খুলনা ব্যুরো: খুলনা বটিয়াঘাটার ভদ্রা, পশুর ও তেরখাদা উপজেলায় আতাই নদীর পানি বৃদ্ধিতে বেড়িবাঁধগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। নদী ভাঙন ও পানিবন্দি হওয়ার আতংকে রয়েছে দুই উপজেলার প্রায় লক্ষাধিক মানুষ। ঝুঁকিপূর্ণ ভাঙন এলাকায় দ্রুত সংস্কারের ব্যবস্থা না হলে মারাত্মক পরিস্থিতির সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা করছেন এলকাবাসী। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়নে বেশ কয়েকটি বেড়িবাঁধে জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ অন্যান্য স্পটে দ্রুত কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন খুলনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা।
সরোজমিনে গিয়ে যায়, খুলনা বটিয়াঘাটা উপজেলার সুরতখারী ইউয়নের ভদ্রা ও পশুর নদীতে গত কয়েক দিন ধরে ব্যাপকভাবে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। নদীতে তুলনামূলকভাবে পানি বেশি বৃদ্ধি পাওয়ায় ওই সব এলাকার ওয়াপদা বেড়িবাঁধগুলো চরম ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। খুলনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের ২৯ নম্বর পোল্ডারে অবস্থিত বটিয়াঘাটা উপজেলার বারোআড়িয়া ডুমুরিয়া সড়কে ঠাকুরবাড়ি নামক স্থানে তীব্র আকারে নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। চলতি মৌসুমে এসব এলাকায় শত শত একর জমিতে তরমুজ ও শসা উৎপাদন হয়েছে। সেখানে রয়েছে অসংখ্য মৎস্য ঘের।
বারোআড়িয়া ডুমুরিয়া সড়কের আশেপাশে রয়েছে স্কুল, মাদ্রাসা, কলেজ হাটবাজারসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এই সড়কের বারোআড়িয়া ঠাকুরবাড়ি, বিশ্বাস বাড়ি ও বারোআড়িয়া বাজার থেকে সুন্দরমহল ফুলতলা সড়কের অবস্থাও অত্যন্তঝুঁকিপূর্ণ। ভদ্রা ও পশুর নদীর পাশে অবস্থিত বারআড়িয়া, শম্ভুনগর, কোদলা, মঠবাড়ি, সুন্দরমহল, জালিয়াখালী, আকড়া, ভগবতিপুর, বুনারাবাদ, পার্শেমারী, রায়পুর, টাকিমারী, সুরখালী, কল্যাণশ্রী, খড়িয়াল, চানদারডাঙ্গা, গাওঘরা, গরিয়ারডাঙ্গা ও ডুমুরিয়া উপজেলার ২৫ থেকে ৩০টি গ্রাম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। যে কোনো মুহূর্তে দুর্বল বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে এসব গ্রাম জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বটিয়াঘাটা উপজেলার বাসিন্দা মোহন লাল পাঠক বলেন, ‘ভদ্রা নদীর পাশেই আমার বাড়ি। নদী থেকে ২০/২৫ ফুট দূরে আমার ঘর। সেখানে পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করি। সব সময় দুশ্চিন্তার মধ্যে থাকতে হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘নদীতে জোয়ারে পানির স্রোতের শব্দ আর ভাঙনের ভয়ে রাতে পরিবারের কারো ঘুম আসে না।’
বিএনপি নেতা এনামুল শেখ ও হাফিজুর রহমান বলেন, ‘ভাঙনের অবস্থা খুবই আশঙ্কাজনক। অতি দ্রুত কাজ না করলে এলাকা পানিতে তলিয়ে কোটি কোটি টাকার সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হবে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শরীফ আসিফ রহমান ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলেছি। দ্রুত খুলনা পানি উন্নয়ন বোর্ড তদারকি করবে বলে আশা করছেন তিনি।’
এদিকে তেরখাদা উপজেলার মধুপুর ইউনিয়নের ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া আতাই নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। পানি বৃদ্ধি ও প্রবল স্রোতের কারণে কয়েকটি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। যে কোনো মুহূর্তে ওয়াপদার বাঁধ ভেঙে কয়েকটি বিল প্লাবিত হওয়র আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী। এই নদীর তীরবর্তী পারহাজি গ্রাম নামক স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। মধুপুর স্লুইসগেট, উত্তরপাড়া খাল, মোল্লাবাড়ি, পারহাজী গ্রাম স্লুইসগেট সংলগ্ন, পাটগাতি, লস্করপুর বাজারের উত্তর পাশে ও মধুপুর শেখ বাড়ি কবরস্থানসহ বেশ কয়েকটি স্পটে ভাঙন দেখা দিয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড তেরখাদা উপজেলার উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. সেলিম রেজা বলেন, ‘মধুপুর স্লুইসগেট সংলগ্ন বাঁধে জিও ব্যাগ ফেলানো হয়েছে। পারহাজী গ্রামেরসহ ঝুঁকিপূর্ণ অন্যান্য স্পটে দ্রুত টেন্ডারের মাধ্যমে কাজ শুরু করা হবে।’
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available