বিপ্লব তালুকদার: খাগড়াছড়িতে পৌঁছে পর্যটকদের বাস থেকে নামতে হয় খাগড়াছড়ি পৌরসভা গেট অথবা শাপলা চত্বরে। সেখান থেকে একটু সামনে এগোলে হাতের ডান পাশে চোখে পড়বে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত বিভিন্ন পণ্যের বাজার। এখানে সপ্তাহে দু’দিন বাজার বসে। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার পূর্ণদিবস এবং সোমবার অর্ধদিবস।
যারা বাজারে সবজি-ফল নিয়ে আসে এদের অধিকাংশই পাহাড়ি নারী পুরুষ। স্থানীয়ভাবে এদের ত্রিপুরা, চাকমা ও মারমা সম্প্রদায় বলে থাকে। এ বাজারের দোকানিদের অধিকাংশই ত্রিপুরা-পাহাড়ি নারী। তারা বিভিন্ন ধরনের সবজি-ফল নিয়ে পসরা সাজিয়ে বসেন খাগড়াছড়ি বাজারে।
দোকানিদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে পর্যটকরা। জানতে চাইলেই খুব আনন্দের সঙ্গে পাহাড়ি বিভিন্ন জাতের সবজি ও ফলের বর্ণনা দেন তারা। তবে কেউ কেউ বেচা-বিক্রির বাইরে বাড়তি কথা বলতে নারাজ। তবুও তাদের মধ্যে পর্যটকদের জন্য আন্তরিকতার অভাব নেই।
নানান রকম কেমিক্যাল ও ফরমালিন মেশানো ফল খেয়ে যারা অভ্যস্ত, তারা সবুজ পাহাড়ে এসে একটু প্রাকৃতিক ফল-সবজি পেয়ে প্রাণভরে দেখেন এবং কেনেন।
রাস্তার দু’ধারে বিভিন্ন পসরা সাজিয়ে বসা প্রায় অর্ধ কিলোমিটার দীর্ঘ এ বাজারে শুরুতেই চোখে পড়বে পাবর্ত্য অঞ্চলের বিভিন্ন ফলমুল সবজি আর পাহাড়ের পেঁপের সতেজ হলদে ভাব, দেখে মনে হবে এখনও গাছেই ঝুলে আছে। পুষ্টিগুণে ভরপুর বড় আকারের (৩ কেজি) এক একটি পেঁপের দাম ১২০-১৫০ টাকা চাওয়া হচ্ছে। তবে দাম-দর করে নিলে ৬০-৮০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাবে।
খাগড়াছড়ির আমলকি-জলপাইয়ের কদর সুদূর ঢাকাতেও রয়েছে। যেহেতু এখন জলপাই-আমলকির মৌসুম, তাই বাজারে এর যোগানও বেশি। পর্যটকরা চাইলে অনায়াসে নিয়ে যেতে পারেন।
এছাড়া এখানকার সবজির মধ্যে নতুন চোখে পড়বে হলুদ ও আদা ফুল। মাটিরাঙা সাপমারা থেকে হলুদ ফুল ও আদা ফুল নিয়ে এসেছেন অনন্ত নামে এক জুমিয়া। ছোট ছোট আকারের একেকটি আঁটি বিক্রি করছেন ৫ টাকা দরে। বাজারে আসা ক্রেতাদের ওই হলুদ ও আদা ফুলের প্রতি উৎসুক দৃষ্টি। মনে হলো সবজি হিসেবে এ আইটেম তাদের কাছেও নতুন। হলুদ ফুলটা সবজি হিসেবে ভেঁজে অথবা রান্না করে খাওয়া যায় বলে জানালেন অনন্ত। আর আদা ফুল যে কোনো তরকারির সঙ্গে দিলে আলাদা একটা স্বাদ তৈরি হয়।
এছড়াও রয়েছে পাহাড়ে উৎপাদিত মাঝারি আকারের কমলা, ঢেঁকিশাক, মৈ-আলু (দেখতে কাঁটাযুক্ত), বিলাতি সিম, বাঁশ কোড়ল, ওল কচু, মাটি আলু, দেশি জাতের বেগুন, জুমের শসা ও আখসহ হরেক রকমের পণ্য।
রাজধানী বা বিভিন্ন বিভাগীয় শহরের বাজার দরের সঙ্গে তুলনা করলে এখানকার পণ্যের দাম তুলনামূলক কম। দামের চেয়ে যে জিনিসটিতে সবার আগ্রহ, সেটি হলো টাটকা এবং নির্ভেজাল। কোনো ধরনের কেমিক্যাল বা ফরমালিন নেই এসব সবজি বা ফলে। তাইতো স্বাদ এবং ঘ্রাণ দু’টোই আলাদা।
জুমিয়াদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এখানকার উৎপাদিত সবজি-ফল দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশেও যাচ্ছে। বিশেষ করে, পর্যটকদের মাধ্যমে এখানকার জুম চাষের সবজির কদর দেশ-বিদেশে ছড়াচ্ছে। এ জন্যই হয়তো পর্যটকদের একটু বেশিই গুরুত্ব দেন এখানকার মানুষজন।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available