হাবিবুর রহমান পারভেজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া: ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হয়ে গেল ভাটি গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা। বছর ঘুরে আবারো ছলাৎ ছলাৎ শব্দে গর্জে উঠলো তিতাস তীরে সুন্দইরা মাঝির বৈঠা। উৎসবে মাতোয়ারা তিতাস তীর। এই দিনটির জন্য পুরোটা বছর অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় থাকেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ক্রীড়াপ্রেমীরা। চমৎকার এই ক্ষণে সামিল হতে সকাল থেকেই তিতাস পাড়ে ভিড় করেন দর্শকরা। তিতাসের বুকে পড়ন্ত বিকেলে এ নৌকা বাইচ দেখতে ভিড় করেন প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ। চমৎকার এই বাইচ দেখে দারুণ খুশি দর্শকরা।
শহরের যান্ত্রিক কোলাহল আর অপসংস্কৃতির আড়ালে দিন দিন হারাতে বসেছে বাঙালির প্রাণের উৎসব আর সংস্কৃতি। তবুও যেটুকু টিকে আছে, তাতেই খুশি সহজ সরল এই মানুষগুলো। পড়ন্ত বিকেলে চমৎকার এই নৌকা বাইচ তাদের নিয়ে গেছে এক রকম ঘোরের রাজ্যে। নৌকা বাইচ উপলক্ষে শহরজুড়ে উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়। ভাদ্রের তপ্ত দুপুর গড়ানোর আগেই জেলার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ছোট বড় নৌকা নিয়ে উৎসাহী দর্শকরা নদীর দুই পাড়ে হাজির হতে থাকেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জেলা প্রশাসনের আয়োজনে এবং বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি লি., দারাজ বাংলাদেশ ও ইউনিভার্সেল মেডিকেলের সহযোগিতায় তিতাস নদীতে ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। তিতাসের বুকভরা ঢেউ আর প্রাণভরা উচ্ছ্বাসে পৌর এলাকার শিমরাইলকান্দি গাঁওগ্রাম এলাকা থেকে মেড্ডার শিশু পরিবার এলাকায় তিতাস নদীতে অনুষ্ঠিত হয় এই নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা।
এবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সদরের ৪টি, বিজয়নগর উপজেলার ৫টি, নবীনগর উপজেলার ২টি, আশুগঞ্জ উপজেলার ২টি ও নাসিরনগর উপজেলার ১টিসহ মোট ১৫টি প্রতিযোগী দল তাদের সুসজ্জিত নৌকা আর রং বে-রঙের বাহারি পোশাক পরে এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। প্রতিযোগিতা চলার সময় বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে মাঝিদের ভাটিয়ালী গান আর পানিতে বৈঠার ছলাৎ ছলাৎ আওয়াজে পুরো এলাকা মুখরিত হয়।
৭ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টার দিকে পৌর এলাকার শিমরাইলকান্দি গাঁওগ্রাম এলাকায় নৌকা বাইচের উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি স্থানীয় সংসদ সদস্য ও বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রনালয় সর্ম্পকিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি র.আ.ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী।
প্রতিযোগিতা শেষে মেড্ডার কালাগাজীর মাজার এলাকায় পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ও বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রনালয় সর্ম্পকিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি র.আ.ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী। জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলমের সভাপতিত্বে অতিথি ছিলেন বিশেষ অতিথি ছিলেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাখাওয়াত হোসেন, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার, পৌর মেয়র মিসেস নায়ার কবির, প্রেসক্লাবের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জসীম উদ্দিন।
নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অর্জন করে নবীনগর উপজেলা নৌকা, দ্বিতীয় স্থান অর্জন করে সরাইল উপজেলা নৌকা এবং তৃতীয় স্থান অর্জন করে আশুগঞ্জ উপজেলার নৌকা। পরে প্রধান অতিথি প্রথম স্থান অর্জনকারী দলকে ১ লাখ টাকা, দ্বিতীয় স্থান অর্জনকারীকে ৫০ হাজার টাকা এবং তৃতীয় স্থান অর্জনকারীকে ৩০ হাজার টাকা এবং ট্রফি উপহার হিসেবে প্রদান করেন।
এছাড়াও প্রতিযোগীতায় অংশগ্রহণকারী প্রত্যেক দলকে নগদ ২৫ হাজার টাকা করে প্রদান করা হয়। এদিকে নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা উপভোগ করতে দুপুর থেকেই জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও আশপাশ এলাকা থেকে হাজার-হাজার মানুষ তিতাসের দু’পাড়ে, বিভিন্ন ভবনের ছাদের উপর ভিড় জমায়। অনেকেই নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা উপভোগ করতে ছোট ছোট নৌকা ভাড়া করে পরিবার পরিজন নিয়ে তিতাস নদীর বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেন অনেকেই।
নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা চলার সময় শিমরাইলকান্দি গাঁওগ্রাম এলাকা থেকে মেড্ডা শিশু পরিবার এলাকা পর্যন্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ১০টি মোবাইল কোর্ট টিমসহ বিপুল সংখ্যক পুলিশ, আনসার ফায়ার সার্ভিস, বিএনসিসি, নৌ-পুলিশ, ডুবুরীদল, ফায়ার সার্ভিস ও মেডিকেল টিম নিয়োজিত ছিল। এছাড়াও ছিল ডুবুরীদল, ফায়ার সার্ভিস ও মেডিকেল টিম। নিরাপত্তার জন্য আকাশে উড়ানো হয় ড্রোন।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available