খোকসা (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি: কুষ্টিয়ার খোকসা থানায় দুই ভাটা শ্রমিককে আটকে রেখে চোখ বেঁধে রাতভর নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। ২ এপ্রিল মঙ্গলবার গভীর রাতে থানা হাজতে তাদের নির্যাতন করা হয় এবং বুধবার তাদের আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়। ৪ এপ্রিল বৃহস্পতিবার জামিনে মুক্তি পেয়ে ভাটা শ্রমিক সুরুজ শেখের অবস্থার অবনতি হলে খোকসা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
৭ এপ্রিল রোববার খোকসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন সুরুজ শেখের সাথে কথা বললে জানান, নদী ভাঙ্গনে তাদের বসতবাড়ি বিলীন হয়ে গেলে ১৫ বছর আগে খোকসা জয়ন্তীহাজরা ইউনিয়নের ফুলবাড়িয়া গ্রামে এসে বাড়ি করেন। গত ১ এপ্রিল সোমবার পার্শ্ববর্তী তার আত্মীয় নজরুলের বাড়িতে চিল্লাচিল্লি শুনে সেখানে গেলে জানতে পারেন, তার স্ত্রীর বড় বোন ও নজরুলের চাচাতো বোন মাজেদাকে নজরুল ঢাকা গাজীপুর বসবাসকালে জামিনদার হয়ে চার মাস পূর্বে একটি এনজিও থেকে ৯০ হাজার টাকা ঋণ তুলে দেন। ঋণ তোলার পর মাজেদা কিস্তির টাকা না দেওয়ায় এনজিও'র লোকজন নজরুলকে কিস্তির জন্য চাপ দেয়। একপর্যায়ে নজরুল ঢাকা গাজীপুর ভাড়া বাসায় সমস্ত জিনিসপত্র ফেলে রেখে স্ত্রীকে নিয়ে পালিয়ে গ্রামের বাড়িতে চলে আসেন।
নজরুল একাধিকবার এনজিও'র কিস্তি নিয়ে মাজেদার সাথে কথা বলে সুরাহা করতে না পারায় সোমবার মাজেদাকে তার গ্রামের বাড়ি হাজির করে ঢাকায় ফেলে আসা মালামালের টাকা দাবি করেন। এক পর্যায়ে স্টাম্পে স্বাক্ষর করানো হয় মাজেদাকে দিয়ে। সেই স্ট্যাম্পে তিনি স্বাক্ষী হতে রাজি হন। পরবর্তীতে মঙ্গলবার বেলা ২টার দিকে খোকসা থানার এএসআই দেলোয়ার তাকে ও সাব্বির নামে আরেক ভাটা শ্রমিককে থানায় নিয়ে আসেন। পরে জানতে পারেন মাজেদার দেবর শাহিন তাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ দিয়েছে খোকসা থানায়। ওইদিন রাত আনুমানিক দেড়টা থেকে দুইটার মধ্যে তার হাত এবং চোখ বেঁধে নির্যাতন করে পুলিশ। তিনি নির্যাতন সইতে না পেরে পুলিশকে বলেন এভাবে মারার থেকে একেবারে মেরে ফেলেন বা আমাকে ছেড়ে দেন। আমি নিজের জীবন নিজেই বের করে দিচ্ছি। পরের দিন তাদের কোর্টে চালান দেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার জামিনে মুক্তি পেয়ে অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
খোকসা থানার এএসআই দেলোয়ার হোসেন জানান, সুরুজ আলীর বিরুদ্ধে অভিযোগের কারণে তাকে ধরে আনা হয়। নির্যাতনের বিষয়ে জানান, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই সাইফুল। তাছাড়া ওই রাতে তিনি থানায় ছিলেন না। রাতে টহলে ছিলেন।
এসআই সাইফুল জানান, ফাঁকা স্ট্যাম্পে জোরপূর্বক সই করিয়ে নেওয়ার ঘটনায় খোকসা থানায় ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। সেই মামলায় তাদের চালান দেওয়া হয়। নির্যাতনের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
খোকসা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আন-নূর যায়েদ জানান, নির্যাতনের বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। আর এই মামলার আসামি যে খোকসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি আছে সেটা তার জানা নেই।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available