নিজস্ব প্রতিনিধি: বিচ্ছিন্ন জনপদ কিংবা দ্বীপের বাসিন্দা না হয়েও কেরানীগঞ্জে বসবাসরত লক্ষাধিক লোককে রাজধানীতে প্রবেশের ক্ষেত্রে টোল দিয়ে চলাচল করতে হয়। যুগের পর যুগ ধরে চলে আসছে এই টোল আদায়। বিআইডব্লিউটিএ আওতাধীন দেশের বিভিন্ন ঘাটে মালামাল পরিবহনে টোল আদায় করা হলেও কেরানীগঞ্জের বাসিন্দাদের কাছ থেকে বুড়িগঙ্গা পারাপারে যাত্রী টোল আদায় করা হচ্ছে । আর এই টোল আদায় করতে গিয়ে ইজারাদার প্রতিষ্ঠানের লোকজনের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত টোল আদায়, যাত্রীদের সাথে দুর্ব্যবহার, হয়রানি ও মারধরের অভিযোগ রয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কেরানীগঞ্জ থেকে রাজধানীতে যাওয়ার জন্য এক কিলোমিটার এলাকার মধ্যে বরইতলা ও তেলঘাট থেকে রাজধানীর শ্যামবাজার ঘাটে, জেলা পরিষদ মার্কেট ঘাট খাজা মার্কেট ঘাট নাগর মহল ঘাট ইস্পাহানি ঘাট থেকে রাজধানীর ওয়াইজঘাটে এবং ব্রিজ ঘাট মিটফোর্ড বটতলা ঘাট থেকে রাজধানীর সোয়ারীঘাটে প্রায় সহস্রাধিক খেয়া পারাপারের নৌকায় প্রতিদিন কয়েক লক্ষাধিক লোকজন চলাচল করে। এ সমস্ত খেয়া নৌকায় জনপ্রতি ১০ টাকা করে পারাপার হওয়ার পর যাত্রীদের দুই টাকা করে অতিরিক্ত বিআইডব্লিউটিএর টোল দিতে হয়। এছাড়াও মালামাল পরিবহনের ক্ষেত্রে দশ টাকা থেকে শুরু করে হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করা হয়। মালামাল থেকে টোল আদায়ের সরকারি রেট চার্ট থাকলেও তা দৃশ্যমান স্থানে টানানো না থাকায় ইচ্ছামাফিক টোল আদায়ের অভিযোগ পাওয়া যায় আদায়কারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে।
খেয়া পারাপারে প্রতিদিনের যাত্রী ইসলামপুর এলাকার কাপড় ব্যবসায়ী আল আমিন জানান, প্রতিবার পারাপারের সময় ২ টাকা মাঝেমধ্যে ভাংতি না থাকলে পাঁচ টাকাও টোল দিতে হয়। নৌকা ভাড়া দেয়ার পরে অতিরিক্ত টোল কেন দিতে হয় সে ব্যাপারে আমরা জানি না। নদীতে চলাচলের জন্য যদি সরকারকে রাজস্ব দিতে হয় সেটা নৌকা মাঝিরা দিবে। নৌকা মাঝিরা নদী থেকে আয় করছে, টোল দিতে হলে তারা দিবে আমরা কেন দিব। আর টোল দিয়ে যাত্রীদের কি লাভ, তারা কি সুবিধা পায় বিআইডাব্লিউটি এর কাছ থেকে। ঘাটে যাত্রীদের বসার জন্য কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি। এমনকি রোদ-বৃষ্টিতে অবস্থান নেয়ার জন্য কোন ছাউনি পর্যন্ত তৈরি করা হয়নি।
কেরানীগঞ্জ গার্মেন্টস পল্লির আলম টাওয়ার মার্কেটের ব্যবসায়ী আমির হোসেন জানান, সারাদেশ থেকে পাইকাররা গার্মেন্টসের মালামাল কিনতে আমাদের কাছে এসে মালামাল নিয়ে যাওয়ার সময় ঘাটে টোল আদায় নিয়ে হয়রানির শিকার হয়। ছোট একটি বস্তার জন্য তারা ১০০ থেকে ২০০ টাকা টোল দাবি করে। এ নিয়ে প্রতিবাদ করায় অনেক পাইকারকে মারধরের শিকার হতে হয়েছে। তাই দিনে দিনে কেরানীগঞ্জে সারা দেশ থেকে আসা পাইকারের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। এতে আমরা ব্যাবসায়িক ভাবে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।
তেলঘাট দিয়ে পারাপারের যাত্রী এরফান আলী জানান, অন্যান্য ঘাটে মাঝেমধ্যে দুই টাকার অতিরিক্ত টোল আদায় করা হলেও তেলঘাটের সবসময়ই জোরপূর্বক পাঁচ টাকা করে যাত্রীটি আদায় করা হয়। স্থানীয় চেয়ারম্যানের লোকজন এখানে টোল আদায় করতো। তাদেরকে কিছু বললেই মারধর করতো, তাই ভয়ে কেউ কিছু বলার সাহস পেত না।
জানা গেছে, প্রতিবছর বিআইডব্লিউটিএর পক্ষ থেকে ঘাট ইজারা দেওয়া হয়। ইজারার শর্তাবলির মধ্যে টোল আদায়ের নির্দিষ্ট হার উল্লেখ করা রয়েছে। এছাড়াও ইজারাদাররা নদীতে নৌকা চলাচলের জন্য নৌকা মাঝিদের কাছ থেকে প্রতিদিন ২০০ টাকা হারে টোল আদায় করে থাকে। তবে যাত্রীদের কাছ থেকে টোল কেন। যাত্রীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ও অতিরিক্ত টোল আদায় প্রসঙ্গে জানতে ইজারাদার প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী ইরফান সেলিম বিগত সরকার পতনের পর থেকে পলাতক থাকায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। তবে বর্তমানে ইজারাদারের পক্ষে ঘাটে টাকা উত্তোলনকারী রাহাতের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে জানতে বিআইডব্লিউটিএর যুগ্ম পরিচালক একেএম আরিফ উদ্দিনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, কি কারণে যাত্রীদের কাছ থেকে টোল আদায় করা হয় এই বিষয়টি আমার জানা নেই। বন্দর কর্তৃপক্ষ বিষয়টি ভালো বলতে পারবে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available