লালমনিরহাট প্রতিনিধি: লালমনিরহাটে তিস্তা নদীর পানি কমার সাথে সাথে বেড়েছে ভয়াবহ ভাঙন। নদী ভাঙনের আতঙ্কে তিস্তা পাড়ের হাজারো মানুষ। ইতোমধ্যে নদীর গর্ভে বিলীন হয়েছে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে প্রায় শতাধিকের বেশি বসতভিটা ও বিভিন্ন স্থাপনা। হুমকির মুখে রয়েছে বিদ্যালয়, মসজিদ ও মাদরাসা।
১১ জুলাই বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টায় তিস্তা ব্যারাজের পয়েন্টে তিস্তার পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে পানি সমতল ৫১ দশমিক ৪০ মিটার, (বিপদসীমা ৫২ দশমিক ১৫ মিটার) যা বিপৎসীমার ৭৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বর্তমানে কমলেও বেড়েছে ভাঙন।
প্রতি বছর নদী ভাঙনে হারিয়ে যাচ্ছে বসতভিটা আর আবাদি জমিসহ নানা স্থাপনা। দুই দিকের ভাঙনে উপজেলার মানচিত্র প্রতি বছর সংকুচিত হয়ে আসছে। চলতি মৌসুমে উপজেলায় প্রায় দুই শতাধিক বসতভিটা তিস্তা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। গত কয়েক দিনে উপজেলার সিন্দুর্না, ডাউয়া বাড়ি ও পাটিকাপাড়ায় শতাধিক পরিবারের আশ্রয়স্থল বসতভিটা নদীতে বিলীন হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এসব পরিবার মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়ে দিশাহারা হয়ে পড়ছে। অনেকে বাঁধে রাস্তায় ও সরকারি জমি এবং স্কুলের মাঠে আশ্রায় নিয়েছে। ভাঙন ঝুঁকিতে পড়েছে হাতীবান্ধার গড্ডিমারীর তালেব মোড়ের ওয়াপদা বাঁধ ও হাতীবান্ধা বাইপাস সড়ক। পানি উন্নয়ন বোর্ড জরুরি কাজের অংশ হিসেবে স্পার বাঁধ ও চন্ডিমারী বাঁধ রক্ষায় জিও ব্যাগ ফেলছে।
হাতীবান্ধা উপজেলায় ডাউয়াবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মশিউর রহমান বলেন, আমার ইউনিয়নের ছয়টি ওয়ার্ড নদী তীরবর্তী এলাকায়। এসব এলাকায় দেখা দিয়েছে ভাঙন। গত কয়েকদিনে কয়েক দফা পানি বৃদ্ধির ফলে ৭০টি বাড়ি বিলীন হয়েছে।
এদিকে জেলার আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের তিস্তার কুটিরপাড় বালুর বাঁধে গতকাল বুধবার বিকেল থেকে ভাঙন শুরু হয়েছে। এতে হুমকির মুখে ৪৯ কোটি টাকার বেরিবাঁধ। সরেজমিনে দেখা গেছে, বুধবার সন্ধ্যার পরেই নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে সেখানকার ৫টি বাড়িঘর। দুর্ভোগে পড়া মানুষজন তাদের জিনিসপত্র, গরু ছাগল নিয়ে ঠাঁই নিয়েছে উঁচু স্থানে। স্থানীয়রা ভাঙন রোধে স্বেচ্ছায় মাটি ফেলে কাজ করছেন। সেখানে ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে হাজারো পরিবার।
এছাড়াও বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে লালমনিরহাট সদর উপজেলার গোকুন্ডা, রাজপুর ও খুনিয়াগাছ ইউনিয়নের কয়েকটি পয়েন্টে দেখা দিয়েছে নদী ভাঙন। গত কয়েকদিনে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে ২৫টি বাড়ি। অসহায় মানুষেরা জায়গা না পেয়ে নদী তীরবর্তী বিভিন্ন সড়ক ও বাঁধের ধারে ঘরবাড়ি আসবাবপত্র স্তূপ করে রেখেছেন। কেউ আবার খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন
পাউবো লালমনিরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার বলেন, ভাঙন কবলিত এলাকায় ইতোমধ্যে জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। আমরা সার্বক্ষণিক খোঁজ খবর রাখছি।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্ল্যাহ বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তালিকা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে উপজেলা নির্বাহী অফিসাদের। তিস্তার ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ রক্ষায় কাজ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available