টিংকার জান্নাত মীম, একজন সফল নারী উদ্যোক্তা, প্রশিক্ষক ও ইনফ্লুয়েনশিয়াল স্পিকার। তিনি পক বিজনেস গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি)। আরও বেশি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের নানাভাবে সম্পৃক্ত রয়েছেন তিনি। পাশাপাশি গত ৯ বছর যাবৎ নারী উন্নয়ন ও সাইবার ক্রাইমের শিকার নারীদের বিভিন্ন আইনী সহায়তা পেতে সাহায্য করছেন মীম। কাজের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি ইতোমধ্যে বেশ কিছু জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছেন। তাঁর সফল হয়ে ওঠার নানা গল্প নিয়ে এশিয়ান টিভি অনলাইনের সাথে কথা হয় এই নারী উদ্যোক্তার। আলাপচারিতায় ছিলেন নুরুল ইসলাম।
প্রশ্ন: কখন ও কীভাবে উদ্যোক্তা হওয়ার পথ চলা শুরু হলো?
টিংকার জান্নাত মীম: ২০১৪ সালে সোশ্যাল মিডিয়াতে ‘পপ অফ কালার’ নামক প্ল্যাটফর্ম তৈরির মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে একজন উদ্যোক্তা হিসেবে পথ চলা শুরু হয়। আমার চিন্তা ছিল, মেয়েদের ভেতরে যেসব দক্ষতা আছে কোনভাবে সেটাকে যদি একটু বের করে আনা যায় বা যত্ন করা যায়, তাহলে নারীদের দিয়ে আরও ভালো কিছু করা সম্ভব। তাই, আমি সবসময় নারীদের নিয়ে এবং নারীদের জন্য ভালো কিছু করতে চাইতাম। ঠিক কীভাবে করলে ভালোভাবে করতে পারবো, সেটা বুঝের ওঠার পরই কাজে লেগে যাই।
প্রশ্ন: অনুপ্রেরণা কোথায় কীভাবে পেয়েছিলেন?
টিংকার জান্নাত মীম: ছোটবেলা থেকে প্রচুর বই পড়তাম। আমার আব্বাও বই পড়তেন। উনার বইগুলো দিয়ে আমার বই পড়ার প্রতি আগ্রহ শুরু হয়। শুরুর দিকে ইন্ডিয়ান লেখকদের বই পড়েছি। ওখান থেকে আমার আসলে নারীদের জন্য কিছু করার চিন্তাটা মাথায় আসে। নারীদের নিয়ে যখন কোনো ফিচার দেখতাম বা পড়া হতো। সেগুলো থেকেও অনুপ্রেরণা পেতাম। ভাবতাম, তাদের মতো আমাকেও ভালো কিছু করতে হবে। আর সেই সাথে তাড়না অনুভব করতাম, আশেপাশে খারাপ অবস্থায় থাকা নারীদের জন্য কিছু একটা করার।
প্রশ্ন: এ পথ চলার গল্পটা বলুন।
টিংকার জান্নাত মীম: আমার পথ চলাটা একটু অদ্ভুত। কারণ, আমি যখন আসলে ২০১৪ সাল থেকে কাজ শুরু করি। তখন ওভাবে করে আমার এই ইনফ্লুয়েন্সিং, সোশ্যাল মিডিয়া, ব্র্যান্ড প্রমোটিং বা নারী ক্ষমতায়ন নিয়ে ওভাবে কেউ কাজ করতো না। তাই আমি যাদের নিয়ে, যে সকল ব্র্যান্ডকে পাশে নিয়ে আমার এই উদ্যোগগুলো বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করেছি, সেগুলো তাদের বোঝানো একটু কষ্ট সাধ্য ছিলো। তাছাড়া, আমি তখন উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করেছি মাত্র। তাই, আমার আইডিয়া কতটুকুই বা কাজে লাগবে, এটা অন্যদের কাছে একটা বড় দ্বিধার বিষয় ছিলো। কিন্তু ব্র্যান্ডগুলো আমার উপর বিশ্বাস রেখেছে। ফলে প্রথম দিকে ইন্টারন্যাশনাল ব্র্যান্ড ভিটের সাথে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। এরপর পর্যায়ক্রমে ইউনিলিভার, আড়ং, স্কয়ার, সেনোরা, এসিআই, প্রাণ, বিকাশ, গ্রামীণ ডানোন, হরলিক্স আরএফএল, ফার্ম ফ্রেশ, গোল্ডেন রোজ, মারিকো,ইনসেপ্টার ফার্মাসিটিউক্যাল, অডি, ফ্রেশ, এপেক্স, কুমারিকা, হিমালয়া, রাঁধুনি, ফ্রেশ, ব্র্যাক ব্যাংকসহ আরও অনেকের সাথে দীর্ঘদিন যাবৎ কাজ করে যাচ্ছি। এরপরে আমাকে আসলে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয় নি। নারীদেরকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করাটাই আমার প্রধান উদ্দেশ্য ছিলো। তাদেরকে ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করতে গিয়ে বিভিন্ন সময় অনেক ঘাটতি আমার চোখে পড়ে। সেই ঘাটতি পূরণে ছয়টি কনসার্নের যাত্রা শুরু হয়। আর পুরো বিষয়টাকে একত্রে পরিচালনা করছে আমাদের মূল প্রতিষ্ঠান পক বিজনেস গ্রুপ। এই ছয়টি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে- পপ অফ কালার, পপ অফ ফ্লেভার, পপ অফ হোপ, পপ অফ সিক্রেটস, পক’স ক্রিয়েটিভ হাইভ ও টিজে এম।
প্রশ্ন: কী কী প্রতিবন্ধকতা ছিলো সেখানে?
