সিলেট প্রতিনিধি: জন্ম নিবন্ধনের সনদ পেতে ভোগান্তির শেষ নেই। প্রায়ই সচল থাকে না নিবন্ধনের সার্ভার। ফলে সনদ হাতে পেতে দিনের পর দিন ঘুরতে হয় একজন অভিভাবককে। জন্মনিবন্ধনের আবেদন থেকে শুরু করে সনদ হাতে পাওয়া পর্যন্ত কয়েক ধাপের বিড়ম্বনা ও ভোগান্তিতে পেরিয়ে যায় দীর্ঘ সময়। এছাড়াও রয়েছে দালালদের দৌরাত্ম্য। এর মধ্যে জন্ম নিবন্ধনের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণের নতুন নিয়মে বিপাকে পড়েছেন সেবাপ্রত্যাশীরা। ফলে জন্ম নিবন্ধনের জনভোগান্তি এখন চরমে।
জানা যায়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি, চাকরিতে যোগদান, পাসপোর্ট, জাতীয় পরিচয়পত্রসহ নাগরিক সেবার ১৯টি ক্ষেত্রে প্রয়োজন হয় জন্মসনদের। জন্মনিবন্ধন বর্তমানে একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল। যা সবার ক্ষেত্রে আবশ্যিকভাবে প্রয়োজন। এমন কোনো মানুষকে খুঁজে পাওয়া কঠিন, যিনি তার সন্তানের জন্য জন্মনিবন্ধন সনদ নিতে ভোগান্তিতে পড়েননি। সাধারণ মানুষের ভোগান্তিকে পুঁজি করে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে দালাল চক্র। দ্রুত সময়ে, কোনো ধরনের ঝামেলা ছাড়াই জন্মসনদ দেওয়া হবে এমন প্রলোভন দেখিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে টাকা। টাকা দিলেও হয় না সমাধান। সার্ভার নেই, বাবা-মায়ের নামের বানান ভুল, অনলাইন কপিতে সমস্যাসহ নানা জটিলতার অজুহাতে মাসের পর মাস ঝুলিয়ে রাখা হয় আবেদন।
এরই মধ্যে ২৭ আগস্ট রোববার জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন রেজিস্ট্রার জেনারেল (অতিরিক্ত সচিব) মো. রাশেদুল হাসান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে নতুন নিয়ম চালু করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগের জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের দায়িত্বে থাকা রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়। এখন থেকে ইউনিয়ন-পৌরসভা-ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড ও সিটি কর্পোরেশন পর্যায়ে দৈনিক সর্বোচ্চ ৩০টি এবং জোন অফিসের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১০০টি নিবন্ধনের সত্যতা যাচাই ও রেজিস্ট্রেশনের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে নতুন নিয়মে। এর বেশি নিবন্ধন নিচ্ছে না রেজিস্ট্রার জেনারেলের জন্ম নিবন্ধনের সার্ভার। ফলে সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়েছেন জন্ম নিবন্ধন করতে আসা অভিভাবকগণ। এতে বিপাকে পড়েছেন নিবন্ধনের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা-কর্মচারীগণও।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের নিবন্ধন বিভাগে প্রতিদিন গড়ে আড়াই থেকে ৩০০ আবেদন জমা পড়ে। এর মধ্যে দৈনিক ১৫০ থেকে ২০০ আবেদন যাচাই ও রেজিস্ট্রেশন করা সম্ভব হতো। কিন্তু ২৭ আগস্ট থেকে ৩০টির বেশি আবেদন যাচাই ও রেজিস্ট্রেশন করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে নিবন্ধন করতে আসা সেবাপ্রার্থীদের সাথে নিবন্ধনের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের বাক-বিতণ্ডার ঘটনা ঘটছে নিয়মিতই।
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের জন্ম নিবন্ধন বিভাগের দায়িত্বে থাকা প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. জাহিদুল ইসলাম বলেন, আমাদের এখানে প্রতিদিন ২৫০ থেকে ৩০০ আবেদন জমা হয়। এর মধ্যে আমরা আগে দৈনিক কমপক্ষে ১৫০ থেকে ২০০টি আবেদন যাচাই-বাছাই করে রেজিস্ট্রেশন করতে পেরেছি। এবার নতুন নিয়ম নিয়ে আমরা যেমন বিপাকে পড়েছি, তেমনি সেবা নিতে আসা নাগরিকবৃন্দও ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ৩৬ জন ওয়ার্ড কাউন্সিলার রয়েছেন। প্রতিটি ওয়ার্ড থেকেই কাউন্সিলরগণ আবেদন পাঠান। ওয়ার্ড প্রতি ৫টি করে আবেদন আসলেও ১৮০টি আবেদন জমা হচ্ছে। এর মধ্যে মাত্র ৩০টি আবেদন রেজিস্ট্রেশন করতে গিয়ে আমরা নিজেরাই সমস্যায় পড়ছি।
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মতো একই চিত্র সারাদেশের বিভিন্ন ইউনিয়ন কার্যালয়েরও। দৈনিক ৩০টির বেশি আবেদন রেজিস্ট্রেশন করতে না পারায় জন্ম নিবন্ধনের দুর্ভোগ শহর থেকে গ্রামে সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে। দৈনিক রেজিস্ট্রেশনের সংখ্যা বাড়িয়ে জনভোগান্তি দূর করার দাবি সেবাপ্রার্থী মানুষের।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available