়ের পরিবর্তনে কমে গেছে খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করা। তবে এখনও কেউ কেউ ধরে রেখেছেন বাপ-দাদার এই ঐতিহ্য।
কলাপাড়া উপজেলা মেডিকেল অফিসার জেইস খান লেলিন বলেন, খেজুরের কাঁচা রস পান করলে নিপাহ ভাইরাস ছড়ানোর আশঙ্কা থাকে। তাই কাঁচা রস পান করা উচিত নয়।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available