আন্তর্জাতিক ডেস্ক: অর্ধযুগ আগে ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ নম্বর ধারা বাতিলের মাধ্যমে জম্মু ও কাশ্মিরে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব জারি করে নয়াদিল্লি। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের লক্ষ্য এবার পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরেরও নিয়ন্ত্রণ নেওয়া।
৫ মার্চ বুধবার ব্রিটেনের আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক থিঙ্কট্যাংক সংস্থা চ্যাথাম হাউসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা জানিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।
এ সময় ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এ ইস্যুতে আমরা ধাপে ধাপে এগোচ্ছি এবং আমি মনে করি, ইতোমধ্যে অনেকাংশে আমরা এটিকে গুছিয়ে এনেছি। প্রথম ধাপে আমরা (সংবিধানের) ৩৭০ নম্বর ধারা বাতিল করেছি, দ্বিতীয় ধাপে জম্মু-কাশ্মিরের উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক কার্যকলাপকে গতিশীল করা এবং সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার দিকে মনোযোগ দিয়েছি, তৃতীয় ধাপে আমরা সেখানে বিধানসভা নির্বাচন দিয়েছি এবং সেই নির্বাচনে প্রচুর ভোটার ভোট দিয়েছেন।
তিনি বলেন, এখন আমাদের সামনে আছে চতুর্থ ধাপ। এই ধাপে আমাদের লক্ষ্য হলো জম্মু-কাশ্মিরের চুরি যাওয়া অংশ উদ্ধার করা। আরও স্পষ্টভাবে বললে, জম্মু-কাশ্মিরের যে অংশটি পাকিস্তান অবৈধভাবে দখল করে রেখেছে, সেটিকে ভারতের মানচিত্রভুক্ত করা।
জয়শঙ্কর আরও বলেন, আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলছি, যদি এই লক্ষ্য আমরা সফলভাবে অর্জন করতে পারি, সেক্ষেত্রে কাশ্মির ইস্যু নামে আর কোনো সংকট থাকবে না। এটিই এ সংকটের চূড়ান্ত সমাধান।
১৯৪৭ সালে ব্রিটেনের ঔপনিবেশিক শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভের জন্য ভারত ও পাকিস্তানের আলাদা হয়ে যাওয়া থেকে কাশ্মির সংকটের শুরু। দুই রাষ্ট্রের সীমানা নির্ধারণের সময় জম্মু-কাশ্মির কোন রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত হবে সেখানকার শেষ রাজা হরি সিংয়ের কাছে তা জানতে চেয়েছিলেন ব্রিটেনের শাসকরা। কিন্তু বিভিন্ন দিক বিবেচনায় হরি সিং জানিয়েছিলেন, জম্মু-কাশ্মির স্বতন্ত্র রাষ্ট্র হিসেবে থাকবে; কোনো দেশের অংশ হবে না।
কিন্তু ১৪ আগস্ট স্বাধীনতা লাভের পর জম্মু-কাশ্মির দখলে অভিযান শুরু করে পাকিস্তান এবং কাশ্মিরের রাজধানী শ্রীনগরের অনতিদূরে পৌঁছে যায়। এই পরিস্থিতিতে কাশ্মিরের রাজা হরি সিং জম্মু-কাশ্মিরের ভারতে অন্তর্ভুক্তির দলিলে স্বাক্ষর করেন।
হরি সিংয়ের স্বাক্ষরের পর অভিযানে নামে ভারতের সেনাবাহিনী এবং পাকিস্তানি সেনারা পিছু হটতে বাধ্য হয়। সেই থেকে জম্মু-কাশ্মিরের মোট ভূখন্ডের ৪৩ শতাংশ ভারতের এবং ৩৭ শতাংশ পাকিস্তানের দখলে রয়েছে। বাকি ২০ শতাংশের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে চীনের হাতে। চীনের অধিকৃত ওই অঞ্চলটি সিয়াচেন নামে পরিচিত।
ভারতে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরু জম্মু-কাশ্মিরকে বিশেষ স্বায়ত্বশাসিত রাজ্যের মর্যাদা দিয়েছিলেন। ভারতের সংবিধানের ৩৭০ ধারায় এ সম্পর্কে বলা হয়েছিল, জম্মু-কাশ্মিরের অভ্যন্তরীণ ইস্যুতে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার কখনও হস্তক্ষেপ করতে পারবে না এবং ভারতের অন্য কোনো রাজ্যের লোকজন বা কোনো বিদেশি জম্মু-কাশ্মিরে জমি বা সম্পত্তি ক্রয় করতে পারবে না।
২০১৯ সালের ৫ আগস্ট পার্লামেন্টে কণ্ঠভোটের মাধ্যমে ৩৭০ ধারা বাতিল করে দেয় ক্ষমতাসীন বিজেপি।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available