পাবিপ্রবি প্রতিনিধি: পাবন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পাবিপ্রবি) ক্যাম্পাসে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থীদের একমাত্র খাবার গ্রহণের জায়গা কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়া। তবে উচ্চমূল্য, মানহীন খাবার, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার তৈরিসহ নানান সমস্যায় জর্জরিত একমাত্র এই ক্যাফেটেরিয়াটি। এ নিয়ে অভিযোগবক্সে অভিযোগ দিয়েও প্রতিকার পাননি শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, মানহীন খাবার গ্রহণের কারণে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। অনেকে এরমধ্যে ক্যাফেটেরিয়ার খাবার খেয়ে অসুস্থও হয়েছেন বলে জানান তারা। পঁচা আলু দিয়ে তৈরি সিঙারা, আগের দিনের বাসি হয়ে যাওয়া টক ডালসহ এমন অনেক মানহীন খাবার নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অভিযোগ লিখে আসছেন শিক্ষার্থীরা।
গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী মাজহারুল ইসলাম বলেন, ক্যাফেটেরিয়ায় সকালের নাস্তা করে আমার তিনবন্ধু পেটের সমস্যায় অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। আমরা খিচুড়ি, সিঙারা আর চা খেয়েছিলাম। আমি শুধু চা খাওয়ায় আমি অসুস্থ হয় নি। আমরা সিঙারাতে পঁচা আলু পেয়েছি। অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী আবির আহমেদ বলেন, বাসি খাবার অনেক দিন ধরেই খাওয়ানো হচ্ছে। এগুলোর তদারকি দরকার। আমি নিজেও এর ভুক্তভোগী।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পূর্বে ব্যবহৃত শৌচাগারের কমোডের উপর সিমেন্টের ঢালাই দিয়ে ঢেকে সেটি এখন ব্যবহৃত হচ্ছে রান্নার কাঁচামাল, চাল, ডাল, সবজি ধোয়া থেকে শুরু করে যাবতীয় পরিষ্কারের কাজ। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কোন ধরনের সুরক্ষা ছাড়াই রান্না করছেন ক্যাফেটেরিয়ার কর্মীরা। রান্না ঘরের কোন খাবারই ঢাকা নেই। মাছি বসছে খোলা খাবারে। এছাড়া ছাদে থাকা পানির ট্যাংকের ঢাকনা খোলা থাকা ও দীর্ঘ দিন পরিষ্কার না করার অভিযোগ করেন অনেকে।
তবে ক্যাফেটেরিয়ার ম্যানেজার সোহেল রানা জানান ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, আমরা যথেষ্ট স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে ও সতর্কতার সাথে খাবার প্রস্তুত ও সরবরাহ করি। আমাদের খাবার স্বাস্থ্যসম্মত না হলে এখানে খেয়ে সবাই অসুস্থ হতো। আর কেউ খেতেও আসতো না। তবে আমাদের কিছু সীমাবদ্ধতা আছে এবং সেগুলো কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার জানিয়েছি। কিন্তু তারা উদাসীন।
এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ফরিদুল ইসলাম বাবু বলেন, হলের ডাইনিং ও কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়ার অনিয়ম নিয়ে শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ দিনের অভিযোগ শুনে আসছি। মানহীন ও অস্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে শিক্ষার্থীরা প্রায়ই অসুস্থ হয়ে পড়ার খবর পাই। এ বিষয়ে কতৃপক্ষের উদাসীনতা সত্যিই হতাশাজনক। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত বিষয়গুলো তদারকি করা এবং প্রয়োজনে নতুন করে টেন্ডার দিয়ে এসব অব্যবস্থাপনার অবসান ঘটানো।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারের চিফ মেডিক্যাল অফিসার ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, সাংবাদিকের তুলে আনা ছবি দেখে আমি বিস্মিত। পূর্বে ব্যবহৃত টয়লেটে এখন খাবার প্রসেসিংয়ের কাজ চলছে, যা খুবই বাজে ব্যাপার। প্রথমত, এটি জানার পর কারোরই সেখানে খাওয়ার রুচি থাকবে না। এছাড়া এমন পরিবেশের খাবার খেলে নানাবিধ পেটের অসুখ , ডায়রিয়া ও ফুড পয়জনিংসহ নানা জটিলতায় ভুগতে পারে খাবার গ্রহণকারীরা। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার তৈরি, খাবার উন্মুক্ত রাখা ও মাছি বসার কারণে বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস খাবারে বংশবিস্তার করে। এমনকি এটি সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেমকেও ব্যাহত করতে পারে।
ক্যাফেটেরিয়ার পরিচালক ড. মো. শাহজাহান আলী জানান, নিম্নমানের খাবারের অভিযোগ আমিও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে পেয়েছি। আমি তাদেরকে এ বিষয়ে সতর্ক হতে নির্দেশনা দিয়েছি। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ খাবার প্রসেসিংয়ের বিশুদ্ধ পানির জন্য সাবমার্সিবল পাম্পের লাইনও করে দিয়েছে। সার্বিক বিষয়ে দ্রুতই পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস দেন তিনি।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available