মো. বাদল হোসেন, পটুয়াখালী প্রতিনিধি: কুয়াকাটায় সড়ক সংস্কারে ধীরগতিতে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে পর্যটকসহ স্থানীয় বাসিন্দারা। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের এ পর্যটন কেন্দ্র এলাকার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হচ্ছে মিশ্রীপাড়া। এখানে রয়েছে এশিয়া মহাদেশের বৃহৎ বৌদ্ধবিহার ও রাখাইন পল্লী। স্থানীয় বাজারে পাওয়া যায় রাখাইনদের হাতে তৈরি নানা পোশাক সামগ্রী। এসব পোশাক ও বৌদ্ধবিহার দেখতে পর্যটকের অন্যতম আকর্ষণ থাকে এই মিশ্রীপাড়া।
কুয়াকাটার কেন্দ্রস্থল থেকে মিশ্রীপাড়ার দূরত্ব প্রায় ১০ কিলোমিটার। কিন্তু যাতায়াত সমস্যার কারণে সেখানে যেতে ভোগান্তি পোহাতে হয় পর্যটককে। কুয়াকাটা পৌর এলাকার পর থেকে লতাচাপলী ইউনিয়নের কচ্ছপ আলী থেকে লক্ষ্মীর বাজার পর্যন্ত সাত কিলোমিটার রাস্তার অবস্থা খুবই খারাপ। সড়কের কার্পেটিং উঠে গেছে। তৈরি হয়েছে ছোট-বড় গর্ত। সড়ক দিয়ে ভ্যান, অটোবাইক, মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহন দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে মাঝেমধ্যেই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে পর্যটকসহ স্থানীয়রা।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আলী হোসেন বলেন, রাস্তাটি ৭ বছর ধরে খানাখন্দে ভরপুর। এতে এলাকার লোকজনের চলাচলে খুবই সমস্যা হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি কষ্ট হচ্ছে পর্যটকের। যারা কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতে আসে তারা এ রাস্তা দিয়েই মিশ্রীপাড়ার বৌদ্ধবিহার ও রাখাইন পল্লী দেখতে যায়। তাই সড়কটি নতুন করে সংস্কার প্রয়োজন।
মিরাজ নামের একজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, এটি একটি পর্যটন এলাকা। প্রতিদিন শত শত দর্শানার্থী এই রাস্তা দিয়ে ছুটে চলেন। কিন্তু রাস্তাটির অবস্থা বেহাল। ২০০৭ সালে নির্মাণের পর মাত্র একবার সংস্কার হয়েছে। এখন এটি আর স্বাভাবিক চলাচলের উপযোগী নেই। শুনেছি নতুন করে সংস্কারকাজ শুরু হয়েছে। এক কিলোমিটারের মতো করে বাকিটা ফেলে রাখা হয়েছে। রাস্তাটির দ্রুত সংস্কারকাজ শেষ হলে স্থানীয় বাসিন্দা ও পর্যটক সবারই উপকার হবে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে স্থানীয় ও আগত পর্যটকের দুর্ভোগ লাঘবের কথা চিন্তা করে সড়কটি সংস্কারে দরপত্র আহ্বান করে পটুয়াখালী এলজিইডি, কিন্তু সংস্কারকাজ শুরু হলেও তা আর শেষ হয়নি। ঠিকাদারের গাফিলতির কারণে এখনো ভাঙাচোরা অবস্থায় রয়েছে সড়কটি। এতে করে ভোগান্তির শিকার হয়ে কুয়াকাটা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে পর্যটকের অনেকে।
কলাপাড়া এলজিইডি অফিস সূত্রে জানা যায়, প্রায় ৬ কোটি টাকার এ কাজ পায় চট্টগ্রামের ইউনুস অ্যান্ড ব্রাদার্স এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। পরে বরগুনার শাহিন নামে এক ঠিকাদার তাদের কাছ থেকে কাজটি কিনে নেন। কিছুদিন কাজ করার পর তিনি কাজ বন্ধ করে দেন।
অটোচালক নুরুল হক বলেন, কুয়াকাটা থেকে প্রতিদিন পর্যটকরা রাখাইন পল্লী দেখার জন্য আসে। কিন্তু রাস্তা এত খারাপ যে একবার যে আসে দ্বিতীয়বার আর সে আসতে চায় না। এত পরিমাণ রাস্তা ভাঙা যে গাড়ি চালানো দুষ্কর হয়ে পড়ে। এভাবে চলতে থাকলে পর্যটক সংখ্যা কমতে থাকবে। তাই আমাদের দাবি অবিলম্বে এ সড়কটি ঠিক হয়।
মো. নজরুল ইসলাম নামের এক দর্শনার্থী বলেন, আমরা হাজার হাজার টাকা খরচ করে কুয়াকাটার বিভিন্ন সৌন্দর্য দেখতে আসি। কিন্তু রাস্তাঘাটের যে অবস্থা তাতে আমাদের টাকাটা নষ্ট হচ্ছে। সড়কের এমন দশা দীর্ঘদিন অব্যাহত থাকলে দর্শনার্থীরা কুয়াকাটা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে। কেউ দ্বিতীয়বার আসতে চাইবে না।
কলাপাড়া উপজেলা প্রকৌশলী মো. সাদেকুর রহমান বলেন, স্থানীয় ও পর্যকটের দুর্ভোগ লাগবে অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে সংস্কারকাজ শেষ করতে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে বলা হবে।
ঠিকাদার মো. শাহীন বলেন, আগামী চার-পাঁচ মাসের মধ্যে রাস্তাটির সংস্কার কাজ শেষ হবে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available