কালাই (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি: ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে জয়পুরহাটে কয়েকদিন থেকে টানা বৃষ্টিপাত হয়েছে। অতিরিক্ত এই বৃষ্টিপাতের কারণে উত্তরবঙ্গের শস্যভাণ্ডার খ্যাত জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার ফসলি মাঠগুলো প্রায় পানিতে ডুবে গেছে। জমে থাকা পানির কারণে ডুবে গেছে পাকা ও আধাপাকা ধান। অনেক জমিতে ডুবে যাওয়া ধান থেকে চারা বের হচ্ছে। তবে এমন সময়ে অতিরিক্ত অর্থ খরচ করেও মিলছে না ধান কাটার শ্রমিক। উপজেলাজুড়ে কষ্টার্জিত বোরো ফসল ঘরে তুলতে কৃষকরা এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
কালাই উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে এই উপজেলার বোরো আবাদ হয়েছে ১২ হাজার ৫৫ হেক্টর জমিতে। এতে ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৭৭ হাজার ৯৬৮.৫ মেট্রিক টন এবং চাল উৎপাদনের ৫১ হাজার ৯৭৯ মেট্রিক টন নির্ধারণ করা হয়েছে। আলু উৎপাদনের কারণে এই উপজেলায় দেরিতে ধান কাটা মাড়াই শুরু হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার জিন্দারপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ কুঁজাইল, করিমপুর ও বেগুনগ্রাম, পুনট ইউনিয়নের পাঁচগ্রাম ও শিকটা গ্রাম, উদয়পুর ইউনিয়নের তেলিহার ও দুধাইল গ্রাম, আহম্মেদাবাদ ইউনিয়নের ঝামুটপুর, হাতিয়র ও হারুঞ্জা গ্রাম, মাত্রাই ইউনিয়নের উলিপুর ও বানদীঘিসহ বিভিন্ন গ্রামের ধানের জমিতে বৃষ্টির পানি জমে রয়েছে। শ্রমিক সংকটের কারণে এসব ধান কাটতে পারছেন না কৃষকরা। বাইরের কোনো জেলা থেকে এবার কৃষি শ্রমিক না আসায় শ্রমিকের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। শ্রমিকপ্রতি দৈনিক ৭০০/৮০০ টাকা দিয়েও শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না।
তেলিহার গ্রামের কৃষক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, জমির ধান পানিতে ডুবে গেছে। কিন্তু শ্রমিক নেই। দু-একজন যা পাওয়া যায় তারাও বেশি মজুরি চায়। প্রতিবছর রংপুর ও গাইবান্ধা থেকে ধান কাটার জন্য শ্রমিকরা আমাদের এখানে আসে। কিন্তু এবছর এখনো অধিকাংশ গৃহস্থের বাড়িতে কোনো শ্রমিক আসেনি।
কালাই পৌর এলাকার নয়াপাড়া গ্রামের কৃষক সোহেল মিয়া বলেন, সবাই ধান কাটতে শ্রমিক খুঁজছে। গত বছর এক বিঘা জমির ধান কাটতে শ্রমিকের মজুরি দিতে হয়েছিল তিন হাজার থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা। এবারে একই পরিমাণ জমির ধান কাটতে মজুরি দিতে হচ্ছে পাঁচ হাজার থেকে সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা। এরপরও শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে অনেকেই নিজেই যতটুকু পারছেন ধান জমি থেকে কেটে রাখছেন।
কালাই পৌরসভার সরদারপাড়া গ্রামের কৃষক আমিরুল ইসলাম বলেন, গত কয়েকদিনের বৃষ্টির কারণে জমির পাকা ধান পানিতে ডুবে নষ্ট হওয়ার পথে। শ্রমিকের অভাবে ধান কাটতে পারছি না। এই ধান যদি দুই-চার দিনের মধ্যে কাটতে না পারি তাহলে অনেক লোকসান হবে।
কালাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা অরুণ কুমার রায় বলেন, চলতি বোরো মৌসুমের শুরু থেকে কৃষি বিভাগের মাঠকর্মীসহ কর্মকর্তারা কৃষকদের নানা দিকনির্দেশনা দিয়ে উৎসাহিত করেছে। মাঠের শ্রমিক সংকটের কারণে ধান কাটা নিয়ে কৃষকরা যে সমস্যায় পড়েছেন তা হয়তো বেশিদিন থাকবে না। ঈদের পরে শ্রমিকরা কাজে যোগ দিতে চলে আসবে বলে তিনি মনে করেন।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available