রৌমারী ( কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি: দৈনিক সংবাদ পত্রিকার কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলা প্রতিনিধি আনিছুর রহমানের ওপর হামলার ঘটনায় থানায় অভিযোগ দিতে গেলে ঘুষ দাবি করা হয়েছে। ডিউটি অফিসারের দায়িত্বে থাকা এক পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ উঠে। ঘুষের টাকা না পেয়ে পুলিশ মামলা নিতে গড়িমসি করছে বলে অভিযোগ করেন নির্যাতনের শিকার ওই সাংবাদিক।
অন্যদিকে সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনার খোঁজখবর নিতে থানায় গেলে সাখাওয়াত হোসেন শাখা নামে স্থানীয় আরেক সাংবাদিককে লাঞ্ছিত এবং দেখে নেওয়ার হুমকি দেন রৌমারী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মুশাহেদ খান। এ নিয়ে কুড়িগ্রাম পুলিশ সুপারের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ওই সাংবাদিক।
মামলা নিতে কৌশলে ঘুষ দাবি করার অভিযোগ ওঠা রৌমারী থানা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) আনছুর আলীকে পুলিশ লাইনসে ক্লোজড করা হয়েছে। এসআই আনছুর নিজেই এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তবে ঘুষ দাবি করার অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।
জানা গেছে, ২ এপ্রিল মঙ্গলবার রাতে তারাবির নামাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে যাদুরচর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শাখাওয়াত হোসেন সবুজের নেতৃত্বে স্থানীয় মাদক কারবারিরা সাংবাদিক আনিছুর রহমানের ওপর হামলা চালান। তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যার চেষ্টা করা হয়। স্থানীয়রা আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। এ ঘটনায় রাতেই ওই সাংবাদিক বাদী হয়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে রৌমারী থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেন। অভিযোগ দেওয়ার তিন দিন পার হলেও তা মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করেনি পুলিশ।
হামলার শিকার সাংবাদিক আনিছুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, ‘মঙ্গলবার (ঘটনার দিন) রাতেই লিখিত অভিযোগ নিয়ে রৌমারী থানার দায়িত্বরত উপপরিদর্শক (এসআই) আনছুর আলীর কাছে গেলে তিনি মামলা নিতে আমার কাছে টাকা দাবি করেন। আমি ঘুষের টাকা না দেওয়ায় পুলিশের অসাধু সদস্যরা মাদক কারবারিদের সঙ্গে আঁতাত করে মামলা নিচ্ছে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘হামলা করার পর এখনও প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছেন অভিযুক্তরা। আর ঘুষ না দেওয়ায় মামলা নিচ্ছে না পুলিশ।’
আনিছ বলেন, ‘অভিযোগ নিয়ে গেলে ডিউটি অফিসার এসআই আনছুর আলী বলেন, যখন আপনে পাম (ঘুষ) দিবেন তখন আমি ফুলবো (কাজ করা), আর পাম না দিলে ঝিমায়ে থাকবো, এটা সংক্ষেপে বুঝে নিয়েন। আসামি ধরতে চিপাচাপায় যাইতে হইবো, উপরেও কিছু দিতে হইবো।’
তবে এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এসআই আনছুর। তিনি বলেন, ‘আমি এমন কথা বলি নাই। থানায় একটা গেদারিং হইছিল। ওখানে যারা গেছিল তাদের জিগায় দেখেন। আমাকে ক্লোজড করছে। আমি এখন পুলিশ লাইনে যাচ্ছি।’
এদিকে, আরেক সাংবাদিক সাখাওয়াত হোসেন শাখা অভিযোগ করে জানান, মাদক কারবারি কর্তৃক হামলার শিকার সাংবাদিক আনিছুর রহমানের বিষয়ে সংবাদ সংগ্রহ করতে ৩ এপ্রিল বুধবার দুপুর ১টার দিকে রৌমারী থানায় যান তিনি। গিয়ে জানতে পান নির্যাতিত সাংবাদিক আনিছুর রহমানের দায়ের করা অভিযোগটি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) অবহিত না করে গোপন রেখেছেন দায়িত্বরত এসআই আনছুর রহমান এবং ওই সাংবাদিকের কাছে ঘুষ দাবি করা হয় (যার একটি ভিডিও ফুটেজ হাতে রয়েছে)।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এএসআই শফিকুল ইসলাম সাংবাদিক শাখাওয়াতকে উদ্দেশ করে বলেন, “পুলিশ পারে না এমন কোনও কাজ নাই।” পরে তাদের এমন মন্তব্যের বিষয়টি জানাতে ইন্সপেক্টর মুশাহেদের কক্ষে গেলে তিনি এবং এএসআই শফিকুল ইসলাম উত্তেজিত হয়ে অশোভন আচরণ করেন। এ সময় তারা ওই সাংবাদিকের মোবাইল ফোন ও ক্যামেরা কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। পরে তিনি কৌশলে থানা থেকে বের হয়ে ওইদিনই কুড়িগ্রাম পুলিশ সুপারের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ করেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে ইন্সপেক্টর মুশাহেদ খানকে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
সাংবাদিক আনিছের অভিযোগটি মামলা হিসেবে নথিভুক্ত না করার বিষয়ে রৌমারী থানার ওসি আব্দুল্লা হিল জামান বলেন, ‘অভিযোগটি যে ধারায় হয়েছে তাতে তা মামলা হিসেবে না নিয়ে সাধারণ ডায়েরি হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
পুলিশ সুপার আল আসাদ মো. মাহফুজুল ইসলাম বলেন, ‘আমি সবগুলো অভিযোগ নিবিড়ভাবে খতিয়ে দেখছি। কারও বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পেলে আমরা কোনও ছাড় দেবো না। সাংবাদিকের ওপর হামলার বিষয়ে ইতোমধ্যে ওসিকে গুরুত্বসহকারে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’ তবে অভিযুক্ত এসআই’কে ভিন্ন কারণে ক্লোজড করা হয়েছে বলে জানান পুলিশ সুপার।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available