সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি: গাছে গাছে ঝুলছে নানান রঙগের, নানান স্বাদের সুমিষ্ট ফল লাল টুকটুকে ড্রাগন৷ বাগানের পরিচর্যায় ব্যস্ত শ্রমিক। এমন চিত্র দেখা গেছে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার উত্তর সাহাবাজ গ্রামের কৃষক শাহাবুদ্দীন মন্ডলের ড্রাগন বাগানে। ইউটিউবে কৃষি ভিত্তিক প্রামাণ্য চিত্র দেখে আগ্রহ জাগে ড্রাগন চাষের। শুরুর দিকে স্বল্প পরিসরের খামার এখন পরিণত হয়েছে বাণিজ্যিক খামারে। নিজে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছেন স্থানীয় শ্রমিকদের৷
জানা গেছে, এমএ পাস করার পরও চাকরির পেছনে না ছুটে ২০০১ সালে পোল্ট্রি ব্যবসা শুরু করেন শাহাবুদ্দিন। তবে মহামারী করোনাকালীন সময়ে পোল্ট্রি খাতে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হন তিনি। পরবর্তীতে মানসিক অস্থিরতা কাটিয়ে নতুন করে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন শাহাবুদ্দিন।
এমন পরিস্থিতিতে ইউটিউবে কৃষি ভিত্তিক প্রামাণ্য চিত্রের ভিডিও দেখে আগ্রহী হন ড্রাগন চাষে। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের কয়েকটি জেলা থেকে ড্রাগনের চারা সংগ্রহ করে নিজের উদ্যোগে তিন একর জমিতে ড্রাগন বাগান গড়ে তোলেন তিনি।
শেখ শাহাবুদ্দিন জানান, ড্রাগন গাছ রোপণের এক থেকে দেড় বছরের মধ্যেই গাছে ফুল আসে এবং ফুল আসার ২০-২৫ দিনের মধ্যে ফল হয়। প্রতি বছর এপ্রিল থেকে মে মাসে ফুল হয়, অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাসেও ফল উত্তোলন সম্ভব। ১৮ মাস বয়সী একটি গাছ থেকে ৫-২৫টি ফল পাওয়া যায়। প্রাপ্তবয়স্ক একটি গাছ থেকে বছরে ১০০টি পর্যন্ত ফল উৎপাদন হয়। প্রতিটি গাছ মোট ২০ বছর পর্যন্ত ফল দেয়। প্রতিটি ড্রাগন ফলের ওজন ২০০ গ্রাম থেকে শুরু করে এক কেজি পর্যন্ত হতে পারে।
বর্তমানে বাজারে প্রতি মণ ড্রাগন ফল ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা দামে বিক্রি হয়। শাহাবুদ্দিনের বাগান থেকে প্রতি সপ্তাহে ২০-২৫ মণ ড্রাগন ফল বিক্রি হচ্ছে।
শেখ শাহাবুদ্দিন শুধু নিজের জন্যই নয়, পুরো উপজেলায় ড্রাগন চাষের বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনার স্বপ্ন দেখছেন। তার বাগানের বয়স ইতোমধ্যেই তিন বছর অতিক্রম করেছে এবং বাগানে প্রায় ১২ লক্ষাধিক টাকা বিনিয়োগ করেছেন তিনি। অল্প খরচে অধিক লাভের কারণে স্থানীয় অন্যান্য কৃষকেরাও ড্রাগন চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।
স্থানীয় মইনুল নামে এক কৃষক জানান, শাহাবুদ্দিনের ড্রাগনের বাগানে আসলে চোখ জুড়িয়ে যায়। এখান থেকে নিয়মিত আয়ের পাশাপাশি বেশ কয়েকজন মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে। আমি নিজেও মনস্থির করেছি সামনের বছর অন্তত ২০ শতক জমিতে ড্রাগন লাগাব।
পলাশ নামে আরেকজন বলেন, শাহাবুদ্দিনের ড্রাগন বাগান সবাইকে মুগ্ধ করেছে। সম্পূর্ণ প্রাকৃতিকভাবে এখানে ড্রাগন চাষ করা হয়। ড্রাগন নিয়ে মানুষের মধ্যে যে একটা ভীতি কাজ করেছিল তা ধীরে ধীরে কেটে উঠতে শুরু করেছে। তবে বিগত কয়েক বছরের তুলনায় ড্রাগনের দাম এ বছর কিছুটা কম। শাহাবুদ্দিনের দেখাদেখি এ উপজেলার অন্তত পাঁচ থেকে সাতজন কৃষক আগামী বছর ড্রাগন বাগান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সুন্দরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রাশিদুল কবির জানান, উত্তরাঞ্চলের কৃষকদের কাছে অনুকরণীয় এখন সুন্দরগঞ্জের শাহাবুদ্দিন। বাগানটি আমরা ইতোমধ্যেই পরিদর্শন করেছি। তার বাগানের ড্রাগন ফল খেতে মিষ্টি এবং সুস্বাদু। আমরা ড্রাগন ফল চাষে ওই কৃষককে প্রতিনিয়ত পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। পাশাপাশি তার বাগানের সব সময় খোঁজ খবরও রাখা হচ্ছে।
জেলা কৃষি কর্মকর্তা খোরশেদ আলম বলেন, সুন্দরগঞ্জের মাটি ও আবহাওয়া ড্রাগন চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের পক্ষ থেকে আমরা নিয়মিত বাগান পরিদর্শন করে শাহাবুদ্দিনকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছি। আশা করা যাচ্ছে, তার মাধ্যমে গাইবান্ধার কৃষিতে ড্রাগন চাষের সম্ভাবনার সূচনা হবে। শাহাবুদ্দিনের মতো সফল চাষীদের হাত ধরে একদিন এগিয়ে যাবে বেকারমুক্ত বাংলাদেশ, এমনটাই প্রত্যাশা করেন তিনি।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available