লালমনিরহাট প্রতিনিধি: লালমনিরহাটে তিস্তার পানি কমতে শুরু করলেও লালমনিরহাট তিস্তাপাড়ে বন্যা পরিস্থিতি এখনো অপরিবর্তিত অবস্থায় রয়েছে। টানা কয়েকদিন ধরে বৃষ্টি আর উজানের পাহাড়ি ঢলে নেমে আসা পানিতে তিস্তা নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এতে লালমনিরহাটের পাঁচটি উপজেলার ২১টি ইউনিয়নের প্রায় ২৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। অনেকে বাড়ি-ঘর ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছে সরকারি রাস্তায় ও আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধের ওপরে। বন্যাদুর্গত এলাকায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ কয়েক হেক্টর জমির আমন ধান ও শাক-সবজির খেত তলিয়ে গেছে পানিতে। এখনো বন্ধ রয়েছে জেলার ১৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
৩০ সেপ্টেম্বর সোমবার বেলা তিনটায় তিস্তা ডালিয়া পয়েন্টে পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫১.৭২ মিটার যা বিপদ সীমার ৪৩ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এর আগে ২৯ সেপ্টেম্বর রোববার বেলা ১২টায় তিস্তা নদীর ব্যারাজ পয়েন্টে পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২.১৫ মিটার (স্বাভাবিক ৫২.১৫ মিটার) যা বিপদসীমার ৩ মিটার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। এ অবস্থায় লালমনিরহাট তিস্তা নদী সংলগ্ন চর এলাকার বাসিন্দাদের দ্রুত নিরাপদ স্থানে সরে যেতে বলা হয়। তবে বর্তমানে পানি কমলেও ভাঙ্গনের আশঙ্কায় দুশ্চিন্তায় রয়েছে নদী পারের মানুষজন।
তিস্তাপারের লোকজনের সাথে কথা বললে তারা জানান, প্রতিবছরে এভাবে তিস্তার পানি কমা বাড়ার সাথে সাথে আমাদের দুর্ভোগ বাড়ে। আমাদের যতটুকু পুঁজি থাকে বাড়িঘর ভাঙ্গনের ফলে ও ফসলি জমি, ফসলের ক্ষতির কারণে আমরা নিঃস্ব হয়ে যাই। তাই আমরা এর স্থায়ী সমাধান চাই।
লালমনিরহাট সদর উপজেলার গোকুন্ডা ইউনিয়নের চর গোকুন্ডা গ্রামের কৃষক আজিজ উদ্দিন (৬৫) জানান, তিস্তাপাড়ে অসময়ে বন্যা পরিস্থিতিতে তারা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। ঘরের ভেতর এখন ২ থেকে ৩ ফুট পানি। বানের পানি নামছে। পানি নামার পর দেখা দিবে নদীভাঙন। রোপা আমন ধান নিয়ে চিন্তিত নন তারা। তবে পানির নিচে তলিয়ে থাকা শীতকালীন শাক-সবজি নিয়ে চিন্তিত রয়েছেন।
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার জানিয়েছেন, তিস্তাপাড়ে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। বন্যা উপদ্রুত এলাকাগুলো থেকে পানি নামতে শুরু করেছে। মঙ্গলবারের মধ্যে বন্যা পরিস্থিতির সার্বিক উন্নতি হবে। তবে এলাকাবাসীরা বলছেন তিস্তার পানি নেমে যাওয়ার সাথে সাথে ভাঙনের আশঙ্কা বেড়ে যায় এর ফলে চরম দুর্ভোগে পরে তিস্তার পারের লোকজন।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার বলেছেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তিস্তাপাড়ে পানি বন্দি লোকদের মাঝে ত্রাণ সহায়তা দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৯০ মেট্রিক টন চাউল ও নগদ তিন লক্ষ টাকা। এর সাথে শিশু খাদ্যের জন্য ৫ লক্ষ টাকা এবং গো-খাদ্যের জন্য ৫ লক্ষ টাকা সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available