ফুলছড়ি (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি: গাইবান্ধার ফুলছড়িতে কঞ্চিপাড়া ডিগ্রি কলেজে জালিয়াতির মাধ্যমে দীর্ঘ ২১ বছর বেতন-ভাতা উত্তোলনের অভিযোগ পাওয়া গেছে এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে। ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়া ডিগ্রি কলেজের শিক্ষিকার বিরুদ্ধে এ অভিযোগ উঠেছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ১৯৯৫ সালের এমপিও নীতিমালায় কম্পিউটার শিক্ষক পদে নিয়োগের জন্য জাতীয় বহুভাষী সাঁটলিপি প্রশিক্ষণ ও গবেষণা একাডেমি (নট্রামস) অথবা শিক্ষা মন্ত্রণালয় অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান থেকে ৬ মাস মেয়াদি কম্পিউটার প্রশিক্ষণ সনদ থাকা বাধ্যতামূলক। কিন্তু কলেজের সহকারী অধ্যাপক তৌহিদা বেগমের নিয়োগের সময় কোনো কম্পিউটার প্রশিক্ষণ সনদ ছিলো না। পরবর্তীতে তিনি একটি ভুয়া সনদ জমা দিয়ে ২১ বছর ধরে চাকরি করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, কলেজের যুক্তিবিদ্যা বিভাগের প্রভাষক কামরুল লাইলা যার ইনডেক্স নং (৩০৯৭৫৩৯)। ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারী NTRCA সিরিয়াল নং ৯২৫৪৯৯ রেজি নং ৩৪৬২৫৮/২০০৯ রোল নং ৪০৭১০২০৫ একটি সার্টিফিকেট প্রদানের মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত হন।
এ বিষয়ে পরিচয় গোপন করে কয়েকজন অফিস স্টাফ জানান, ২০২০ সালে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার কামরুল লাইলার সার্টিফিকেটটি জাল প্রমাণিত করলেও অদৃশ্য শক্তির বলে তার বিরুদ্ধে কোনো প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। ২০১৮ সালের জুন থেকে ৫১০৫২৩৪১৭৮৭৯৬ নং একাউন্টে, সোনালী ব্যাংক (গাইবান্ধা-ফুলছড়ি) শাখা থেকে ৫ বছর ধরে বেতন ভাতা উত্তলন করে আসছেন।
জানা যায়, ২০০৩ সালের ৯ নভেম্বর কঞ্চিপাড়া ডিগ্রি কলেজে সাচিবিক বিদ্যা প্রভাষক (উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণি) পদে শাহনাজ বেগম সম্পা নিয়োগপ্রাপ্ত হন। তার ইনডেক্স নাম্বার (৩০০০৬৭১)। নিয়ম অনুযায়ী নিয়োগ পরিক্ষায় ন্যূনতম ৩ জন পরীক্ষার্থীর অংশগ্রহণ করার কথা থাকলেও এ ক্ষেত্রে হয়েছে ভিন্ন। নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফলের সিএস কপিতে রয়েছে শুধু মাত্র ২জনের ফলাফল সীট।
আর এ নিয়োগে কলেজের রেজুলেশন খাতায় রয়েছে ফ্রুইটের ঘষাঘষি। নিয়মানুযায়ী রেজুলেশন খাতায় অধ্যক্ষর সাক্ষর থাকার কথা থাকলেও রয়েছে ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক (ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ) শাহীনুর আলমে স্বাক্ষর। তৎকালীন সভাপতির রেজুলেশন খাতায় ভিন্ন ভিন্ন ধরনের স্বাক্ষর থাকলেও তার স্বাক্ষরটি জাল করে নিয়োগ সম্পূর্ণ করার অভিযোগও রয়েছে।
যদিও এ নিয়োগটি তৎকালীন অধ্যক্ষ ঢাকায় ট্রেনিং শেষ করে কলেজে যোগদান করার পর নিয়োগ সম্পন্ন করার কথা থাকলেও তা না করে অত্যান্ত গোপনে তরিঘড়ি করে নিয়োগ সম্পন্ন করা হয়।
বর্তমানে শাহানাজ বেগম সম্পা সাচিবিক বিদ্যা বিভাগে নিয়োগপ্রাপ্ত হলেও তিনি সহকারী অধ্যাপক হিসেবে সোনালী ব্যাংকের ৪২৪৯ নং একাউন্ট থেকে বেতন ভাতা উত্তলন করে আসছেন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষকদের বক্তব্য নেয়ার জন্য বার বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তাদের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
এদিকে একটি বিভাগে সর্বনিম্ন ২৫ জন ছাত্র-ছাত্রী থাকার নিয়ম থাকলেও ত্র কলেজের বিজ্ঞান বিভাগে রয়েছে ১৬ জন শিক্ষার্থী। এ বছর কলেজ থেকে উর্ত্তীর্ণ হয়েছে মাত্র ৩ জন।
এ বিষয়ে কঞ্চিপাড়া ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ এটিএম রাশেদুজ্জামান বলেন, নিয়োগের সময় আমি ছিলাম না। নিয়োগ জালিয়াতি ও জাল সনদের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। যদি এমন কিছু হয়ে থাকে, প্রতিষ্ঠানে যদি তদন্তে আসে তাহলে এ বিষয়য়ে তাদেরকে সহযোগিতা করা হবে।
এ বিষয়ে ফুলছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও কঞ্চিপাড়া ডিগ্রি কলেজের সভাপতি আনিসুর রহমান বলেন, নিয়োগের সময় আমি এখানে ছিলাম না। নিয়োগে অনিয়ম হলে এবং সনদ জাল হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হবে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available