টাঙ্গাইল প্রতিনিধি: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি ভিডিওতে গুলিবিদ্ধ সন্তানকে দেখতে পেয়ে চিৎকার করে কাঁদছেন বাবা-মা। বাবা-মার চিৎকারে ভারী হয়ে উঠেছে এলাকা। সন্তানকে জীবিত বা মৃত খুঁজে এনে দেওয়ার অনুরোধ করছেন তারা।
পরিবারের দাবি, নিখোঁজ সন্তানকে গাজীপুরের কোনাবাড়ি এলাকায় ১০-১২ জন পুলিশ ঘেরাও করে বুকে বন্দুক ঠেকিয়ে গুলি করার পর চ্যাংদোলা করে উঠিয়ে নেয়ার একটি ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। সেই ভিডিও দেখে আমরা শনাক্ত করতে পেরেছি, ওটাই আমাদের হৃদয়। পরনের পোশাক ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা মতে, আমরা নিশ্চিত গুলিবিদ্ধ মেধাবী ছাত্র হৃদয় হোসেন।
হৃদয় হোসেন টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার আলমনগর মধ্যপাড়ার কৃষক লাল মিয়ার একমাত্র পুত্র। তারা তিন ভাই বোন। হৃদয় হোসেন দুই বোনের ছোট।
হৃদয় হোসেন ২০২২ সালে এসএসসি পাসের পর হেমনগর ডিগ্রী কলেজে ভর্তি হয়। পড়াশোনার পাশাপাশি দারিদ্র্যের কারণে পাঁচ মাস আগে থেকে গাজীপুরের কোনাবাড়ীতে অটো রিকশা চালিয়ে উপার্জন শুরু করেছিল।
হৃদয়ের মা রেহানা বেগম বিলাপ করে বলেন, ‘পরনের পোশাক দেখে নিশ্চিত হয়েছি, ওটাই ছিল আমার হৃদয়। আহারে আমার হৃদয়রে ওরা কীভাবে মারতেছ!’ এই বলেই তিনি অচেতন হয়ে যান।
শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর, ৫ আগস্ট বিকালে সারা দেশের ন্যায় গাজীপুরের কোনাবাড়ীতে বিজয় মিছিলে অংশ নেয় সাধারণ মানুষ। পরিবারের দাবি, সেখান থেকে নিখোঁজ রয়েছে হৃদয়। একই দিন বিকেল ৫টায় শরীফ জেনারেল হাসপাতাল (প্রা.) লি. এর গেইট সংলগ্ন এলাকায় ১০-১২ জন পুলিশ ঘেরাও করে একজনের বুকে বন্দুক ঠেকিয়ে গুলির পর চ্যাংদোলা করে উঠিয়ে নেয়ার একটি ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়।
হৃদয়ের ভগ্নিপতি মো. ইব্রাহিম হোসেন বলেন, ‘আমরা দুজন এক বাসায় থাকতাম। ওই সময় আলাদা স্থানে ছিলাম, মিছিলে গুলির ঘটনায় আমি কোনাবাড়ী মেট্রো থানা সংলগ্ন একটি বাসায় আশ্রয় নেই। ঐ বাসার গেইটে দূর থেকে দেখতে পাই। ৪ জন পুলিশ গুলিবিদ্ধ একজনকে চ্যাংদোলা করে থানার সামনে নিয়ে বেঞ্চের আড়ালে লুকিয়ে রাখে। হৃদয়ের মতো দেখতে ও পোশাক হলেও গুলির ভয়ে তখন কাছে যাইনি। পরে শুনি রাত ৩টায় সব পুলিশ পালিয়ে গেছে। এরপর বিভিন্ন হাসপাতাল ও মর্গে খোঁজাখুঁজি করেও তাকে পাওয়া যায়নি। ঘটনাস্থল থেকে হৃদয়ের পরনের লুঙ্গি পেয়েছি।’
আলমনগর ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য আ. হামিদ বলেন, ‘ওই ঘটনার একটু দূরেই আমার দোকান রয়েছে। গুলির ঘটনার পর প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজনের বর্ণনায় নিশ্চিত হয়েছি, ওটাই হৃদয়।’
হৃদয়ের বাবা লাল মিয়া বলেন, ‘ছেলেকে অনেক খোঁজাখুঁজি করেছি। অটোরিকশা গ্যারেজ মালিক হাফিজুর রহমান ভাইয়ের সাথে কথা হয়, তখন তিনি বলেন হৃদয় মিছিলে ছিলো না। আমার গ্যারেজ থেকে বাসায় ফেরার সময় পুলিশের ধাওয়ায় দুই বিল্ডিংয়ের মাঝে আশ্রয় নিয়েছিল। সেখান থেকে ধরে এনে গুলি করেছে পুলিশ। অনেকেই মোবাইলে সেই ভিডিও ধারণ করে। আমার গ্যারেজের সামনে দিয়ে টেনে নিয়ে যাওয়া হয় হৃদয়কে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available