নিজস্ব প্রতিবেদক: পাগলা ঘোড়ার মতো ছুটে চলা ডলারের দামে লাগাম টানা গেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এই দাম কমা কেবল শুরু, এটা আরও কমবে। এদিকে রেমিট্যান্সেও সুবাতাসের দেখা মিলেছে। ডিসেম্বরে আইএমএফ এর ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি এলেই আরও একধাপ এগিয়ে যাবে অর্থনীতি।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বেশকিছু দিন ধরে ডলার সংকটে আমদানির জন্য এলসি খুলতে পারছিলেন না ব্যবসায়ীরা। ডলারের জন্য বিভিন্ন ব্যাংকের দ্বারে দ্বারে ঘুরছিলেন আমদানিকারকরা। এমন পরিস্থিতির মধ্যে বৃহস্পতিবার থেকে কাগজে-কলমে ডলারের দাম কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ব্যাংকগুলো। রেমিট্যান্স ও রফতানি আয়ে ডলারের দাম ৫০ পয়সা কমিয়ে পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। এখন থেকে রেমিট্যান্স ও রফতানির ক্ষেত্রে প্রতি ডলারে পাওয়া যাবে ১১০ টাকা। আর আমদানিকারকদের কাছে বিক্রি করা হবে ১১০ টাকা ৫০ পয়সায়।
২২ নভেম্বর বুধবার ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) ও বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) যৌথ সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। এই নতুন দাম কার্যকর হবে জানিয়ে গণমাধ্যমকে বাফেদার চেয়ারম্যান ও রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফজাল করিম বলেন, ‘রেমিটেন্স বাড়ছে। বাণিজ্য ঘাটতি বেশ কমেছে। বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে (ব্যালান্স অফ পেমেন্ট বিওপি) ঘাটতি থেকে উদ্বৃত্ত হয়েছে। সব মিলিয়ে ডলারের সরবরাহ বেড়েছে। তাই আমরা ৫০ পয়সা করে কমিয়েছি। এই ধারা অব্যাহত থাকলে পর্যায়ক্রমে আরও কমানো হবে। আশা করছি ডলারের বাজার আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হয়ে আসবে।’
আফজাল করিম জানান, বুধবার আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে টাকা-ডলারের বিনিময় হার ছিল ১১১ টাকা। বৃহস্পতিবার থেকে তা হবে ১১০ টাকা ৫০ পয়সা। রপ্তানি আয় ও রেমিটেন্সের ক্ষেত্রে ডলারের দর ছিল ১১০ টাকা ৫০ পয়সা। বৃহস্পতিবার থেকে এই দুই ক্ষেত্রেই ডলারের দর হবে ১১০ টাকা।
আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে আইএমএফের ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮১ মিলিয়ন বা ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার পেতে পারে বাংলাদেশ। ১৯ অক্টোবর এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, ‘দ্বিতীয় কিস্তির শর্ত চূড়ান্ত করা হয়েছে। ঋণ চুক্তিতে থাকা বাংলাদেশের প্রথম কিস্তির অর্থ ব্যবহারের অগ্রগতি দেখে পরবর্তী কিস্তি ছাড়ের সিদ্ধান্ত হয়।’
এদিকে বছরের মাঝামাঝি কমে আসা রেমিট্যার্স আবারও বাড়তে শুরু করেছে। দেশের অর্থনীতির সবচেয়ে আলোচিত ও উদ্বেগজনক সূচক বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভের অন্যতম প্রধান উৎস প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সে সুবাতাস দেখা দিয়েছে। অক্টোবরের পর নভেম্বরেও রেমিটেন্স বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত আছে। বাংলাদেশ ব্যাংক রবিবার রেমিটেন্স প্রবাহের সাপ্তাহিক যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, চলতি নভেম্বর মাসের প্রথম ১৭ দিনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা ১১৯ কোটি ৭৭ লাখ ডলার দেশে পাঠিয়েছেন। এই অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৯ শতাংশ বেশি। গত বছর এই ১৭ দিনে এসেছিল ১০০ কোটি ডলার ।
মানি চেঞ্জার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি এ কে এম ইসমাইল হক বলেন, ‘চলতি সপ্তাহে রোববার সন্ধ্যায় ডলারের দাম ১২৩ টাকায় নেমে এসেছে। তিনি আরও বলেন, 'খোলা বাজারে ডলারের দাম লাফ দিয়ে বেড়েছিল। যেভাবে বেড়েছিল সেভাবেই কমছে। আমার বিশ্বাস, ডলারের দাম আরও কমবে।’
এটা শুরু, আগামীর দিনগুলো সুবাতাস অব্যাহত থাকবে উল্লেখ করে অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আইনুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের যেহেতু রেমিট্যান্স বাড়ছে সেটা সুখবর আনবে। সামনে নির্বাচন এখন যদি অর্থনীতির গতিপথ অব্যাহত না থাকে সেটা জনগণের সামনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতো। ঠিক সময়ে আমরা ঘুরে দাঁড়াতে দেখছি। আইএমএফ এর যে দ্বিতীয় কিস্তির ঋণ সেটা বড় একটা গ্রীন সিগন্যাল। বৈশ্বিকভাবে আমরা ভালো মেজেস দিতে পারবো। আর সেটা রিজার্ভ সিকিউরিটির জন্য সেটা খুব ভালো হবে। এখন আমাদের আভ্যন্তরীন রিসোর্সগুলো নিয়ে আরো কাজ করতে হবে।’
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available