রাজশাহী ব্যুরো: রাজশাহীর মোহনপুরে ক্ষমতাসীন দলের দু'পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় অন্তত ৩ জন গুরুতর আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। ১৫ জানুয়ারি সোমবার সন্ধ্যায় উপজেলার শ্যামপুর বাজারে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় রণক্ষেত্রে পরিণত হয় পুরো বাজার এলাকা। পরিস্থিতি শান্ত করতে পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয় সে সময়।
এ ঘটনায় বকুল গ্রুপের শ্যামপুর গ্রামের মফিজুল ইসলামের ছেলে মাসুম তারেক বাদী হয়ে মোহনপুর থানায় আমজাদ গ্রুপের ২২ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ৫০/৬০ জনকে অজ্ঞাত নামা আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন। মামলার সূত্র ধরে পুলিশ মহিষকুন্ডী গ্রামের মৃত আব্বাস আলীর ছেলে শহিদুল ইসলামকে আটক করেছে। বাকী আসামিদের ধরতে পুলিশ তৎপর রয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গত কয়েকদিন থেকে সাবেক সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন এমপির সমর্থক আমজাদ গ্রুপের সাথে বর্তমান সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান আসাদের সমর্থক ঘাসিগ্রাম ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আফজাল হোসেন বকুল গ্রুপের দ্বন্দ্ব চলছে। গত ১৪ জানুয়ারি রোববার আয়েন গ্রুপের বড় দেউপুর গ্রামের বিলায়েত সরদারের ছেলে আমজাদের সাথে বকুল গ্রুপের সদস্যদের ঝগড়া বিবাদ হয়। এর পরদিন সোমবার বিকেলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এডভোকেট আব্দুস সালাম শ্যামপুর বাজারে আমজাদসহ তার লোকজনের সাথে দেখা করতে আসেন। ওই সময় এডভোকেট আব্দুস সালামের সাথে দেখা করতে আসেন আমজাদ, আতা নারায়নপুর গ্রামের রহিম উদ্দিন সরকারের ছেলে কুদ্দুসসহ অন্যরা।
আলাপ-আলোচনা শেষে এডভোকেট আব্দুস সালাম শ্যামপুর হাট বাজার থেকে চলে যান। এরপর আমজাদ ও কুদ্দুসের সাথে বকুল গ্রুপের সদস্যরা তর্কে জড়িয়ে যায় এবং তাদের উপরে চড়াও হয়। একপর্যায়ে আমজাদ ও কুদ্দুস বাজারের এক দোকানে ঢুকে নিজেদের রক্ষা করে ও তাদের বিভিন্ন গ্রামের সমর্থকদের বিষয়টি মুঠো ফোনের মাধ্যমে জানিয়ে দেন। এই খবর পেয়ে আমজাদ গ্রুপের অনেক নেতাকর্মী দ্রুত ঘটনা স্থলে উপস্থিত হন। খবর পেয়ে শ্যামপুর বাজারে ফিরে আসেন এডভোকেট আব্দুস সালাম। অপরদিকে এই খবর পেয়ে মোহনপুর থানা পুলিশের কয়েকটি টিম দ্রুত ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে আমজাদ ও কুদ্দুসকে উদ্ধার করে পরিস্থিতি শান্ত রাখার চেষ্টা করে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানান, এ সময় আমজাদের পক্ষের লোকজন স্থানীয় টেইলার্স মহিষকুন্ডি গ্রামের শফিকুল ইসলামকে মারধর করে শ্যামপুর হাট কলেজ গেটে গিয়ে অবস্থান নেয়। সেখানে গোছা গ্রামের মৃত মনির সোনারের ছেলে মতিন, শ্যামপুর গ্রামের মৃত আলি হোসেনের ছেলে রাজাকে মারধর করে গুরুতর জখম করে। এরপর দু'পক্ষের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। একপর্যায়ে থানা পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়। সংঘর্ষের পরপরই খবর পেয়ে আফজাল হোসেন বকুল দ্রুত ঘটনাস্থলে আসেন এবং তার সমর্থকদের শান্ত করেন।
পরে পরিস্থিতি নিয়ে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন আফজাল হোসেন বকুল। এসময় তিনি দাবি করেন, আমজাদ পক্ষের লোকজনের হামলায় তার ৫ জন কর্মী-সমর্থক গুরুতর আহত হয়েছেন। আহতদের মোহনপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তিনি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি জানান, সাবেক সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন এমপির লোকজন দীর্ঘ ১০ বছর তাদের উপর নির্যাতন চালিয়েছেন। এ কারণে ক্ষমতার পালা বদলে নির্যাতিতরা তাদের মনোকষ্ট কিছুটা প্রকাশ করেছেন। তাতেই তারা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছে।
মোহনপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হরিদাস মন্ডল জানান, সংঘর্ষের খবর পেয়ে পুলিশ খুব দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে। এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে এবং মামলা সূত্রে ১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকীদের ধরতে পুলিশ তৎপর রয়েছে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available