রংপুর ব্যুরো: রংপুরের প্রত্যন্ত এলাকার ছোট্ট গ্রাম পালিচড়া, এ এলাকার মানুষের অভাব অনাটনের মধ্য দিয়ে চলে জীবন যাপন। এরি মাঝে তিল তিল করে গড়ে উঠে নারী ফুটবলার। বর্তমানে নারী ফুটলারের গ্রাম নামে পরিচিত পালিচড়া গ্রামটি। ২০১১ সাল থেকে শুরু হয় নারীদের খেলা ধুলা। এই গ্রাম থেকে উঠে আসে বর্তমান জাতীয় দল ও বয়সভিত্তিক খেলাধুলা।
পীরগঞ্জ পৌরসভা এলাকার ধানশালা গ্রামের মো. রফিকুল ইসলামের ছেলে মো. লিওন। ১১ সদস্যের খেলোয়াড়দের মধ্যে ফরোয়ার্ড হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন লিওন। গাইবান্ধার আরেক ছেলে পাভেল বাবুও এই ব্রাজিল সফরের জন্য নির্বাচিত হয়েছিলেন ২২ সালে। মেয়েদের পাশাপাশি ছেলেদেরকেও বিদেশের পাতলে দেশের সুনাম অর্জনে যেতে দেখা যায়।
তবে নারী ফুটলারদের তুলনা নেই। এক নামে পরিচিতি পেয়েছে রংপুরের পালিচড়া, যা বর্তমানে নারী ফুটলারদের গ্রাম নামে পরিচিত। তাইতো এই কিশোরীদের এমন অর্জনের খবর ছুঁয়ে গেছে পুরো এলাকায়। ফুটবল এবং বিশেষ করে মেয়েদের ফুটবল ঘিরে তাদের এলাকায়। এই কিশোরীদের উঠে আসার পথে ছিল পারিবারিক ও সামাজিক বাধা। তবে সেসব দূরে ঠেলে আপাতত এলাকার নাম বিখ্যাত হওয়ার আনন্দে ভাসছেন স্থানীয়রা।
সম্প্রতি আট বিভাগের ৪০ জন খেলোয়াড় থেকে সেরা ১১ জন খেলোয়াড় বাছাই করেছে বিকেএসপি। এরমধ্যে চারজনই পালিচড়ার। আর জাতীয় টিমে খেলার পর থেকে এ ৪ জনে নজর কেড়ে নিয়েছে সবার।
মাঠে আসার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা আছে দারিদ্রের জন্যও। ভ্যান চালক এনামুল হক জানান, তার মেয়ে এনিমা আক্তারকে প্রতিদিন ১০ কিলোমিটার দূর থেকে অনুশীলনে নিয়ে আসা আসলে সহজ নয়। এতে খরচটা পড়ে অনেক। তবে মেয়ের জেদের কারণে তাকে সেটা করাতে হচ্ছে।
অনেক মেয়েই বেশ দূর থেকে আসে অনুশীলনে। পর্তুগালে ক্যাম্পে সুযোগ পাওয়া নাসরিন জানায়, অন্তত একটা বাইসাইকেল হলে তাদের চলার পথ হতো, কোন বাইসাইকেলও নেই, পরিবার আসলে তা কিনে দেওয়ার সামর্থ্য নেই। এভাবে বাকিদের জীবনের চেয়ে ভিন্ন মাত্রায় গড়ে উঠে নারী ফুটবলার নাসরিনের জীবন।
২০১১ সালে পালিচড়া মেয়েদের ফুটবলের স্বপ্নযাত্রা শুরু। ফুটবল পাগল মেয়েরা তখন একটি দল তৈরি করে। সামাজিক পরিস্থিতি ছিল তখন ভীষণ প্রতিকূলে। মেয়েরা ফুটবল খেলবে, এটা মেনে নিতে পারছিল না অনেকেই। সব বাধার বিপক্ষে দাঁড়িয়ে নয়াপুকুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে ২০১১ সালে ১১ জন মেয়েকে নিয়ে শুরু হয় খেলা। সে সময় মেয়েদের ফুটবলে ইতিবাচক ভূমিকা রাখা স্থানীয় জাকির হাসান জানান, কয়েক মাসের মধ্যে সংখ্যাটা বেড়ে হয় ২১ শে।
এরপর তারা অংশ নেয় বঙ্গমাতা ফজিলাতুননেসা মুজিব গোল্ডকাপে। সেই টুর্নামেন্টে বিভাগীয় পর্যায়ে ও জাতীয় পর্যায়ে সেরা সাফল্য ধরে বদলে যেতে থাকে তাদের ছবি। এই গ্রামের মেয়ের ২০১৫ সাল ও ২০১৬ সালে কেএফসি কাপে। ২০১৭ সালে জেএফএ অনূর্ধ্ব-১৫ আসরেও চ্যাম্পিয়ন হয় তারা। সেবার রংপুর জেলা হারিয়েছিল ময়মনসিংহকে। দলের নাম রংপুর থাকলেও পুরো দলটি আসলে সদর উপজেলার সদ্যপুষ্করিণী ইউনিয়নের পালিচড়া গ্রামেরই।
সেই পালিচড়ায় হয়েছে মেয়ের জন্য এখন বড় মাপের একটি স্টেডিয়াম। আর সেখানে ছোট-বড় অনেক নারী ফুটবলার তাদের স্বপ্ন জাতীয় পর্যায় খেলার।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available