কাজী নজরুল ইসলাম বাবুল, মুন্সীগঞ্জ: মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ে বাল্কহেডের ধাক্কায় একটি পিকনিকের ট্রলারডুবির ঘটনায় চার শিশুসহ ৮ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছেন ৫ জন।
৫ আগস্ট শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে উপজেলার খিদিরপাড়া ইউনিয়নের রসকাঠি গ্রাম সংলগ্ন ডহরী খালে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এ দুর্ঘটনায় ৩৪ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হলেও এখনও নিখোঁজ রয়েছেন পাঁচজন। তাদের উদ্ধারে কাজ চালাচ্ছে ফায়ার সার্ভিস।
উদ্ধার হওয়া মৃতরা হলেন মোকসেদা (৪২), পপি (২৬), শাকিব (৮), হ্যাপি (২৮), রাকিব (১২), সাজিবুল (৪), ফারিহান (১০) ও সজীব। তারা সবাই সিরাজদিখান উপজেলার লতাব্দী ইউনিয়নের বাসিন্দা।
৬ আগস্ট রবিবার সকাল ৯টায় খিদিরপুরে নিহতদের জানাজা সম্পন্ন হয়েছে। দাফনের কাজ চলছে। এ ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
শনিবার দুপুরে শিমুলিয়া ঘাট থেকে ফিরতে গিয়ে ট্রলারটির রাত হয়ে যায়। বান্ধহেটিতে বাতি না থাকায় কোনো কিছু দেখা যাচ্ছিল না। যখন বাতি জ্বলে উঠে, তখন ট্রলার আর দুর্ঘটনা এড়াতে পারেনি।
এ সময় ট্রলারে থাকা অধিকাংশ যাত্রী সাঁতরে তীরে উঠলেও পানিতে ডুবে মারা যান ৮ জন। এখনো নিখোঁজ রয়েছেন ৫ জন। এদিকে, ট্রলার ডুবির খবর পাওয়ার পরপরই নদীপাড়ে ভিড় করেন স্বজনরা।
জানা যায়, পদ্মা নদীর মাওয়া পয়েন্ট থেকে সিরাজদিখানের দিকে যাচ্ছিলো পিকনিকের ট্রলারটি। রাত আটটার দিকে ঈদের পাড়া ইউনিয়নের রসকাটি এলাকায় পৌঁছালে অন্ধকারে একটি বালুবাহী বাল্কহেড ট্রলারটিকে ধাক্কা দেয়। এতে ডুবে যায় ট্রলারটি।
নিহতের স্বজনরা জানান, আমরা সিরাজদিখানের লতব্দী ইউনিয়নের ৪৬ জন পদ্মায় ঘুরতে যাই। বাড়ি ফেরার সময় রাত ৮টার দিকে বালিগাওয়ের ডহরী খাল দিয়ে হঠাৎ বালুবহী বাল্কহেড আমাদের ট্রলারকে ধাক্কা দেয়। এতে ট্রলারটি ডুবে যায়।
ফায়ার সার্ভিসের টিম লিডার কয়েস আহমেদ জানান, ট্রলারটি এখনও উদ্ধার হয়নি। পানির নিচে ডুবে আছে। ট্রলারের ভিতরে নিখোঁজদের পাওয়া যেতে পারে।
মুন্সিগঞ্জ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আসলাম খান বলেন, বাল্কহেডটি আটক করা হয়েছে। বাল্কহেডের চালকসহ বাকিরা পলাতক। পুলিশ তাদের শনাক্ত করে গ্রেফতার করতে অভিযান চালাচ্ছে।
এদিকে ট্রলারডুবির ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানান মুন্সিগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. আবুজাফর রিপন। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শারমিন আরাকে কমিটির প্রধান করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
স্থানীয় লোকজন অভিযোগ করেন, উঠতি বয়সী তরুণেরা নিয়মিত ট্রলারে বিকট শব্দে গান বাজিয়ে পিকনিকে যান। আশপাশে কী আছে, সেটা তারা খেয়াল করেন না। বর্ষা মৌসুমে দিনরাত ২৪ ঘণ্টায় তালতলা-গৌরগঞ্জ খাল দিয়ে শত শত বাল্কহেড চলাচল করে। এতে প্রায় সময় নৌ দুর্ঘটনা ঘটে। গত বছর এমন একটি দুর্ঘটনা ঘটার পর প্রশাসনের নজরদারিতে কয়েক দিন বাল্কহেড চলাচল বন্ধ ছিল। নৌ দুর্ঘটনা রোধে ওই খাল দিয়ে বাল্কহেড চলাচল বন্ধের কথা বলেন স্থানীয় লোকজন।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available