রাজস্থলী (রাঙামাটি) প্রতিনিধি: রাঙ্গামাটির রাজস্থলী উপজেলার ব্যবসায়ী পরিচয়ে রাজস্থলী বাজারের বিভিন্ন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর কাছ থেকে প্রায় ২০ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়ে যীশু নামের এক প্রতারক গা ঢাকা দিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তার প্রতারণার খপ্পরে পরে ৬-৭ জন ব্যবসায়ী সর্বসান্ত হয়ে পড়েছেন।
১ ফেব্রুয়ারি ব্যবসায়ী সঞ্জয় বণিক, সাজু বনিক, দেবাশিষ দাশ, সুজনঘোষ, নয়নদাশ, সুব্রত নাথ ও খান ফার্মেসির মালিক ইউসুফ খান এমন অভিযোগ করেন রাজস্থলী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান উবাচ মারমার বরাবরে। দ্রুত প্রতারক যীশুকে টাকা আদায়সহ দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন তারা।
জানা গেছে, চট্রগ্রাম জেলার রাঙুনিয়া উপজেলার শান্তি নিকেতন এলাকার মৃত সনাতন সাহার ছেলে কাঠ ব্যবসায়ী হিসেবে এলাকায় পরিচয় দেন। ওই পরিচয়ে তিনি গত দুই বছর ধরে এলাকার বিভিন্ন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ড্র সমিতি নামক প্রতিষ্ঠান খোলার কথা বলে অন্তত ২০ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেন। ব্যবসায়ীরা তার কাছে টাকা চাইলে সে আজ দেব কাল দেব আগামী মাসে দেব বলে ফাকি দিয়ে আসছে, এমন কি কয়েকজন ব্যবসায়ীকে চেক প্রদান করেন যীশু। এতে ব্যবসায়ীরা নিরুপায় হয়ে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে চেয়ারম্যান তাকে হাজির হওয়ার জন্য নোটিশ দিলেও সে উপস্থিত হতে গরিমসি করে। এক পর্যায়ে যীশুর পাশ্ববর্তী অংসাইনু মারমার মারফতে ডাকা হলে তিনি এসে হাজির হয়ে উল্টা পাল্টা আচরণ শুরু করে এবং অভিযোগ কারীদের পাওনা টাকার কথা সম্পর্কে শিকার করে। পরবর্তীতে টাকা পরিশোধ করবে বলে একটি ৩০০ টাকার স্ট্যাম্পে মুচেলেখা দেন। এ বিষয় নিয়ে কিছু দিন যেতে না যেতে যীশু সাহা বিচারক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান উবাচ মারমা, ২নং গাইন্দ্যা ইউপি চেয়ারম্যান পুচিংমং মারমা, ৩২৮নং পৌয়তু মৌজার হেডম্যান ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান উথিনসিন মারমা ও ব্যবসায়ী সজ্ঞয় বনিকের বিরুদ্ধে রাঙামাটি আদালতে মারধরের মামলা করেন। তবে অভিযোগ কারিরা একই সম্প্রদায়ের, তারা ঘটনার সত্যতা যাচাই বাচাই করে প্রতারক যীশুকে আইনের আওতায় এনে টাকা আদায়ের ব্যবস্থা করার জোর দাবি জানান।
ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী দেবাশীস দাশ বলেন, যীষু আমার কাছ থেকে ৮৮ হাজার ৫০০ টাকা নিয়েছে, টাকা চাইলে তিনি একই কথা বলেন এবং আমাকে দুইটি ফাস্ট সিকিউরিটি ইসলামী চন্দ্রঘোনা শাখার ব্যাংকের চেক দেন। আমি সময় অনুযায়ী ব্যাংকে যোগাযোগ করলে তার একাউন্টে কোনো টাকা না থাকায় আমি তার প্রতারণার শিকার হয়েছি। কোনো উপায় না দেখে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বরাবরে একটি লিখিত আবেদন করি।
ইমা জুয়েলার্সের মালিক সাজু বনিক বলেন, আমার থেকে ৭ লাখ ৩০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারক যীষু সাহা। এখন সে লাপাত্তা। ফোন দিলেও রিসিভ করে না। কোনো উপায় না পেয়ে আমরা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের নিকট আবেদন করি।
আরেক ফার্মেসির মালিক সুজন ঘোষ বলেন, ড্র সমিতির কথা বলে টাকা নিয়েছে। এখন তাকে খুঁজে পাচ্ছি না। তাকে না পাওয়াতে আমরা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত অভিযোগ করি টাকা আদায়ের জন্য।
দিন মজুর নয়ন দাশ বলেন, ড্র সমিতি দেওয়ার কথা বলে আমার কাছ থেকে ৬৯ হাজার টাকা নিয়েছে। মানুষের কাছ থেকে ধার এনে টাকা দিয়েছি। এখন কী করব বুঝতে পারছি না। আমি প্রতিদিন লেবারের কাজ করি, কীভাবে টাকা শোধ করব।
এ বিষয়ে যীষুর সাথে মোবাইলে কথা হলে তিনি টাকার বিষয়টি এড়িয়ে চলে এবং বলে এটি সমিতির বিষয়। ইউসুফ খান টাকা পাবে কী না জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ইউসুফ খানের সাথে আমার কথা হয়ছে।
ভুক্তভোগীরা আরো জানান, আমরা উপজেলা চেয়ারম্যানের কাছে বিচারের জন্য গেলে তিনি উল্টো মামলার শিকার হন। ফলে কোনো সুরহা না পেয়ে রাজস্থলী থানায় মামলা করতে গেলে অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ইকবাল হোসেন বলেন, এটা চেক প্রতারণা মামলা, তাই আদালতের মাধ্যমে মামলা দায়ের করতে হবে। তিনি আমাদেরকে আদালতে অভিযোগ দাখিল করতে বলেন।
বিষয়টি নিয়ে ওসির সাথে কথা হলে তিনি বলেন, কিছু ব্যবসায়ী থানায় মামলা করার জন্য আসছিলো। আমি তাদের আদালতে মামলা দায়ের করার জন্য বলি। কারণ, এটা চেক প্রতারণা মামলা।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available