মানিক ভূঁইয়া, নোয়াখালী: নোয়াখালীর সেনবাগে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয়। সেখানকার একটি ইউনিয়নেই ১২টি ইট ভাটা গড়ে উঠেছে। এসব ইট ভাটার কারণে দিন দিন পরিবেশ বিষিয়ে উঠছে। ফলে স্থানীয়রা ভুগছে স্বাশকষ্টসহ নানা রোগে। মাঠে উৎপাদন হচ্ছে না ফসল, গাছে ধরছে না ফল। আগামী প্রজন্মের জন্য সেনবাগের ছাতারপাইয়া হয়ে উঠছে অনিরাপদ।
সম্প্রতি সেনবাগের ছাতারপাইয়া ইউয়িনের এমকেবি ব্রিকফিল্ডে গিয়ে দেখা যায়, প্রকাশ্য দিবালোকে ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে স্তূপ করা হচ্ছে। সারিসারি মাটি কাটার ভেকু ব্রিক ফিল্ডের আশপাশের মাঠ দাবড়িয়ে বেড়াচ্ছে। অথচ, ব্রিক ফিল্ডের জন্য ফসলি জমি থেকে মাটি কাটা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কিন্তু এমকেবি ব্রিক ফিল্ড সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে প্রভাব খাটিয়ে দিনের পর দিন মাটি কেটে সাবাড় করছে ফসলি জমি।
ব্রিক ফিল্ডের কালো ধোঁয়ায় প্রায় সময় অন্ধকারে আচ্ছন্ন থাকে পুরো এলাকা। বিষাক্ত ধোয়া ও বাতাসের কারণে স্থানীয়রা ভুগছে নানা রকম রোগে। বিশেষ করে শিশুরা হাঁচি, কাশি, শ্বাসকষ্ট রোগ, এলার্জিসহ দীর্ঘ মেয়াদি বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
ব্রিক ফিল্ডের কারণে আশপাশের জমিতে হচ্ছে না ফসল, গাছেও ধরছে না ফল। পরিবেশ দূষিত হয়ে ব্রিক ফিল্ডের আশপাশ মানুষ বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। স্থানীয়রা এসব বিষয়ে প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিলেও কোনো কাজ হচ্ছে না। বরং প্রতিবাদ করলে উল্টো হয়রানির শিকার হতে হয়। ব্রিক ফিল্ডের মালিকরা প্রভাবশালী হওয়ায় প্রশাসনও নিরব ভূমিকা পালন করছে।
এ সব অনিয়মের বিষয়ে কথা বলার জন্য এমকেবি ব্রিক ফিল্ডের মালিক আবদুর রেজ্জাক ব্যাপারীকে পাওয়া যায়নি। তবে ব্রিক ফিল্ডের ম্যানেজার আবদুর রহিম জানান, সরকারি সব নিয়ম মেনেই আমরা ব্রিক ফিল্ড চালাচ্ছি। ডিসি অফিসের লাইসেন্স, পরিবেশ অফিসের ছাড়পত্রসহ সবগুলো সরকারি দপ্তরের কাগজপত্র রয়েছে। কেউ ষড়যন্ত্র করে আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। ফসলি জমি থেকে কেটে আনার বিষয়ে তিনি বলেন, ব্রিক ফিল্ডের জন্য মাটিতো লাগবেই। যেখান থেকেই হোক তা সংগ্রহ করতে হবে।
শুধু এমকেবি ব্রিক ফিল্ডই নয়, ছাতারপাইয়া ইউনিয়নে থাকা ১২টি ব্রিক ফিল্ডের একই চিত্র। কেউ মানছেন না সরকারি নিয়ম।
স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল করিম জানান, ইট ভাটার কালো ধোয়ার কারণে আমাদের বসবাস করাই কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি কর্তৃপক্ষ দেখেও না দেখার ভান করেন। তাছাড়া ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে নেয়ায় আগামীতে এ অঞ্চলে খাদ্য সংকটও দেখা দিতে পারে।
একই কথা বলেন, ওই এলাকার কৃষক মজিদ আলী, হাসেম মিয়া, কলিম উদ্দিন। তারা ইট ভাটাগুলোর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের ঊর্ধ্বত কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এ ব্যাপারে সেনবাগ উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজমুন নাহার জানান, ইট ভাটাগুলো পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে অনুমতি নিয়ে তাদের ব্যবসা করছে। আপনারা তাদের সাথে কথা বলুন। আমরা সুনিদৃষ্ট অভিযোগ পেলে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে থাকি।
একই ইউনিয়নের ১২টি ব্রিক ফিল্ড থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করে নোয়াখালী জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মিহির লাল সরদার জানান, ইট ভাটার অনুমোদনের সাথে জেলা প্রশাসনও জড়িত। কেউ আমাদের কাছে আবেদন করলে নিয়ম অনুযায়ী শর্তসাপেক্ষে ইট ভাটার ছাড়পত্র দিয়ে থাকি। তবু কেউ অনিয়ম করলে সরেজমিন গিয়ে সত্যতা পেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
নোয়াখালী জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান জানান, বিষয়টি নিয়ে আইনশৃংখলা মিটিংয়ে আলোচনা হয়েছে। কেউ আইন অমান্য করলে ছাড় দেয়া হবে না। পরিবেশ স্বাভাবিক রাখা, ফসলী জমি রক্ষার জন্য আমাদের জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে। প্রয়োজনে ইট ভাটাগুলোতে অভিযান চালানো হবে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available