মাহাবুর আলম, নোয়াখালী প্রতিনিধি: নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীতে সরকারি বরাদ্দের সেচ পাম্প গোপনে বিক্রির পর উদ্ধার করা হলেও এই ঘটনায় সপ্তাহ পার হলেও কোনো মামলা হয়নি। বর্তমানে সেচ পাম্পটি থানায় পড়ে থাকায় সুবিধা বঞ্চিত হচ্ছেন কৃষকরা।
মাঠ পর্যায়ের কৃষকদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা প্রদান প্রকল্পের আওতায় “তুষি-যুগী খিলপাড়া সমলয়” প্রজেক্টের ৫৬ জন কৃষকের মাঝে বীজ, সারসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দিয়ে আসছে উপজেলা কৃষি অফিস। ওই প্রজেক্টের জমিতে সেচের সুবিধার জন্য উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ নূরে আলম প্রজেক্ট সাধারণ সম্পদক মাহবুবুর রহমানের নিকট প্রজেক্ট শেষে ফেরত দেওয়ার শর্তে একটি ৬ কিলো ওয়াটের সেচ পাম্প প্রদান করেন।
কিন্তু কৃষকদের অভিযোগ, মাহবুবুর রহমান সেই সেচ পাম্প কৃষকদের না দিয়ে গোপনে জয়াগ বাজারের নিউ বিসমিল্লাহ এন্টার প্রাইজ নামের একটি দোকানে বিক্রি করে দেন। বিষয়টি জানতে পেরে নাছির উদ্দিন(৪৫) নামের এক কৃষক গত ২৯ ফেব্রুয়ারি উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা নূরে আলম মনির (৪৫), উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রাম মজুমদার (৪০), প্রজেক্ট সভাপতি লোকমান হোসেন টিটু (৪৫), সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান (৬০) ও নিউ বিসমিল্লাহ এন্টার প্রাইজ দোকানের মালিক মোহাম্মদ চৌধুরীকে আসামি করে থানায় লিখিত অভিযোগ দেন।
অভিযোগ পেয়ে সোনাইমুড়ী থানার এসআই আবু বক্কর সেই দিন রাতেই নিউ বিসমিল্লাহ এন্টার প্রাইজ নামের দোকান থেকে সেচ পাম্পটি উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসেন। এক সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও এই ঘটনায় কাউকেই আটক করেনি পুলিশ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এসআই আবুবক্কর জানান, যেহেতু সেচ পাম্পটি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে থাকা একটি সরকারি সম্পদ, কাজেই মামলা করার সিদ্ধান্তটি উপজেলা প্রশাসন নেবে। তারা এখনও এই বিষয়ে কোনো মামলা করতে আসেননি।
তুষি-যুগী খিলপাড়া সমলয় প্রজেক্টের কৃষক জাহাঙ্গীর আলম জানান, প্রজেক্ট শুরুর পর থেকেই নানা অনিয়ম চলে আসছে। কৃষকদের সার বিনামূল্যে দেওয়ার কথা থাকলেও পরিবহন খরচের কথা বলে ৪০ হাজার ৬শ’ ৪৫ টাকা উত্তোলন করে নিয়েছে প্রজেক্ট সভাপতিসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা। উত্তোলন করা টাকার একটি তালিকা তিনি প্রতিবেদকের কাছে দেন। এছাড়াও সেচ সুবিধা ও পারিশ্রমিক পাওয়ার কথা থাকলেও তার কিছুই পাননি কৃষকরা।
সোনাইমুড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ নুরে আলম সিদ্দিকী জানান, সেচ পাম্পটি উদ্ধার ও মামলার জন্য প্রয়োজনীও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। আর সার পরিবহনের জন্য যে টাকা উত্তোলন করা হয়েছে সেটি তিনি জানেন না। বরং সার পেতে কৃষকদের যেন কোনো কষ্ট না হয় সেজন্য তিনি সার জয়াগ বাজারের ডিলারের কাছে অফিস খরচের মাধ্যমে পৌঁছে দিয়েছেন। কেন টাকা উত্তোলন করেছে সেই বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন বলে জানান তিনি।
সোনাইমুড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কানিজ ফাতেমার নিকট মামলা না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি জানান, বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা যাদের নিকট সেচ পাম্প দিয়েছেন তাদের কাছে সেচ পাম্প দেখতে চাওয়া হবে। যদি সেটা না দেখাতে পারে তাহলে মামলা করা হবে।
এদিকে সরকারি সেচ পাম্প চুরি করে বিক্রি ও সাধরণ কৃষকদের হস্তক্ষেপে পুলিশ তা উদ্ধার করলেও এই ঘটনায় মামলা না হওয়া এবং কৃষকদের সেচ সুবিধা ব্যাহত হওয়ার পরেও সময় ক্ষেপণ করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রজেক্টের অনেক সদস্য।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available