জাবি প্রতিনিধি: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রভাষক পদে 'পছন্দের প্রার্থীকে' নিয়োগ দিতে আবেদনের শর্ত শিথিলের অভিযোগ উঠেছে। এমনকি শর্ত শিথিলের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট বিভাগকে অবগত করা হয়নি বলেও অভিযোগ করেছেন বিভাগের শিক্ষকরা। তবে ইউজিসির সমন্বিত নীতিমালা অনুসরণ করতেই এমন করা হয়েছে বলে দাবি কর্তৃপক্ষের।
গত ৩ জানুযারি প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে দেখা যায়, মোট ১৩টি বিভাগ ও ইনস্টিটিউটে প্রভাষক ও সহকারী অধ্যাপক পদে নিয়োগের জন্য দরখাস্ত আহ্বান করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে প্রভাষক পদে নিয়োগের জন্য স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের উভয় ক্ষেত্রে বিভাগভেদে সনাতন পদ্ধতিতে প্রথম শ্রেণি ও গ্রেডিং পদ্ধতিতে ৩.৫০ বা ৩.৬০ সিজিপিএ নিধার্রণ করা হয়। তবে এসএসসি ও এইচএসসি উভয় ক্ষেত্রে ফলাফলের কোনো মানদণ্ড উল্লেখ করা হয়নি।
অথচ, গত বছরের ১৮ জুলাই প্রকাশিত একই বিভাগের নিয়োগ সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞপ্তিতে দেখা যায়, পাঁচটি বিভাগে প্রভাষক পদে নিয়োগের জন্য এসএসসি ও এইচএসসি উভয় ক্ষেত্রে প্রথম বিভাগ এবং স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের উভয় ক্ষেত্রে প্রথম শ্রেণি থাকার শর্ত উল্লেখ করা হয়েছিল। মাত্র পাঁচ মাসের ব্যবধানে প্রকাশিত পরবর্তী বিজ্ঞপ্তিতে সহকারী অধ্যাপক ও প্রভাষক পদে নিয়োগের জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা শিথিল করাকে দুরভিসন্ধিমূলক বলে মনে করছেন বিভাগ সংশ্লিষ্টরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে বিভাগভেদে আলাদা নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়, তাহলে তা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য মঙ্গলজনক নয়। শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে ইউজিসি নির্দেশিত নীতিমালার অনুসরণ ও সর্বজনগৃহীত মানদণ্ডের অনুসরণ করার দাবি জানান তারা।
এদিকে ২০২২ সালের ৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভায় ইউজিসির দেওয়া অভিন্ন নীতিমালা নিয়ে আলোচনা হয়। সেখানে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসন সমুন্নত রেখে কমিটি গঠনের মাধ্যমে নিজস্ব নীতিমালা আপডেট করার সুপারিশ করা হয়। তবে সেটা করা হয়নি বলেও অভিযোগ উঠেছে।
বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কামরুল হাসান নিজ বিভাগে তার স্ত্রীর নিয়োগের জন্য দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা চালিয়ে আসছেন। তবে প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মোস্তফা ফিরোজ উপ-উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন তিনি। তার স্ত্রীকে নিয়োগ দিতেই নিয়োগের শর্ত শিথিল করা হতে পারে বলে মনে করছেন বিভাগের শিক্ষকরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক পদমযার্দার এক শিক্ষক বলেন, 'জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্ট ১৯৭৩ এর ২৪ ধারা অনুযায়ী, একাডেমিক কাউন্সিল বিশ্ববিদ্যালয়ের সবোর্চ্চ একাডেমিক বডি হিসেবে ভূমিকা পালন করবে। তবে ইউজিসির নির্দেশনা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নিয়োগ ও পদোন্নয়নের যে নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে তা একাডেমিক কাউন্সিলকে পাশ কাটিয়ে সিন্ডিকেটে পাশ করিয়ে নেয়া হয়েছে। এটা কোনভাবেই কাম্য নয়। শিক্ষক নিয়োগের জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতার উল্লেখযোগ্য শর্ত পরিবর্তনের বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল বিভাগকে পরিষ্কার না করে নতুন শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার উদ্যোগ চলমান রাখায় একে উদ্দেশ্যমূলক বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে।'
এ বিষয়ে প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ মনিরুল হাসান খান বলেন, 'বিভাগ থেকে শিক্ষক নিয়োগের জন্য প্রশাসনের কাছে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়। সেই চাহিদার প্রেক্ষিতে রেজিস্ট্রার বিজ্ঞপ্তি দেন। নিয়োগে শিক্ষাগত যোগ্যতা শিথিল করা হয়েছে কিনা- তা বলতে পারবো না। এই বিষয়ে রেজিস্ট্রার অফিসকে জিজ্ঞেস করলে তারা ভালো বলতে পারবেন।'
এ বিষয়ে রেজিস্ট্রার আবু হাসান বলেন, 'শিক্ষক নিয়োগ, পদোন্নতি বা আপগ্রেডেশন সংক্রান্ত বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) থেকে সমন্বিত নীতিমালাকে অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। সমন্বিত নীতিমালায় এসএসসি, এইচএসসির কোন গ্রেডের বিষয়টি উল্লেখ ছিল না। তবে সিন্ডিকেটে যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল পরে শিক্ষকদের আপত্তির পর পরবর্তী সিন্ডিকেটেই তা সংশোধন করা হয়। এখন আগের শর্ত বহাল আছে। কোনো নির্দিষ্ট বিভাগকে উদ্দেশ্য করে নীতিমালা পরিবর্তন করা হয়নি।'
এর আগে, প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মোস্তফা ফিরোজের বিরুদ্ধে পরীক্ষার খাতা নিজে মূল্যায়ন না করে অধ্যাপক কামরুল হাসানকে দিয়ে মূল্যায়ন করিয়ে নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available