টিংকার জান্নাত মীম: প্রতিবন্ধকতা ছিলো একটাই, সেটা ছিলো আমার পরিবারের সবাই অনেক পড়াশোনা করা। একটা পর একটা ডিগ্রি নেয়ার প্রতি খুব বেশি তারা সচেতন ছিলো। সরকারি চাকরি, দুইটা বিষয়ে মাস্টার্স করেছে তারা। একবার বিসিএসএ টেকার পরও আবার বিসিএস দিয়ে ক্যাডার চেঞ্জ করছে, এরকম দেখে আসছি। আর যারা অনেক বেশি পড়ুয়া হয়, সোশ্যাল মিডিয়াতে একটু তাদের পদচারণা কম হয়। আমার বাসায় যেহেতু সবাই খুব পড়ুয়া, খুব সাকসেসফুল ক্যারিয়ার তাদের। সে কারণে তাদের পক্ষে সোশ্যাল মিডিয়াতে আমার কাজটা মেনে নেয়া খুব কঠিন ছিলো। তারা মনে করতেন, এটা সময় অপচয় বা অপ্রয়োজনীয় কোনো একটা কাজ। তারা চিন্তা করতেন, এর মাধ্যমে আমি কোনো বিপথে জড়িয়ে যাই কিনা। সময়ের সাথে সাথে কাজের মাধ্যমে প্রতিবন্ধকতাগুলো উতরে যেতে সক্ষম হয়েছি।
প্রশ্ন: স্বপ্ন বা ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে বলুন।
টিংকার জান্নাত মীম: আমাদের পপ অফ কালারে ঢাকার কমার্শিয়াল এরিয়াতে যে প্রথম অফিস হয়েছে, সেটির ১০ বছরে আমরা পা দেবে সামনের ডিসেম্বরের ৮ তারিখ। আমাদের অফিসটি এরকম একটি জায়গা যেখানে নারীরা যেকোনো সমস্যা নিয়েই আসুক না কেন, তার সমাধান দেয়ার চেষ্টা করা হবে। শুধু বিভাগগুলোতে না আমরা জেলা, উপজেলা, মফস্বল গ্রাম; প্রত্যেক এলাকাতেই আমাদের উদ্যোগকে ছড়িয়ে দিতে চাই। মাথায় ঢুকিয়ে দিতে চাই, আসলে পপ অফ কালার এমন একটি জায়গা, যেখানে নারীরা তাদের সমস্যার সমস্ত সমাধান পেয়ে যাবেন।
প্রশ্ন: নতুনদের উঠে আসার ব্যাপারে কী ধরনের সুযোগ-সুবিধা রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে দেয়ার আছে বলে মনে করেন?
টিংকার জান্নাত মীম: নতুনদের উঠে আসার ব্যাপারে সাপোর্ট দেয়ার দরকার আছে। অনেকে অনেক ধরনের সাইবার ক্রাইমের শিকার হয়। এ ব্যাপারে সহজে এবং দ্রুত সাপোর্ট দেয়ার ব্যবস্থা থাকা দরকার। দেশের বাইরের ক্লায়েন্টদের সাথে যারা ফ্রিল্যান্সিং এ কাজ করেন, তারা যেন কোনো প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই তাদের টাকাটা দ্রুততম সময়ে নিয়ে আসতে পারেন; সেটার ব্যবস্থা করা দরকার। তাছাড়া, দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন বিষয়ের প্রশিক্ষণগুলোকে আরও সহজলভ্য করা প্রয়োজন।
প্রশ্ন: তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য আপনার পরামর্শ।
টিংকার জান্নাত মীম: আমার নিজের অভিজ্ঞিতার আলোকে আমি যে পরামর্শটা দিতে পারি সেটা হলো, অবশ্যই সৃষ্টিকর্তার অনুগ্রহ চাইতে হবে এবং নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখতে হবে। দৃঢ় মনোবলে সামনে এগিয়ে যেতে হবে এবং অবশ্যই নিজের কাজের প্রতি সৎ থাকতে হবে। তাহলেই সফলতা আসবে, ইনশা আল্লাহ।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available