নিজস্ব প্রতিবেদক: গত দুই দশকে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমা দেশগুলোর কূটনীতির প্রিয় কৌশল হলো ‘নিষেধাজ্ঞা দেওয়া’। যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্ব বিভাগের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২১ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ৯ হাজার ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান এবং কিছু খাতের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। ওই বছরই বাইডেন প্রশাসন বিশ্বব্যাপী আরও ৭৬৫টি নতুন নিষেধাজ্ঞা দেয়। বিভিন্ন সময়ে কোনো না কোনোভাবে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার তালিকায় যে দেশগুলো পড়েছে, বৈশ্বিক আর্থ-সামাজিক ইনডেক্সে দেখা যায়, বৈশ্বিক উৎপাদনে তাদের অবদান প্রায় এক–পঞ্চমাংশ। এই উৎপাদনের ৮০ ভাগের দাবিদার আবার চীন।
সাধারণত দেখা যায়, নিষেধাজ্ঞা আরোপকারী দেশগুলো নিজেদের বড়ো ধরনের ক্ষতি ছাড়াই নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ করে। কিন্তু ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ইউরোপীয় ইউনিয়ন মস্কোর ওপর যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, তা এই সূত্র মানছে না। দীর্ঘ সময় ধরে রাশিয়া থেকে আমদানিকৃত সস্তা জ্বালানি দিয়ে ইউরোপের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। বিকল্প হিসেবে এখন তারা যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য দেশ থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি শুরু করেছে, যার মূল্য পাইপলাইন গ্যাসের তুলনায় অনেক বেশি।
ফলে ইউরোপের আর্থিক বাজারে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশে অর্থনীতি সংকুচিত হয়ে পড়েছে। তাদের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে গেছে এবং নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহ হুমকির মুখে পড়েছে। ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রের প্ররোচনায় নিষেধাজ্ঞার ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো নতুন করে ভাববে। যুক্তরাষ্ট্র যে সকল দেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ করছে, ধীরে ধীরে সে সব দেশ চীন বলয়ে আসতে শুরু করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা আরোপিত দেশগুলোকে চীন বাণিজ্যিক সুবিধাসহ অন্যান্য সুবিধা দিয়ে নিজেদের কাছে টেনে নিচ্ছে। এতে যুক্তরাষ্ট্রকেন্দ্রীক বলয়ের প্রভাব যেমন কমছে, পাশাপাশি চিনা বলয় শক্তিশালী হচ্ছে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র কেন বারবার এই ভিসানীতির ভয় দেখায়। এর মূল কারণ যুক্তরাষ্ট্রের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে বিভিন্ন দেশ আলাদা বলয় শক্তিশালী করছে। এরইমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন বিশ্বব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ জানাতে ৪০টি দেশ ব্রিকসে যোগ দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত নিষেধাজ্ঞা পাওয়া দেশগুলোও রয়েছে।
এবিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান বলেন, ২০১৫ সালে ব্রিকসের নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এনডিবি) গঠন করা হয়, যার উদ্দেশ্য যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের মতো প্রতিষ্ঠানের বাইরে গিয়ে উন্নয়ন অর্থায়নের উপর বিকল্পভাবে নিয়ন্ত্রণ আনা। জোটটি ‘ব্রিকস পে’ তৈরিতে কাজ করছে, যার মাধ্যমে নিজস্ব মুদ্রা ডলারে রূপান্তর না করেই ব্রিকসের মধ্যে অর্থ লেনদেন করা যাবে। লেনদেনে ব্রিকস ডলারের বিকল্প হিসেবে নিজস্ব মুদ্রাব্যবস্থা চালু করলে একদিনেই যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে ধস নামিয়ে দেবে।
সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সি ফয়েজ জানান, ভারত মহাসাগর ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল যা ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল নামে পরিচিত। এ অঞ্চলটি বিশ্বের মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির ৬০ ভাগের অংশীদার। বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে দুই তৃতীয়াংশ অবদান এই অঞ্চলের। এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র রয়েছে; রয়েছে জাপান, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, ভারত ও বাংলাদেশের মতো ডজনখানেক দেশ। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে পারমাণবিক শক্তিধর দেশগুলোর পাশাপাশি রয়েছে অনেক উঠতি অর্থনৈতিক পরাশক্তির দেশ। একের পর এক নিষাধাজ্ঞার কবলে পরে ইন্দো প্যাসিফিক অঞ্চলের অনেক দেশ এখন যুক্তরাষ্ট্র থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে; ফলে ইন্দো প্যাসিফিক অঞ্চলে দিন দিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব কমে যাচ্ছে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available