বাজিতপুর (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি: কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরে পিতাকে হত্যার দায়ে পুত্রসহ চারজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
২০ অক্টোবর সকাল ১১টার দিকে উপজেলার পিরিজপুর ইউনিয়নের সুলতানপুর গ্রামের একটি ধানক্ষেতে হাত-পা বাঁধা গলা কাটা অবস্থায় কৃষক নিবু মিয়া (৬৫) নামে এক ব্যক্তির মরদেহ পরে থাকতে দেখে স্থানীয়রা। খবর পেয়ে দুপুরের দিকে মরদেহটি উদ্ধার করে পুলিশ।
নিহত নিবু মিয়া (৬৫) বাজিতপুর উপজেলার সুলতানপুর গ্রামের মৃত সুন্দর আলির ছেলে। তার চার ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে। ঘটনার পরপরই নিহতের ছোট ছেলে আব্দুর রহমান হৃদয় বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামি দিয়ে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছিলেন। কে বা কারা হত্যা করেছে এ নিয়ে কোনো ক্লু না থাকায় এলাকায় চাঞ্চল্যকর ঘটনার সৃষ্টি হয়।
প্রতিবেশী কারও সাথে পূর্বশত্রুতার কোনো তথ্যও জানা যায়নি। তিনি সহজ সরল ও কৃষি কাজ করতেন। তিনি মুঠোফোন পর্যন্ত চালাতেন না।
অবশেষে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে প্রচেষ্টা চালায়। এ ঘটনায় নিহতের এক ছেলেসহ মোট চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য আটক করে বাজিতপুর থানার পুলিশ। পরে তারা হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন।
গ্রেফতাররা হলেন- নিহত নিবু মিয়ার ছেলে সোহেল মিয়া (২৪)। তার তিন বন্ধু ইলেকট্রিশিয়ান বাবুল মিয়া (৩২), কসাই নজরুল ইসলাম (৪৫) ও রাজমিস্ত্রী সুমন মিয়া (২৬)।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, মামলা দায়েরের পর প্রযুক্তিগত ও গোপন তথ্যের ভিত্তিতে উপজেলার দক্ষিণ পিরিজপুর বাজার এলাকার আ. হাই মেম্বারের হোটেল থেকে হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকার সন্দেহে আসামি মো. বাবুল মিয়াকে প্রথমে আটক করা হয়। আটক বাবুল মিয়া স্বীকারোক্তি দেয় নিবু মিয়ার সাথে থাকা ৭০ হাজার টাকার জন্য তাকে খুন করেছেন তারা। পরে তার দেওয়া তথ্য মতে হত্যাকাণ্ডে সাথে জড়িত নিহত নিবু মিয়ার ছেলে সোহেল মিয়াসহ আরও ৩ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তারের পর পুলিশের কাছে জবানবন্দিতে পিতাকে জবাই করে হত্যার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন ছেলে সোহেল মিয়া।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, এক বছর আগে নিহত নিবু মিয়া জমি বিক্রি করেন ২১ লাখ টাকা। সেই টাকা হতে ৬ লাখ টাকা দিয়ে তার ছোট ছেলে সোহেল মিয়াকে বিদেশে পাঠায়। কিন্তু সোহেল বিদেশে থেকে ছয় মাস পর দেশে চলে আসলে পারিবারিকভাবে বিয়ে করেন তিনি। সংসার চালাতে এনজিওর কাছ থেকে ঋণ নিয়ে পুরাতন অটোরিকশা কিনেন সোহেল। কিন্তু সোহেল তার বাবার কাছে জমি বিক্রির আরও যে টাকা ছিল তা তাকে দেওয়ার জন্য চাপ দেয়। এই টাকা নিয়ে তাঁদের মধ্যে ঝামেলা সৃষ্টি হয়। এ জন্য নিবু মিয়া সব সময় টাকাগুলো তার সাথে সাথে রাখতেন। ঘটনার দিন তার বাবার কাছ থেকে টাকাগুলো নেওয়ার জন্যই সে তার বন্ধুদের নিয়ে বাবা নিবু মিয়াকে হাত পা বেঁধে জবাই করে হত্যা করেন।
পুলিশ সূত্রে আরও জানা যায়, এ হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত আটক বাবুল মিয়া আদালতে ১৬৪ ধারা জবানবন্দি দিয়েছেন এবং টাকার জন্য নিবু মিয়ার ছেলে সোহেল মিয়া তাদেরকে নিয়ে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলেও জবানবন্দিতে জানিয়েছে বাবুল মিয়া।
এ বিষয়ে বাজিতপুর থানার ওসি মুরাদ হোসেন জানান, এটি একটি ক্লুলেস মার্ডার ছিল। পুলিশ তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ও নিজস্ব বিভিন্ন কলাকৌশলে হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত আসামিদের ধরতে সক্ষম হয়েছে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available