সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি: সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার বেশ কয়েকটা হাওরে সেঁচের পানির তীব্র শঙ্কট থাকায় হতাশায় দিন পারছে হাওরপাড়ের কয়েক লক্ষাধিক কৃষক। উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের বিভিন্ন হাওরের প্রায় ১৫০০ শত হেক্টর বোরো জমি শুকিয়ে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। সদ্য রোপণকৃত বোরো জমি ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। এতে ফসল উৎপাদন নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন স্থানীয় কৃষকরা।
সরজমিনে গিয়ে জানা গেছে, মৌসুমের শুরুতে উপজেলার বিভিন্ন নদী শুকিয়ে যাওয়ায় ৯ ইউনিয়নের অন্তত ১৫টি হাওরের কৃষি জমিতে পানি সরবরাহ সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। কাজে আসছে না পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির অধীনে সরকারের বিভিন্ন সেচ প্রকল্প।
প্রতিবছর বোরো মৌসুমে ওই সেচ প্রকল্পগুলো দিয়েই এ সকল হাওরে বোরো চাষাবাদ করেন এখানকার কৃষকরা। কয়েক বছর ধরে এসব সেচ প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের খামখেয়ালিপনা, পানি বণ্টনে একতরফা নীতি এবং নানা অনিয়ম-দুর্ণীতির কারণে বোরো আবাদের ভরা মৌসুমে পানি সরবরাহ থেকে বঞ্চিত হন উপকারভোগী কৃষকরা। চলতি বছরও বোরো জমিতে সেচ দেওয়া নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকেরা। বোরো চাষিদের সেচ চিন্তা এখন এই প্রকল্পের পানি। অথচ প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের খামখেয়ালিতে পানি পাচ্ছে না কৃষকেরা।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, বোরো মৌসুমে পানি সঙ্কট কাটিয়ে তুলতে নদী খননে নেই পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোনো কার্যকর পদক্ষেপ। নদী খনন না হওয়ার কারণেই প্রতিবছর তীব্র পানি সংকটে ভোগে হাওরপাড়ের কৃষকরা। নদী খনন না হওয়ায় সরকারের কোটি কোটি টাকার প্রকল্প কৃষকের কোনো কাজে আসছে না। কৃষকরা ধুঁকছেন পানি সঙ্কটে।
জীবন পুর গ্রামের কৃষক আবুল হোসেন বলেছেন, প্রতি বছর নদী খননে লাখ লাখ টাকা বরাদ্দ এনে কাজের কাজ কিছুই করা হয় না। এলজিইডি অফিসারের যোগসাজশে খননের নামে বরাদ্দের বেশির ভাগ টাকারই কাজ হয় না। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে নদী খননের বরাদ্দ দেওয়া হলেও আজ অবধি খনন কাজ প্রসেসিংই করা হয়নি। এবার সঠিক সময়ে সেচের পানি না পাওয়ায় ফসলি জমি ফেটে যাচ্ছে।
একই গ্রামের কৃষক চানমিয়া জানান, সেচ প্রকল্পে পানির অসুবিধার কারণে ক্ষেতের ধানের চারা লাল হয়ে মরে যাচ্ছে। খনন না করায় যেখানে সেচ মেশিন স্থাপন করা হয়েছে ওই জায়গায় এখন পানি নেই, কিন্তু একই নদী উত্তর দিকে পর্যাপ্ত পানি রয়েছে সেখান থেকে পানি সরবরাহের কোনো ব্যবস্থা করে দিচ্ছে না সংশ্লিষ্টরা। আর পানি সঙ্কটে চলতি বোরো মৌসুমে কয়েক হাজার হেক্টর বোরো ফসল বিনষ্ট হয়ে যাবে। কৃষকদের স্বপ্ন ভঙ্গ হবে এবার।
এ ব্যপারে দোয়ারাবাজার উপজেলা এলজিইডি’র উপ-সহকারী প্রকৌশলী জসিম উদ্দিন জানান, গত বছর সাহেবের গাঁও মরা সুরমা নদী খনন কাজে ২০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ এসেছিলো। এই টাকায় খনন কাজ সম্পন্ন হবে না বিধায় টাকা ফেরত পাঠানো হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকোশলী মামুন হাওলাদার জানান, দোয়ারবাজার উপজেলার বেশ কিছু নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় কৃষকরা বোরো ফসলে সেচ দেয়ার পানি সরবরাহ করতে পারছেন না। বেশ কিছু সেচ প্রকল্প থাকলেও পানির অভাবে সেগুলো কাজে আসছে না। আমরা নদী খনন কাজের জন্য প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি অনুমোদন পেলেই খনন কাজ শুরু করা হবে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available