স্টাফ রিপোর্টার, পঞ্চগড়: ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে অবৈধ পথে পণ্য পারাপারের প্রচলন দীর্ঘ দিনের। তবে প্রকাশ্যে বাংলাদেশ থেকে ভারতে অবৈধ পথে নির্মাণ সামগ্রী রপ্তানির ঘটনা বিরল। এই অসম্ভবকে সম্ভব করেছে পঞ্চগড়ের চোরাকারবারিরা। ভারতীয়দের কাছে তারা পৌঁছে দিচ্ছে পাকা স্থাপনা নির্মাণের ইটসহ অন্যান্য সামগ্রী। এতে অজ্ঞাত কারণে ভ্রুক্ষেপ নেই বিজিবির।
পঞ্চগড় সদর উপজেলার হাড়িভাসা ইউনিয়নের ঘাগড়া সীমান্ত এলাকায় বেশ কিছুদিন ধরেই জমে উঠেছে এই ইটের রমরমা ব্যবসা। স্থানীয় চোরাকারবারিরা অবাধে ভারতীয়দের সঙ্গে এই ব্যবসা করছেন।
২৪ মে শুক্রবার বিকেলে সীমান্তের মমিনপাড়া গ্রামে বেশ কয়েকখানে ইটের স্তূপ চোখে পড়ে। এগুলো বাংলাদেশি কারো বসত কিংবা স্থাপনা নির্মাণে ব্যবহার হবে না। বরং সুযোগ বুঝে পাঠানো হবে পার্শ্ববর্তী ভারতীয় গ্রামে।
স্থানীয়রা বলছেন, গত কয়েকদিন ধরেই ট্রাকযোগে বিভিন্ন ভাটার ইট এই সীমান্তে আনছেন একটি চক্র। আবার সুযোগ বুঝে সেগুলো পার করছেন ভারতে। বিজিবির চোখের সামনে এই অবৈধ বাণিজ্য চললেও ব্যবস্থা নিচ্ছেন না তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাড়িভাসা ইউনিয়নের ঝুলিপাড়া, মমিনপাড়া, তিনঘড়িয়া পাড়া এবং বাঙ্গালপাড়া- এই চারটি গ্রামের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে ভারতের ৬টি গ্রামের। ওই গ্রামগুলোর অবস্থান ভারতে হলেও কাঁটাতারের বেড়া তাদের প্রতিবেশী গ্রামগুলো থেকে আলাদা করতে পারেনি। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে উভয় পাশের স্থানীয় কিছু অসাধু ব্যক্তি জায়গাটি বাণিজ্যিক রুট হিসেবে ব্যবহার করছেন। সেই ধারাবাহিকতায় এবার কাঁটাতারের এই পারের গ্রামগুলোতে নির্মাণসামগ্রী সরবরাহ করছে বাংলাদেশি চোরাকারবারিরা। যেই ইট বাংলাদেশে ৮টাকা পিস, সেই ইট ভারতীয়দের কাছে বিক্রি হচ্ছে ১৫-১৬ টাকায়।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এই সীমান্তটি চোরাকারবারিদের নিরাপদ রুট। নিত্যপ্রয়োজনীয় সবধরণের পণ্য অবৈধপথে পারাপার হয় এদিক দিয়ে। একটি চক্রের প্রধান পেশাই এখন চোরাকারবারি, সীমান্তের কাছাকাছি তাদের বাড়ি হওয়ায় অবাধে চালাচ্ছেন এ কাজ। বিভিন্নখানে যোগসাজস ঠিক রেখে হয়েছেন আঙুল ফুলে কলাগাছ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জানান, এই সীমান্ত এলাকায় সবকিছু অবাধে চলে। গরু, গোশত, চাল, ডালসহ নিত্য প্রয়োজনীয় সবকিছু আমদানি হয় এদিক দিয়ে। স্থানীয় কিছু অসাধু ব্যক্তির প্রধান পেশাই এটি। কৃষি পণ্যও কেনাবেচা হয় এদিক দিয়ে। এখন ইট সরবরাহ হচ্ছে। বিজিবির ক্যাম্পের সামনে দিয়েই আসছে ইটভর্তি ট্রাক। কিন্তু তারা খোঁজ নিচ্ছেন না এগুলো কোথায় যাচ্ছে। বিজিবিকে ইনফর্ম করার পরও অবাধে এই ব্যবসা চলছে।
রিপন নামের এক যুবক বলেন, মাত্র কয়েকজন চোরাকারবারির কারণে সীমান্তে বসবাস করা আমাদের কঠিন হয়ে যাচ্ছে। চোরাকারবারিরা অবাধে ইট সরবরাহ করতে পারে, কিন্তু আমরা আমাদের বাড়ির কাজের জন্য কোন সামগ্রী আনলে বিজিবিকে অনেক প্রুফ দেখাতে হয়।
সিদ্দিক নামে একজন আক্ষেপ করে বলেন, সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে পাকা স্থাপনা করায় কয়েকদিন আগে প্রশাসন আমার স্থাপনা গুড়িয়ে দিয়েছি। অথচ এখন প্রতিদিন অবাধে বাংলাদেশি ইট ভারতে ঢুকছে, জড়িতদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপও নেয়া হচ্ছে না।
বিজিবি ঘাগড়া বর্ডার আউট পোস্টের (বিওপি) ক্যাম্প কমান্ডার লুৎফর রহমান বলেন, ইট পারাপারের বিষয়টি আমি অবগত না, বিষয়টি দেখছি। ঘটনার সত্যতা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available